জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর উদযাপনের মুহূর্তে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফর ঘিরে হেফাজতে ইসলামের চালানো তাণ্ডবের চিত্র জাতীয় সংসদে তুলে ধরে তাদের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার দুপুরে সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনের সমাপনী বক্তৃতায় ‘হেফাজতের একটি অংশের তাণ্ডবের পেছনে বিএনপি-জামায়াত জড়িত’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে, সেই সময় যে ঘটনাগুলো এখানে ঘটানো হলো… এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় যে যেখানে স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী আমরা উদযাপন করছি সেই সময়..হ্যাঁ আমাদের অনেক বিদেশি অতিথি আসছেন; অনেকে বার্তা দিচ্ছেন। সেই ব্রিটেনের রানি থেকে শুরু করে, সৌদি আরবের বাদশা থেকে শুরু করে সকলের বার্তা আমরা পাচ্ছি- এত বড় একটা সম্মান বাংলাদেশ পাচ্ছে। সেখানে কারা খুশি হতে পারলেন না?”
কওমি মাদ্রাসা ধারা প্রভাবাধীন হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের বিরোধিতার বিষয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “আজকে হেফাজতে ইসলাম কর্মসূচি দেয়… তারা কি দেওবন্দে যায় না শিক্ষাগ্রহণ করতে? তাই এই সমস্ত ঘটনা যদি ঘটায়, তাহলে উচ্চশিক্ষায় দেওবন্দ যাবে কীভাবে? সেটা কি তারা একবারও চিন্তা করেছে।”
শিক্ষা সনদ, পাঠক্রম নির্ধারণ ও দেশে-বিদেশে চাকরি ব্যবস্থাসহ কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে শেখ হাসিনা বলেন, “তারপরও তারা এই তাণ্ডবটা কেন ঘটাল? তাদেরকে.. প্রথমেই আমরা দেখলাম কি বিএনপি তাদেরকে সমর্থন দিচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত জোট কীভাবে সমর্থন দিচ্ছে, সেটাই আমার প্রশ্ন।
“হেফাজত তো একা না, হেফাজতের সঙ্গে জামাত বিএনপিও জড়িত এবং তাদের প্রত্যেকটা কর্মকাণ্ডেই তো দেখা যায়। হেফাজতের সকলেই যে এর মধ্যে জড়িত তাও কিন্তু নয়- এটা হলো বাস্তবতা।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৬-৩১ মার্চ পর্যন্ত হেফাজতে ইসলামের সহিংসতা এবং ২৭-২৮ মার্চ হেফাজতের পক্ষে বিএনপি-জামায়াতের বিবৃতি ‘দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিক অংশ’।
সেসময় দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ অফিস, দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়িঘর, সরকারি অফিস-আদালত এবং গণপরিবহনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের চিত্রও সংসদে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “এখন আমার প্রশ্ন? ইসলাম তো শান্তির ধর্ম। ইসলাম ধর্মের নামে এই যে জ্বালাও-পোড়াও এটা কীভাবে আসলো। তবে এটা নতুন কিছু না, ২০১৩ সালে আমরা দেখেছি এই বিএনপি-জামায়াত কীভাবে চলন্ত গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষকে পুড়িয়েছে, কীভাবে মানুষের উপর আক্রমণ করেছে, সেগুলো আমরা দেখেছি।”
হেফাজতে ইসলাম আগুন নিয়ে খেলছে মন্তব্য করে তাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এক ঘরে আগুন লাগলে তো সেই আগুন তো অন্য ঘরেও চলে যেতে পারে। সেটা কি তাদের হিসাবে নেই?
“আজকে রেলস্টেশন থেকে শুরু করে ভূমি অফিস থেকে শুরু করে ডিসি অফিস থেকে শুরু করে সব জায়গায় যে আগুন দিয়ে বেড়াচ্ছে তাদের মাদ্রাসা, তাদের বাড়িঘর- সেগুলোতেও যদি আগুন লাগে তখন তারা কি করবে? জনগণ কি বসে বসে এগুলো শুধু সহ্য করবে? তারা তো সহ্য করবে না।”
শনিবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে এক রিসোর্টের কক্ষে নারীসহ হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে ঘেরাও করে জনতা। পুলিশ তাদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের সময় ‘হামলা চালিয়ে তাকে ছিনিয়ে নেয়’ তার অনুসারীরা।
সংসদে ওই হেফাজত নেতার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “এরা একদিকে ইসলামের নাম, ধর্মের নাম, পবিত্রতার নাম ..এতোকিছু বলে যত অপবিত্র কাজ করে আজকে ধরা পড়ে সোনারগাঁওয়ে একটা রিসোর্টে।
“পার্লারে কাজ করা এক মহিলা। তাকে আবার এখন এদিকে তার বউ হিসেবে পরিচয় দেয়, আবার নিজের বউয়ের কাছে বলে যে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমি এটা বলে ফেলেছি।”
তিনি বলেন, “যারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করেন এই রকম মিথ্য কথা, অসত্য কথা তারা বলতে পারেন কিনা। তারা তো বলতে পারে না। তাহলে এরা কি ধর্মপালন করে? মানুষকে কি ধর্ম শেখাবে?
“তাই হেফাজতের যারা সদস্য, তাদেরকেও আমি অনুরোধ করি, তারাও একটু বুঝুক কোন নেতৃত্বে তারা। আগুন জ্বালাও পোড়াও করে তিনি বিনোদন করতে গেলেন একটা রিসোর্টে একজন সুন্দরী মহিলা নিয়ে- এটাই তো বাস্তবতা।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরা ইসলাম ধর্মের নামে কলংক। ইসলামকে তারা ছোট করে দিচ্ছে। কিছু লোকের জন্য আজকে এই ধর্মটা জঙ্গির নাম, সন্ত্রাসের নাম। এখন তো যেই চরিত্র দেখালো তাতে দুশ্চরিত্রের নামও জুড়ে দিচ্ছে।
“এরা ধর্মের নামে ব্যবসা শুরু করেছে এবং এত অর্থ কোথা থেকে আসে এই বিনোদনের, সেটাও একটা প্রশ্ন। এটা দেশবাসী বিচার করবে। আর আইন তার আপন গতিতে চলবে। সেটুকু আমি বলতে চাই।”
বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “এধরনের অপকর্মের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে- এইটুকু আমি শুধু বলতে পারি। এর বেশি বলতে চাই না।
“আর আমি বলব, যারা মুখে ধর্মের কথা বলে, ইসলামের নাম বলে চলবেন, আর অধর্মীয় কাজ করবেন- এটা কখনো গ্রহণযোগ্য না।”