ঢাকা   শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১   সন্ধ্যা ৭:২১ 

সর্বশেষ সংবাদ

পেঁয়াজ নিয়ে প্যাঁচাল

১.ভারত আজকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিলে কালকেই দেশে ৪০ টাকার পেঁয়াজ ৮০ টাকা কেজি হবে কেনো?

২.সরকারের বিটিটিসি জানিয়েছে, যে পেঁয়াজ মজুদ আছে তা নির্বিঘ্নে ৩ মাস ন্যুনতম মূল্যে বিক্রি করা যাবে।

৩.পেঁয়াজ নিয়ে প্রতিবছরই দেশে একটি চক্রান্ত হয়। এই চক্রান্তের লোকজন মাস দুয়েকে হাজার কোটি টাকা লুটে নেয়। এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে ভারতের ব্যবসায়ীরাও জড়িত। গতবছরও মনে হয় ইলিশ রপ্তানির দিন ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছিল। ইলিশ রপ্তানি এই ব্যবসায়ি সিন্ডিকেটের কোনো সংকেত কী না তলিয়ে দেখা দরকার।

৪.আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যেমন ব্যর্থ তেমনি ব্যর্থতার পরিচয় দেয় ভারতে নিযুক্ত হাইকমিশন উপ-হাইকমিশনের কর্মকর্তারা। দিল্লিতে হাইকমিশন ছাড়াও কলকাতা, মুম্বাই, আগরতলা, গৌহাটিতে চারটি উপ- হাইকমিশন রয়েছে। সেগুলোতে কাউন্সিলর (বাণিজ্য) পদ রয়েছে। কিন্তু তাদের কি কাজ দেশের মানুষ জানে না। তারা দেশকে আগাম কোনো সংবাদ জানাতে পারেন না। বাংলাদেশে ভারতের যেসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার রয়েছে সেটা সম্পর্কে আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও কোনো মনিটর করে না। হাইকমিশনও করে না। অথচ হাইকমিশনে বাণিজ্য দেখার জন্য কর্মকর্তাসহ জনবল রয়েছে। ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে এবং ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিতে পারে এটা হাইকমিশন দেশকে আগাম জানাতে পারে নি। তারা নিজেরাও সম্ভবত জানে না। তারা খায় দায় ঘুমায়, ডলারে বেতন নেয়। যদি আগাম জানাতে পারতো সে ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভারতের বিকল্প অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করতে পারতো। কিন্তু নিত্য পণ্যের বাজার সম্পর্কে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় হয় আগাম খবর রাখে না, না হয় সিন্ডিকেটকে সুবিধা দেওয়ার জন্য তারা ওঁৎ পেতে থাকে।

৫. গতবছরও একই প্রক্রিয়ায় ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিল। সেবার ৩ শ টাকা কেজি পেঁয়াজ খেয়েছি। সিন্ডিকেট টাকা লুটের পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভারতের বিকল্প চীন, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ এনেছিল। বিমানে পর্যন্ত পেঁয়াজ এসেছে। সরকার যদি ভারতের পাশাপাশি অন্য দেশ থেকেও পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রাখতো তা হলে ভারতের একচেটিয়া রপ্তানির মনোভাবের পরাজয় হতো। ভারত রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা তোলার পর সেখান থেকে পেঁয়াজ আনাটাই ভুল ছিল। বাংলাদেশে রপ্তানি না করলে ভারতের পেঁয়াজ পঁচবে এটাও সত্য। কিন্তু আমরা আমাদের দেশপ্রেম দেখাতে পারি না, সংকল্পে অটুট থাকতে পারি না।

৬. যেহেতু মজুদ আছে সে ক্ষেত্রে অন্তত তিনমাস পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রাখা সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু আমি নিশ্চিত সেটা হবে না। কালই ৪০ টাকার পেঁয়াজ ১০০ টাকা পরে ২০০ টাকা এরপর ৩০০ টাকা হবে। এভাবে চলবে ডিসেম্বর জানুয়ারি পর্যন্ত। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলবে তারা পাকিস্তান, চীন থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করছে। সেটা আসতে আসতে ডিসেম্বর পর্যন্ত যাবে। এর কিছুদিন পরই আমাদের কৃষকের উৎপাদিত পেঁয়াজ বাজারে চলে আসবে। ভারতও তখন রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে। তখন ভারত আর চীনের পেঁয়াজে সয়লাব হয়ে বাজারে দর নামবে ২০ টাকায়। আমাদের কৃষক লাভের মুখ আর দেখবে না। তাঁর উৎপাদন খরচও ওঠবে না। মাঝপথে সিন্ডিকেট কয়েকমাসে কয়েক হাজার কোটি টাকা লুটে নেবে। এ ভাবেই চলবে পেঁয়াজ নিয়ে প্যাঁচাল।
ফি বছর।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত