বিএনপি-জামাত-হেফাজত ইসলামকে ‘ইসলাম ধর্ম বিরোধী’ আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেছেন, প্রয়োজনে ট্রাইব্যুনাল করে এদের বিচার করতে হবে।
শনিবার সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উদযাপনের সময় হেফাজতে ইসলামের ‘তাণ্ডব’ নিয়ে কথা বলেন শেখ সেলিম।
তিনি বলেন, “নামে হেফাজতে ইসলাম। এরা ইসলাম বিরোধী, জঙ্গি, স্বাধীনতাবিরোধী। এরা রাষ্ট্রের শত্রু, দেশের শত্রু। এদের কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। এদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে। দরকার হলে ট্রাইব্যুনাল করে অবিলম্বে তাদের বিচার করতে হবে।”
২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলে তাণ্ডবের পর হেফাজতের ‘জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছিল, তার দ্রুত তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি তোলেন শেখ সেলিম।
তিনি হেফাজত ও বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আরও কঠোর হওয়ার অনুরোধ করেন।
তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী আর সুবর্ণজয়ন্তীর জন্য অনেক কিছু আমরা সহ্য করে গেছি। আর কোনো কিছু সহ্য করা হবে না। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে আরও কঠোর হতে হবে। আপনার পেছনে ১৪ কোটি মানুষ আছে। এই অপশক্তিকে ছাড় দেওয়া যাবে না।”
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে আসছিল হেফাজতে ইসলাম ও কয়েকটি রাজনৈতিক দল। সেই ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতা দিবস থেকে তিন দিন ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলাম। সংঘাতে তিন দিনে অন্তত ১১ জন নিহত হন।
এই ‘ধর্মীয় উন্মাদনা ও উচ্ছৃঙ্খলতা’ বন্ধ না করলে সরকার কঠোর অবস্থানে যাবে বলে হুঁশিয়ার করা হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।
অন্যদিকে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় আমির জুনাইদ বাবুনগরী হুমকি দিয়েছেন, দাবি পূরণ না হলে ভবিষ্যতে তারা ‘কঠিন কর্মসূচি’ দেবেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ সেলিম বলেন, “হেফাজতের নামে যারা জঙ্গি-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়, বিএনপি-জামাত যাদের সহযোগী হিসেবে.. যারা ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করে। ইসলামকে হেফাজত কোনো সন্ত্রাসী জঙ্গিরা করতে পারে না। ইসলাম হেফাজত করবে আল্লাহ। হেফাজতের জঙ্গিরা যেসব মাদ্রাসা থেকে রাস্তায় বের হয়ে মানুষকে হত্যা করে, মানুষের বাড়িঘর ও স্থাপনায় আক্রমণ করে ও পুড়িয়ে দেয়। সেইসব মাদ্রাসা বন্ধ করে দিতে হবে। ইসলাম কখনও সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিতে পারে না।”
সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনার ছবি সংসদে দেখিয়ে তিনি বলেন, “এই জঙ্গিরা তলোয়ার নিয়ে ঘোড়ার ওপর উঠে পেছনে শত শত জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্র দিয়ে সাধারণ মানুষকে হত্যা এবং স্থাপনা ধ্বংস করার জন্য তাণ্ডব চালিয়েছে। ছবি দেখে মনে হচ্ছে প্রাচীনকালের মতো কোনো যুদ্ধে যাচ্ছে, বিজয় করার জন্য।
“তাদের মনে রাখতে হবে। বাংলাদেশ তালেবান রাষ্ট্র নয়। এটা পাকিস্তান নয়। সন্ত্রাসী-জঙ্গিদের বাংলার মাটিতে কোনো স্থান নেই। সরকারকে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। স্বাধীন দেশে এভাবে চলতে পারে না।”
বিএনপি ২৪ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত স্বাধীনতা দিবসের সব কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছে অভিযোগ করে সেলিম বলেন, “কারা এ ধরনের কর্মসূচি বন্ধ করে? যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে তারা স্বাধীনতার কর্মসূচি ২৬ মার্চ বন্ধ করতে পারে? পারে না। বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত এরা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। বিএনপি ২৬ মার্চ স্মৃতি সৌধে যায়নি। কারণ তারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না।”
বিএনপির সংসদ সদস্যদের ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “বিএনপির নেতারা এখানে আছে। তাদের বাপ-দাদার হিসাব নেওয়া হোক। একাত্তরে তারা কোন দলে ছিল, শান্তিবাহিনীতে কারা ছিল। এর অনেক হিসাব আছে। এখানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আছেন তাকে বলব এগুলো বের করে জনসম্মুকে প্রকাশ করুন।”
পরে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, “যে বিষয়টি সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে এই প্রসঙ্গে জানতে চাই আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা কি থাকবে? পঞ্চাশ বছর পূর্তি-আমাদের সুবর্ণজয়ন্তী। এই সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা লাশ উপহার দিলাম। আমরা কি শান্তিপূর্ণভাবে সারা বাংলাদেশের কোথাও সুবর্ণজয়ন্তী পালন করতে পেরেছি? ”
এসময় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা হারুনের বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন।
শেখ সেলিমের বক্তব্যের জবাবে হারুন বলেন, “বিএনপি থেকে মোদীবিরোধী কোনো স্লোগান বা মোদীর আগমন করা যাবে না- এ ধরনের কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি। যেহেতু ১৭ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত ঢাকায় সমস্ত কর্মসূচি বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ করেছেন, সেই কারণে আমরা জাতীয় স্মৃতি সৌধে সীমিত আকারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি। জিয়াউর রহমানের মাজারেও খুবই সীমিত আকারে শ্রদ্ধা জানিয়েছি, কারণ করোনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার কারণে আমাদের জায়গা থেকে কর্মসূচিগুলো সীমিত করে দেওয়া হয়েছে।”
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা, প্রতিবাদ-বিক্ষোভ যারা করলে তাদের সাথে আলোচনা করতে পারতেন। যখন ভাস্কর্য-মূর্তি নিয়ে দেশে একটি সংঘাত তৈরি হল তখন হেফাজতের সাথে তো সরকার আলোচনা করেছে। এর আগেও তো সরকার হেফাজতের সাথে আলোচনা করেছেন। আলোচনা করতেন যে, বিদেশি মেহমানরা আসছে তোমরা আন্দোলন বিক্ষোভ বন্ধ রাখো, সেই ক্ষেত্রে বিএনপিকে কেন জড়ানো হচ্ছে?” বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।