ঢাকা   শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১   রাত ৪:১৯ 

সর্বশেষ সংবাদ

চীন নিয়ে কিছু কথা

শংকর মৈত্র।। ১৯৪৯ সালের আগ পর্যন্ত চীন ছিল একটা দুর্নীতিগ্রস্ত, দরিদ্র রাষ্ট্র। গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত একটি দেশ। ১লা অক্টোবরের বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে মাও সে তুং এর নেতৃত্বে চীনে কমিউনিস্ট শাসন কায়েম হয়। এর পর থেকে চীন শুধু এগিয়েই যাচ্ছে।
৭০ বছরে চীন এখন সারা পৃথিবীর জন্য চ্যালেঞ্জ। অর্থনীতি সামরিক সব শক্তিতেই বলিয়ান। চীন এখন একক পরাশক্তি।
এটা সম্ভব হয়েছে চীনের দেশপ্রেমিক শাসকদের কঠোর একনায়কতন্ত্রের কারণে। কমিউনিস্ট শাসক মাও সে তুং কার্ল মার্ক্স, লেনিনের সমাজতন্ত্র কায়েম করেছেন ঠিকই, কিন্তু সেটা চীনা সংস্করনে। চীনের কনফুসীয় ঐতিহ্যকে তিনি বাদ দেননি। কারো অন্ধ অনুকরণ করেন নি। সোভিয়েতের তো নয়ই ( আমাদের এখানে কমিউনিস্টরা ফেল হয়েছে মূলত মস্কোতে বৃষ্টি হলে ঢাকায় ছাতা ধরার কারণে)।
মাও সে তুং বুঝেছিলেন, চীনে আগে দরকার কৃষি বিপ্লব, এর পর শিল্প। যার ফলে তিনি শহরের চেয়ে গ্রামের উন্নয়নে জোর দেন। গ্রামকে, গ্রামের মানুষকে, কৃষককে আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলেন। কৃষকের প্রতি ইঞ্চি জায়গা কাজে লাগানো হয়, ফসল ফলানো হয়। কৃষকের অন্ন বস্ত্র বাসস্থানের নিশ্চয়তা দেয়া হয়। ফলে মাত্র কয়েক বছরেই চীনে কৃষি বিপ্লব হয়, খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ হয়। চীনে গড়ে ওঠে বিপ্লবী জাতীয়তাবাদ। মাও সে তুং বুঝেছিলেন, প্রলেতারিয়েতের মধ্যে স্বঃতস্ফূর্তভাবে কোনো রাজনৈতিক চেতনা বিকাশ লাভ করে না। তাই তিনি এ শ্রেণিকে রাজনীতিতে আনেন নি। আগে উন্নয়ন। কৃষি বিপ্লবের পর হাত দেয়া হয় শিল্প বিপ্লবে এবং সেটাতেও সফল চীন। ছোট বড় সব শিল্পই এখন চীনের। সূই থেকে কামান সব বানাতে পারে চীন। ১৯৭৬ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মাও সে তুং ছিলেন চীনের অবিসংবাদিত নেতা। তিনি চীনের শুধু ভিত ই গড়ে যান নি, চীনকে পরাশক্তিতে পরিণত করে গেছেন।
চীন নিয়ে আমার এতোকিছু বলার কারণ করোনাভাইরাসের কারণে চীন যেমন এ বছর আলোচনায় এসেছে তেমনি সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে লাদাখ সীমান্ত নিয়ে বিরোধের পর পৃথিবীর অক্ষশক্তিগুলো চীনের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবীকেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে চীন।
কারণ কি? কোন শক্তিতে চীন বলিয়ান? তত্ব-তালাশ করে দেখলাম চীন আসলে কারো ধার ধারে না। সে নিজের শক্তির উপর নির্ভর। চীনে চীনা স্টাইলে সমাজতন্ত্র বিরাজমান। সেখানে গণতন্ত্র নেই, নির্বাচন নেই, বিরোধী দলীয় রাজনীতি নেই, বাক স্বাধীনতা নেই, ধর্মপালনের স্বাধীনতা নেই, বিয়ে করার স্বাধীনতা নেই, সন্তান জন্ম দেয়ার স্বাধীনতা নেই, প্রেম ভালোবাসার স্বাধীনতা পর্যন্ত নেই। অর্থাৎ শুধু নেই নেই আর নেই। আসলে রাষ্ট্রপরিচালনায় চীনের মানুষের কোনো কিছু করার ক্ষমতা নেই। কোনো অধিকার নেই। যা করার সবকিছু করবে কমিউনিস্ট শাসকরা। সরকারের কোনো নীতির বিরোধিতা করলে সোজা ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যু।
কিন্তু এই একনায়কতন্ত্রের মধ্যেই চীন শুধু আগাচ্ছেই। জনগণও তা মেনে নিয়েছে। অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য বিস্তারের পাশাপাশি এখন ভৌগলিক সাম্রাজ্য বিস্তারে মনোনিবেশ করছে।
এই আগানোর জন্য দেশটির জনগণই উৎপাদনের মূল ভূমিকা রাখছে। জনগণকে শেখানো হয়েছে দেশটি তাদের সবার। কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের নয়, বর্ণের নয়। তারা জানে অন্যায় করলে কঠোর শাস্তি পেতে হবে। ধর্ম নিয়ে তারা ভাবেই না। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে কঠোর শাস্তি। আরেকজনকে ল্যাং মেরে টেনে নামানোর চেষ্টা করে না। নিজেদের ভাষায় পড়াশোনা করে নিজেরাই প্রযুক্তি দিয়ে আগাচ্ছে।
আমাদের মতো এতো ধর্মানুভূতি তাদের নেই, ইংরেজী না জানলে শিক্ষিত না, এমন মানসিকতা তাদের নেই।
আমরা এখন চীনের দিকে ঝুঁকছি। ভালো কথা। কিন্তু চীনের মানুষের মানসিকতা কি আমরা পোষণ করি? সুযোগ পেলেই আমরা চুরি করি, ধর্মানুভূতির নামের আরেকজনের ওপর নির্যাতন করি, ধর্মের জন্য পাগল হয়ে যাই, কাজে ফাঁকি দিই।
এগুলো নিয়ন্ত্রণ করে চীনকে অনুসরণ করতে পারলেই চীনের মতো আগাতে পারবো। না হয়, চীনের সাহায্য প্রার্থী হয়েই আমাদের থাকতে হবে। পঞ্চাশ বছর ধরে শুধু বলয়ই পরিবর্তন হচ্ছে। কখনো আমেরিকা,কখনো রাশিয়া,কখনো ভারত কখনো পাকিস্তান। লাভটা কী ? নিজেদের বৈশিষ্ট কোথায়? কিছু পাবলিক অযথাই নাচে।
আগে পশ্চিমাদের সাহায্য বেশী আসতো এখন আসবে চীনের। তবে পশ্চিমা- আর চীনের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। চীন সমাজতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদি শক্তি। সে ঋণের জ্বালে আমাদের আবদ্ধ করে ফেলছে। এই ঋণ যদি সঠিক কাজে লাগানো না যায় তা হলে সুদে-আসলে আদায় করে নেবে চীন। ##

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত