ঢাকা   মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১   দুপুর ১:১৭ 

সর্বশেষ সংবাদ

হে মানব সাবধান! সময় ফুরিয়ে এসেছে!

শুধু মানুষ কেনো সমস্ত প্রাণিকূলই তো প্রকৃতির সৃষ্টি। অথচ মানুষ এককভাবে গ্রাস করছে প্রকৃতিকে। পাহাড় বন উজাড় হচ্ছে, নদী ভরাট করে গড়ে তোলা হচ্ছে অট্টালিকা। বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে কতো প্রাণি। প্রকৃতিকে তার মতো করে থাকতে দিচ্ছি না। সে এখন প্রতিশোধ নেয়া শুরু করেছে কি না কে জানে? কোরোনাভাইরাস তারই কোনো উপজাত কিনা তাও ভাববার বিষয়। এ নিয়ে লিখেছেন, রূপরতন পাইন।

কোরোনাকে আমরা যে যার মতো ব্যাখ্যা করছি। কেউ ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে, কেউবা দিচ্ছি বৈজ্ঞানিক ব্যাখা। কেউ আন্তর্জাতিক রাজনীতির আলোকে, আবার অন্যদিকে কেউ নৃ-তাত্বিক-গোষ্ঠীগত আচরণের বিষয়টি আলোচনায় আনছেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে পৃথিবীর ইকোসিস্টেমস, খাদ্যশৃংখল, প্রাণী উদ্ভিদের জীবন চক্রসহ বিভিন্ন বিষয়ের যে ইতিমধ্যেই অলক্ষ্যে অনেক পরিবর্তন ঘটে গেছে তা পরিবেশ বিজ্ঞানীরা অনেকদিন থেকে বলে আসলেও বিশ্বমোড়লরা সে কথা বিশ্বাস করতেই চাচ্ছেন না। তারা উন্নয়ন ছাড়া কিছুই বুঝতে চান না।

কয়েকশ বছর আগে চার্লস ডারউইন যে বিবর্তনবাদের কথা বলে গেছেন অধিকাংশ বিজ্ঞানী এ বিষয়ে একমত হলেও ধর্মীয় কারণে বিবর্তনবাদ বিশ্বাসতো দূরের কথা ডারউইনকে বানরের সাথে তুলনা করার লোকেরও অভাব নেই। পৃথিবীর কিছু দেশেতো ওসব বই পুস্তক থেকেও বাদ দেয়া হয়েছে। এতো কিছুর পরেও বিবর্তনতো থেমে নেই। যতদূর জানি কোরোনা একধরনের ভাইরাস গোষ্ঠীর সদস্য। যারা আগে থেকেই পৃথিবীতে ছিলো। ভাইরাস জীব ও জড়ের মাঝামাঝি এক কোষী একটা প্রাণী যারা পোষক দেহেই জীবনের লক্ষণ প্রকাশ করে এবং দ্রুত প্রতিলিপি (বংশ বৃদ্ধি) তৈরি করে। তো এ নতুন জাতের কোরোনা বিবর্তনেরই ফসল বলে বিশেষজ্ঞরা একমত ।

কোরোনা নিয়ে আমার এ লেখার উদ্দেশ্য নয়। তাছাড়া আমার এ বিষয়ে জ্ঞানও নেই। আমি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর যে প্রভাব পরেছে তার দুটি ঘটনা আমার বন্ধুদের জানানোর জন্য এতো কিছুর অবতারণা করলাম। আমাদের কৃত কর্মই যে আমাদের শেষ করবে এর দুটি ঘটনা বলবো। একটি হচ্ছে গবেষণালব্ধ। নেট থেকে জানলাম। আর অন্যটা আজ চোখে দেখলাম।

হাইবারনেশন বা শীতনিদ্রা কিছু কিছু প্রাণীর ক্ষেত্রে জীবনে বেঁচে থাকার বাস্তবতা। জীবনধারনের প্রতিকূল পরিবেশ-যেমন শীত বা তুষারপাত, খাদ্যের অভাবসহ বিভিন্ন কারণে অনেক প্রাণী শীতের সময়ে হাইবারনেশনে যায়। এসময়ে তারা পাহাড়ের গুহায় বা মাটির নীচে আশ্রয় নেয়। শ্বাসপ্রশ্বাস ছাড়া জীবনের স্বাভাবিক কার্যক্রম মোটামুটি অফ রাখে।

ভল্লুক বা বিয়ার এরকম একটি প্রাণী যারা শীতকালে হাইবারনেশনে চলে যায়। সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় দেখা গেছে কোনো কোনো দেশের ভল্লুককূল মানুষের সংস্পর্শে এসে মানুষের দেয়া খাবারে অভ্যস্ত হয়ে পরেছে। ফলে এদের হাইবারনেশনের সময়কাল কমে যাচ্ছে। এর প্রতিক্রিয়ায় তাদের বংশ বৃদ্ধি আশংকাজনক হারে কমে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা এর ফলে তাদের বিলুপ্ত হওয়াও অস্বাভাবিক নয়। এর প্রভাব পরবে খাদ্যশৃংখলসহ পুরো ইকোসিস্টেমে। চূড়ান্ত বিচারে মানব জীবনেও এর প্রভাব এড়ানো যাবে না বলে আশংকা।

অন্য ঘটনাটি আজকের দেখা। সাধারণত আমাদের দেশে নভেম্বর-ডিসেম্বরে সারমেয়রা বংশবৃদ্ধি করে থাকে। আজকে সন্ধ্যায় দেখলাম রাস্তার ধারে এক মা সারমেয় সদ্যোজাত সন্তানদের দুগ্ধপান করানোতে ব্যস্ত। আমি অবাক হয়ে চিন্তা করলাম সাত আটমাস আগেই কিভাবে সে বাচ্চা পেলো। তার মানে প্রকৃতিতে এতো পরিবর্তন ঘটে গেছে যা আমরা টের পাচ্ছি না।

এতো বড়ো লেখার উদ্দেশ্য হলো আমরা মানবকূল যারা আমাদের প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে লোভে পড়ে প্রকৃতিকে তার মতো করে থাকতে দিচ্ছি না। আমাদের মতো করে তাকে থাকতে বাধ্য করছি। সে কিন্তু নানানভাবে আমাদের জানান দিচ্ছে সে ভালো নেই। সে এখন প্রতিশোধ নেয়া শুরু করেছে কি না কে জানে। কোরোনা তারই কোনো উপজাত কিনা তাও ভাববার বিষয়।

এ লেখার সময় আম্ফানের তান্ডব এবং এর ক্ষয়ক্ষতিতে আমরা অস্থির হয়ে পরেছি। বিজ্ঞানীরা হিসেব করে বলে দিচ্ছেন জলোচ্ছ্বাস ঘূর্ণিঝড় আশংকাজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে। মনে রাখার জন্য সুন্দর সুন্দর নামও দিচ্ছি আমরা। কোনো কাজ হবে না। যতোদূর মনে পড়ে এ যুগের সবচেয়ে বড়ো তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং বলে গেছেন মানবের কারণেই মানবজাতির ধ্বংস আসবে। তাই হে মানব সাবধান! সময় ফুরিয়ে এসেছে!
লেখকঃ ব্যাংক কর্মকর্তা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত