দেশে বর্তমানে কোনো রাজনীতি নেই বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ। রাজনীতির নামে আওয়ামী লীগের সাধারণ ওবায়দুল কাদের ও বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পালা গান শুনতে হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সোমবার (২৮ জুন) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে ফিরোজ রশিদ এ মন্তব্য করেন।
কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘আজকে দেশে কোনো রাজনীতি নেই। রাজনীতির নামে এখন পালাগানের অনুষ্ঠান হয়। সন্ধ্যার সময় ওবায়দুল কাদের সাহেব এক পালাগান। বিএনপি ওই গান শুনে। এর একটু পরেই টেলিভিশনে ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব আরেক পালা গান। আমরা রাজনীতিবিদরা ঘরে বসে টেলিভিশনে পালা গানের রাজনীতি দেখছি। এ পালা গান চলছে দেড় বছর। রাজনীতি শূন্য, কোথাও রাজনীতি নেই। ডান, বাম, মধ্যপন্থী সব এক হয়ে জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতা থেকে নামিয়েছিল। এ সময় তিনি জাসদের হাসানুল হক ইনুকে দেখিয়ে বলেন, ওনারা মধ্যস্থতা করে বুদ্ধি দিয়েছিলেন ৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে, ৫ বছর বিএনপি ক্ষমতায় থাকবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ পরে দেখলো এভাবে করতে গেলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা যাবে না। আওয়ামী লীগের বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে। ’
তিনি বলেন, ‘তোফায়েল আহমেদ সাহেব ঠিকই বলেছেন। প্রত্যেকটা জেলার রাজনীতি দেওয়া হয়েছে সচিবদের। প্রধানমন্ত্রী ডিসি সাহেবদের সঙ্গে কথা বলেন, আর এমপিরা পাশে বসে থাকেন দূরে। তারা বলেন, ‘ডিসি সাহেব আমি একটু কথা বলবো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে’। এ হচ্ছে রাজনীতিবিদদের অবস্থা। প্রধানমন্ত্রী যখন ডিসিদের সঙ্গে কথা বলেন, তখন এমপিদের কোনো দাম থাকে না। রাজনীতি না থাকায় রাজনীতির মঞ্চগুলো আস্তে আস্তে ব্যবসায়ীরা দখল করেছেন। ব্যবসায়ীদের হাতে তো ব্যবসার চালিকা শক্তি ছিলই। অর্থনীতির চালিকা শক্তি তাদের কাছে। এখন রাজনীতিও তাদের হাতে। এখন দেশ চালাচ্ছে জগৎ শেঠরা, দেশ চালাচ্ছে আমলারা। আমরা রাজনীতিবিদরা এখন তৃতীয় লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এ হচ্ছে আমাদের দুর্ভাগ্য। অথচ রাজনীতিবিদরা দেশটা স্বাধীন করেছে। রাজনীতিবিদ ছাড়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট থাকে না। ’
কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘এ বাজেটটা আগাগোড়া ধনীদের স্বার্থে ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থে প্রণয়ন করা হয়েছে। ১৯৭২ সালে এ সংসদে রাজনীতিবিদদের সংখ্যা ছিল ৯৫ পারসেন্ট, আর ৫ পারসেন্ট ছিল ব্যবসায়ী। আর আজকে ২০২১ সালে ৭৫ পারসেন্ট ব্যবসায়ী আর ২৫ পারসেন্ট রাজনীতিবিদ। এ হচ্ছে অবস্থা বাজেটের। অর্থমন্ত্রী একজন ধর্ণাঢ্য ব্যবসায়ী। স্বভাবত কারণেই তাদের স্বার্থেই এবং তাদের জন্যই বাজেট প্রণয়ন করা হবে। এখানে বৈষম্যের কোনো রূপরেখা থাকবে না। এ বাজেট দেওয়ার ফলেই ধনী আরো ধনী হবে, গরিব আরো গরিব হবে। ’