“ধর্ম যদি বিশ্বজনীন প্রকাশ হয়, তাহলে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে এতো কেন চুলোচুলি আর ঠোকাঠুকি? প্রত্যেকটি ধর্মই বা কেন নিজেকে সত্যের একমাত্র আধার বলে দাবি করবে এবং কেনই বা অন্য সব ধর্মকে নস্যাৎ করবে।”
——–মৌলানা আবুল কালাম আজাদ।
মহাত্মা আবুল কালাম আজাদের আত্মজীবনীটি ২০১১ সালে বই মেলা থেকে কেনা। কিন্তু পড়ি পড়ি করেও পড়া হয় নি। এবার এই করোনাভাইরাসে জীবন জীবিকায় মারাত্বক ক্ষতি করলেও যা লাভ হয়েছে তা হলো পড়াশোনা। গত ১০ বছরে যে পরিমাণ পড়েছি মনে হয় গত চার মাসে সে পরিমাণ পড়াশোনা হয়েছে। আমার ক্ষুদ্র সংগ্রহেও অনেক অপঠিত গ্রন্থ রয়ে গেছে, অনেকগুলো রেখেছিলাম ভবিষ্যতের জন্য সময় করে পড়ার। স্বাভাবিক সময়ে শুধু রোফারেন্সের বইগুলোই নিয়মিত নাড়াচাড়া বেশী হয়। করোনার কারণে সমৃদ্ধ বইগুলো পড়ার সুযোগ হচ্ছে। ইতিহাস আমাকে টানে। তাই প্রাচীন বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাস, ভারতের ইতিহাস সেই প্রাক সিন্ধুসভ্যতা থেকে ৪৭ এর দেশভাগ পর্যন্ত ধারাবাহিক বর্ণনা (ড.অতুল চন্দ্র রায় ও ড. প্রণব কুমার চট্টোপাধ্যায় যৌথভাবে লিখিত,হাজার পৃষ্টার বইটি) পড়ে আমি মুগ্ধ। ইতিহাসের এমন বর্ণনা পড়ে চোখের সামনে ভেসে আসে সেই দিনগুলো, মনে হয় আমিও যেনো ছিলাম সেই সময়ে। নিহার রঞ্জন রায়ের বাঙালীর ইতিহাস ( আদিপর্ব) , ড. দীনেশচন্দ্র সেনের বৃহৎ বঙ্গ( দুই খন্ড) আদ্যপান্ত পড়ে নিজের শরীরেই চিমটি কেটে দেখছি। আল বেরুনীর ভারততত্ত্ব পুনরায় পড়ে মনে হলো একটা মানুষ কতো পন্ডিত হলে এমনটি লিখতে পারেন। কাজী আবদুল ওদুদ রচনাবলী পড়ে মাথা নষ্ট হওয়ার যোগাড়। মানুষ একজীবনে এতো জানে কি ভাবে,লিখে কি ভাবে? তাদের ঘর সংসার ছিলনা? আয় রোজগার করতেন না? কি লিখেন নি মহাত্মা কাজী আবদুল ওদুদ?
জানার কোনো শেষ নেই, এটা কার যে উপলব্ধি ছিল! আমারতো মনে হয় সবই লিখা হয়ে গেছে। নতুন করে লিখার কিছু নেই। এখন শুধু পড়া ছাড়া আর লিখার কিছুই দরকার নেই। মানুষ শুধু পড়ুক।
বলেছিলাম মৌলানা আবুল কালাম আজাদের কথা। এই মহাত্মার আত্মজীবনী পড়ে আমার মনে হয়েছে মানুষ কতো কতো বড়। যিনি মক্কা থেকে ভারতে এসে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রনায়ক হয়ে ওঠেছিলেন। যার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিলো না অথচ উর্দু,ফারসি, ইংরেজী ভাষায় ছিলেন পন্ডিত। ছিলেন দার্শনিক। এমন মানুষের কথা নতুন প্রজন্মকে না জানালে সভ্যতাই থমকে যাবে। মৌলনা আবুল কালাম আজাদদের ইতিহাস জানানো হয় না বলেই, মওলানা সাঈদিদের আবির্ভাব হয়।
মানুষের অহমিকা দেখে বিস্মিত হই। কী নিয়ে যে মানুষ পড়ে আছে?
অনুভূতি শেয়ার করা যায় না। একাডেমিক পড়ার সময় নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর মুখস্ত করতে হতো পরীক্ষায় পাস করার জন্য। এর পর সব ভুলে যাওয়া। কিন্তু এখন পড়ে মনে হচ্ছে নতুন এক জগতে যাওয়া। ইতিহাস জানা মানে নিজেকে জানা।
আমার কন্যাটিকে মাঝে মাঝে বলি, যদি একটি টাইম মেশিন পেতাম তা হলে ঘুরে দেখে আসতাম সেই প্রাচীন যুগটায়। বৈদিক সভ্যতার উত্থানপতন, মৌর্য সাম্রাজ্য, গুপ্ত সাম্রাজ্য এর পর মধ্যযুগের সুলতানি আমল,মোগল আমলটা দেখে আসতাম। মাত্র কদিনের ইতিহাস। ৫ হাজার বছরও হয় নি। মহাকালের অনন্ত সময়ে এটাতো গণনার মধ্যেও পড়ে না।
একটা টাইম মেশিন কোথায় পাবো?