খুলনার রূপসা উপজেলার শিয়ালী গ্রামে মন্দির, হিন্দুসম্প্রদায়ের বেশ কিছু দোকান ও বাড়িঘর ভাঙচুর এবং লুটপাটের ঘটনায় করা মামলায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে বিকেলে হামলার ঘটনাটি ঘটে। খুলনার পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মাহবুব হাসান বলেন, ওই হামলার ঘটনায় করা মামলায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা এলাকায় আছেন। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন রূপসার ঘাটভোগ ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের শরিফুল ইসলাম ও সম্রাট মোল্লা, শিয়ালী গ্রামের মঞ্জুরুল আলম, বামনডাঙ্গা গ্রামের শরিফুল ইসলাম শেখ, রানা শেখ, মোমিনুল ইসলাম, মোল্লাহাট উপজেলার বুড়িগাংনী গ্রামের আকরাম ফকির, সোহেল শেখ, শামীম শেখ ও জামিল বিশ্বাস। মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে শতাধিক যুবক রামদা, চাপাতি, কুড়াল নিয়ে শিয়ালী গ্রামে হামলা চালান। তাঁরা অতর্কিতভাবে বাজারের বিভিন্ন দোকান ভাঙচুর করেন। এ সময় শিবপদ ধরের বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট করা হয়। তাঁরা সেখানকার কয়েকটি মন্দিরেও ভাঙচুর করেন। কয়েকজন বাধা দিতে এলে তাঁদের পিটিয়ে আহত করা হয়। এলাকাবাসী প্রতিরোধ তৈরি করার আগেই হামলাকারীরা পালিয়ে যান।
এ ঘটনায় রূপসা উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি শক্তিপদ বসু বাদী হয়ে শনিবার রাতে রূপসা থানায় মামলা করেন। মামলায় ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার বাদী শক্তিপদ বসু বলেন, দুর্বৃত্তরা শনিবার ব্যক্তিগত ও সর্বজনীন মিলিয়ে পাঁচটি মন্দির, একটি সমাধি মন্দির ও সেখানকার মূর্তি ভাঙচুর করেছে। এ ছাড়া তিনটি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। দুর্বৃত্তরা নারীদের নানাভাবে অপদস্থ করেছে। তেরখাদা উপজেলার শেখপুরা গ্রামের এবং রূপসা উপজেলার চাঁদপুর, বামনডাঙ্গা, শিয়ালী গ্রামের দুর্বৃত্তরা এই হামলা চালিয়েছে।
রূপসা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবাইয়া তাছনিম বলেন, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় মসজিদে নামাজ চলার সময় হিন্দুসম্প্রদায়ের লোকজন কীর্তন করছিলেন, এমন অভিযোগে দুই পক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ হয়। ঘটনার পরপরই প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তাদের নিয়ে স্থানীয় হিন্দু ও মুসলিম নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি মিটমাট করা হয়। ওই দিনের ঘটনার সঙ্গে শনিবারের হামলার সম্পর্ক নেই বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আছেন। এলাকার পরিস্থিতি এখন শান্ত। পুলিশ প্রশাসন ও র্যাব-৬–এর একটি দল সেখানে টহল দিচ্ছে।
এদিকে রোববার সকালে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগ, রূপসা উপজেলা আওয়ামী লীগ, খুলনা মহানগর ও জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা ওই এলাকা পরিদর্শনে যান। এলাকার মানুষ এ সময় নেতাদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। খবরের সূত্র -প্রথম আলো , ছবি-বিবিসি বাংলা ও বিডি নিউজ ।