কুয়েতে সাজাপ্রাপ্ত সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম পাপুলের সদস্যপদ শূন্য ঘোষণা করে গেজেট জারি করেছে সংসদ সচিবালয়।
সোমবার জারি করা গেজেটে বলা হয়েছে,” কুয়েতে ফৌজদারি আদালতে ঘোষিত রায়ে নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে চার বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ায় লক্ষীপুর -২ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬(২) (ঘ) অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য নন।
সংসদ সচিবালয়ের এই গেজেট সোমবারই নির্বাচন কমিশনে পৌঁছে যায়। নির্বাচন কমিশন এখন পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। সাংবিধানিকভাবে পাপলুর আসন শূন্য ঘোষণার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সেখানে নির্বাচনের ব্যবস্থা নেবে ইসি।
উল্লেখ্য মানবপাচার ও অর্থপাচারের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় কুয়েতের আদালত গত ২৮ জানুয়ারি বাংলাদেশের সংসদ সদস্য পাপুলকে ৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫৩ কোটি ১৯ লাখ ৬২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। রায়ে কুয়েতের স্বারাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তা মেজর জেনারেল মাজেন আল জারাহকেও পাপুলের মতো কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। তবে কুয়েতের দুই পার্লামেন্ট সদস্য সাদুন হাম্মাদ আল-ওতাইবি এবং সালাহ আবদুলরেদা খুরশিদকে এ মামলার অভিযোগ থেকে খালাস দেন বিচারক।
বাংলাদেশের সংসদ সদস্য পাপুলকে গত ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অন্যতম মালিক পাপুলের সেখানে বসবাসের অনুমতি ছিলো। পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ মামল করেন পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশী।
কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশন পরে তদন্ত করে পাপুলসহ নয়জনের বিরুদ্ধে অর্থপাচার, মানবপাচার, ঘুষ লেনদেন ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ভঙ্গের অভিযোগ আনে।
অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর পাপুলের মামলায় আনুষ্ঠানিক বিচার কাজ শুরু হয়। এরপর ২৮ সেপ্টেম্বর মামলার রায় ঘোষণার জন্য তারিখ ঠিক করে দেন বিচারক।
আসামিদের মধ্যে মেজর জেনারেল মাজেন আল-জারাহ নাগরিকত্ব, পাসপোর্ট ও বসবাসের অনুমতি বিষয়ক দপ্তরের অ্যাসিসট্যান্ট আন্ডার সেক্রেটারি থাকা অবস্থায় ঘুষের বিনিময়ে পাপুলের বেশ কিছু কাজে সায় দেন বলে অভিযোগ ছিল।
আর কুয়েতের পার্লামেন্টের সদস্য সাদুন হাম্মাদ ও সালাহ খুরশিদের বিরুদ্ধেও বাংলাদেশি এমপির কাছ থেকে ‘ঘুষ নিয়ে’ অবৈধ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল।
সাধারণ শ্রমিক হিসাবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়া পাপুল ২০১৮ সালে লক্ষ্মীপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।নির্বাচনে ওই আসনটি আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু জাতীয় পার্টির প্রার্থী শেষ মুহূর্তে ভোট থেকে সরে দাঁড়ালে ‘বিএনপি ঠেকানোর’ কথা বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ পাপুলের পক্ষে কাজ করে বলে দলটির নেতাদের ভাষ্য।
পাপুল নিজে এমপি হওয়ার পর স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের কোটায় পাওয়া সংরক্ষিত একটি আসনে তার স্ত্রী সেলিনা ইসলামকে এমপি করে আনেন।
প্রবাসী উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠিত এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন পাপুল, যেখানে তার বড় অঙ্কের শেয়ার রয়েছে।
পাপুলের মালিকানাধীন মারাফি কুয়েতিয়া গ্রুপে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি কাজ করেন বলে জানা গেছে। পাপুলের কেলঙ্কারী ফাঁস হওয়ার পর বাংলাদেশে দুদকও পাপুল, তার স্ত্রী, শ্যালিকা ও মেয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম ও মেয়ে ওয়াফা ইসলাম সেই মামলায় জামিনে আছেন।
কুয়েতের আদালতের দেওয়া রায়ের কপি গত ১৮ ফেব্রুয়ারী সংসদ সচিবালয়ে পৌঁছে। “রায়ের কপি পর্যালোচনা করে সংবিধান ও কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী তার সদস্যপদ শূন্য ঘোষণা করা হয়।
প্রসঙ্গত বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো সংসদ সদস্য নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হল সংসদ সদস্য থাকার যোগ্যতা হারান। মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি আর সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হন না। ওই অনুচ্ছেদেই বলা আছে, কোন বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিলে কিংবা কোন বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করলে আর এমপি হিসেবে থাকতে পারবেন না।বাংলাদেশের কোনো আইনপ্রণেতার এভাবে বিদেশে দণ্ডিত হওয়ার এটাই প্রথম ঘটনা।