ঢাকা   বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১   রাত ৩:৪৪ 

সর্বশেষ সংবাদ

মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক মানবতার চালিকা শক্তি

মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুজনই ধর্ম-বর্ণ-জাতি-ভাষা-অঞ্চল নির্বিশেষে সকল মানুষের কল্যাণের জন্য বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িক মানবতার শত্রু, যারা ধর্মের নামে রাজনীতি করে এবং যাবতীয় অপরাধকে বৈধতা দেয় তারাই দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই মহান নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। হত্যাকারীরা ভেবেছিল ব্যক্তি গান্ধী বা মুজিবকে হত্যা করলে তাদের মানবপ্রেমের দর্শনের আলো নিভে যাবে, সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ ও ধর্মান্ধতা জয়ী হবে। কিন্ত বাস্তবতা হচ্ছে সময়ের পরিক্রমায় এই দুই মহান নেতা মানব সভ্যতার চালিকা শক্তিতে পরিণত হয়েছেন।

ওয়েবনিয়ারে বক্তারা

শনিবার ‘মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধুর মানবতা ও বিশ্বশান্তির দর্শন’-শীর্ষক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে বিশিষ্টজনরা এসব কথা বলেন। মহাত্মা গান্ধীর ১৫২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এই ওয়েবিনার আয়োজন করে।
নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে বক্তব্য রাখেন মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনের সভাপতি বিচারপতি এএইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, মানবাধিকার নেত্রী আরমা দত্ত এমপি, ভারতের সাংবাদিক মানস ঘোষ, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, মানবাধিকার নেতা তরুণ কান্তি চৌধুরী, সংগঠনের নরওয়ে শাখার সভাপতি খোরশেদ আহমেদ, ফিনল্যাণ্ড শাখার সভাপতি ড. মুজিবর দফতরি, নোয়াখালী গান্ধী আশ্রমের সম্পাদক মনু গুপ্ত, ভারতের সমাজকর্মী তাপস দাস, সংগঠনের অস্ট্রেলিয়া শাখার সভাপতি ডা. একরাম চৌধুরী, মানিকগঞ্জের আইনজীবী দীপক ঘোষ এবং নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল।
সভাপতির বক্তৃতায় শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘মহাত্মা গান্ধীর শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং শান্তি ও মানবতার আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদানের প্রাক্কালে মহাত্মা গান্ধীর অহিংস অসহযোগ আন্দোলনকে নতুন মাত্রা প্রদান করেছিলেন, যা বাংলাদেশে পাকিস্তানের ২৪ বছরের ঔপনিবেশিক শাসনযন্ত্র সর্ম্পুণ অচল করে দিয়েছিল। দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই মহান নেতা বিশ্বে শান্তি ও মানবতার বার্তা প্রচারে অসামান্য অবদান রেখেছেন।’
মানস ঘোষ বলেন, ‘উপমহাদেশের এই দুই উজ্জ্বল এবং অসামান্য ব্যক্তিত্বের চরিত্র এবং কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মিল এবং খুব কম বৈষম্য রয়েছে। উভয়েই তাদের জনগণকে গভীরভাবে ভালবাসতেন, যার কারণে তাদের জীবনের সাথে মূল্য দিতে হয়েছিল অত্যন্ত দুঃখজনক পরিস্থিতিতে, যা ইতিহাসে খুব সমান্তরাল। তাদের আদর্শ এবং নীতিগুলি তাদের মানুষের চারপাশে এতটাই সমান এবং আপোষহীন ছিল যে, উভয়ই সহজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিলেন এবং অবশেষে শিকার হয়েছিলেন প্রতিক্রিয়াশীলদের ষড়যন্ত্রের কাছে।’
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, সাম্প্রদায়িকতার বিরোধিতার জন্যই ১৯৪৮ সালে গান্ধীজিকে প্রাণ দিতে হয়েছিল। অন্যদিকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকেও হত্যা করা হয়েছিল তার লালিত আদর্শসমূহের কারণে- যার অন্যতম ছিল অসাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতা। বঙ্গবন্ধু তার জাতিসংঘ, জোট নিরপেক্ষ এবং কমনওয়েলথ সম্মেলনে দেয়া ভাষণে আন্তর্জাতিক মানবতার দিক তুলে ধরতেন। উভয় নেতাই পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা রোধে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন।
শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, গান্ধী ও সুভাষ চন্দ্র বোসের দেশ স্বাধীন করার দুটি বিপরীতমুখী ধারাকে বঙ্গবন্ধু এক অপুর্ব পন্থায় নিজের মধ্যে একসুত্রে গেঁথে নিয়েছিলেন।
তরুণ কান্তি চৌধুরী বলেন, ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পুর্বে মহাত্মা গান্ধীর সত্যাগ্রহ আন্দোলন অসহযোগ ও আইন অমান্য আন্দোলনের রূপ ধারণ করেছিল। বঙ্গবন্ধুও অসহযোগ ও আইন অমান্য আন্দোলন করেছিলেন পাকিস্তানি শাসকের বিরুদ্ধে। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে পাকিস্তানি স্বৈরাচারী শাসককে অচল করে দিয়েছিলেন।
খোরশেদ আহমেদ বলেন, মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধুর ধর্মনিরপেক্ষ মানবতার দর্শন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের সংবিধানে পরিস্ম্ফুটিত। ড. মুজিবর দফতরি বলেন, উভয় নেতাই বিশ্বজনীন অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রাণ পুরুষ। রাজনীতিতে তারা পুর্ব-পশ্চিমের আদর্শের সমন্বয় করেছেন।
মনু গুপ্ত বলেন, দুই মানবতাবাদী নেতা একইভাবে একইস্থানে বন্ধুত্বের চিরকালীন নিদর্শন সমন্বিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আহ্বান জানাচ্ছেন যে- হিংসা, বৈরিতা বা সাম্প্রদায়িকতা নয় বরং হাত বাড়ালেই বন্ধু হয়।
তাপস দাস বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় এই দুই জাতির পিতার মতো জনসমর্থন কেউ লাভ করেনি। কাজী মুকুল বলেন, মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধুর ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ ও মানবতার দর্শন যদি আমরা তরুণ প্রজন্মের নিকট তুলে ধরতে পারি, তবে এই অঞ্চল মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার কালো থাবা থেকে রক্ষা পাবে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত