সোস্যাল মিডিয়ার এ যুগে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ, তথ্যের আদান প্রদান যেমন সহজতর হয়েছে তেমনি বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যক্তিগত তথ্য ও ছবি/ভিডিও অপব্যবহার করে ব্লেকমেইলিংসহ নানা রকম হয়রানির পরিমাণ। কোন কোন ক্ষেত্রে আপনি নিজেও হয়তো জানছেন না আপনার তথ্য ও ছবি ব্যবহার করে অপরাধী/অপরাধীরা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিচ্ছে। প্রতিকার চাওয়া তো দূরের কথা অনেক সময় সামাজিক লোকলজ্জার ভয়ে তা প্রকাশও করাও মুশকিল হয়ে পড়ে। এ ধরণের সাইবার অপরাধের শিকার হতে পারেন যে কেউ। এমতাবস্থায় আপনার করণীয় কি?
কি ধরণের হয়রানির শিকার হতে পারেনঃ
ফেসবুক বা ইমেইল একাউন্ট হ্যাক হওয়া, ফেক আইডি খুলে আপত্তিকর ছবি/ভিডিও শেয়ার, অন্যকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে তার বিকৃত তথ্য ও ছবি ব্যবহার, হুমকি দিয়ে টাকা আদায়, অনলাইনে প্রশ্নফাঁস ইত্যাদি।
কোথায় অভিযোগ করবেনঃ
০১। প্রাথমিকভাবে অভিযোগ করতে পারেন আপনার নিকটস্থ থানায়। অথবা,
০২। ই-মেইলে অভিযোগ জানাতে পারেন cyberhelp@dmp.gov.bd এই ঠিকানায়। অথবা
০৩। সরাসরি কথা বলার প্রয়োজনবোধ করলে চলে যেতে পারেন ঢকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম ডিভিশনের Cyber Crime Unit অফিসে। কথা বলতে পারেন দায়িত্বরত কর্মকর্তার সঙ্গে এই নাম্বারে-০১৭৬৯৬৯১৫২২ । ঠিকানাঃ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ৩৬ শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী স্মরণী, রমনা, ঢাকা।
কিভাবে অভিযোগ করবেনঃ
ভিক্টিমাইজড হলে যত দ্রুত সম্ভব অভিযোগ জানানো উচিত। অভিযোগ করার ক্ষেত্রে আপনার অভিযোগের স্বপক্ষে কিছু প্রমাণাদি দরকার। যেমন এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আলামতের স্ক্রীনশট, লিংক, অডিও/ভিডিও ফাইল অথবা রিলেটেড ডকুমেন্টস। স্ক্রীনশট সংগ্রহের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন Address Bar এর URL টি দৃশ্যমান হয়। ই-মেইল এর মাধ্যমে অভিযোগ জানাতে চাইলে এসব কন্টেন্ট এটাচ করে আপলোড করতে পারেন। অন্যান্য ক্ষেত্রে সরাসরি সফট কপি দেয়া যেতে পারে। সর্বোপরি আপনি প্রয়োজনে Cyber Crime Unit এর অফিসারদের নিকট থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন যা আপনার আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সহায়ক হতে পারে।
প্রতিরোধ আপনার হাতেইঃ
জেনে নিন এমন বিব্রতকর ঘটনা এড়িয়ে নিরাপদ থাকার কিছু কৌশলঃ
১। অচেনা, অপরিচিত কারো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট Accept করবেন না।
২। ফেসবুকে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য সবার জন্য উম্মুক্ত(Public) রাখবেন না।
৩। আপনার ফেসবুক প্রোফাইলের প্রাইভেসি সেটিংস চেক করুন। অন্য কারো পোস্টে আপনাকে Tag করার অপশন উম্মুক্ত রাখবেন না।
৪। প্ররোচিত হয়ে উস্কানিমূলক ছবি/ভিডিও শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।
৫। সন্দেহজনক কোন লিংকে ক্লিক করবেন না।
৬। লগ-ইন আইডি ও পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করুন এবং প্রতিবার ব্যবহার শেষে লগ-আউট করুন।
৭। সন্দেহজনক কোন ইমেইল বা মেসেজ এর উত্তর প্রদান হতে বিরত থাকুন।
৮। আপনার কোন পরিচিতজনের বিপদের কথা জানিয়ে ইমেইল অথবা মেসেজ আসলে আগে যাচাই করুন এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন।
৯। বিপুল পরিমাণ অর্থ লটারীতে জিতেছেন-এমন তথ্যসহকারে পাঠানো ইমেইল বা মেসেজ এর উত্তর প্রদান হতে বিরত থাকুন। এসকল তথ্যসম্বলিত মেইল অনুসন্ধানে ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়েছে।
একজন সুনাগরিক হিসেবে আপনার সচেতনতা ও সহযোগিতা আইনী ব্যবস্থার পাশাপাশি সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ইন্টারনেটের ব্যবহার যত বৃদ্ধি পাচ্ছে সাইবার আক্রমণের শিকারও হচ্ছে মানুষ তত বেশি। অপরাধীরা বিভিন্ন ধরণের ফাঁদ তৈরি করে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে নানাভাবে হয়রানি করার চেষ্টা করছে। ব্ল্যাকমেইল করে হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার বা প্রয়োজনীয় জিনিস।
আইডি হ্যাক থেকে শুরু করে পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে বা অশ্লীল বার্তা ছড়িয়ে দিয়ে সামাজিকভাবে করছে হেয়। কিন্তু সামান্য একটু সচেতন হলেই অনেকাংশে হ্যাকিং বা সাইবার আক্রমন প্রতিরোধ করা সম্ভব। আমরা যে সব সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে থাকি সেখানেই রয়েছে আমাদের সুরক্ষা। একটু সচেতনতাই পারে ভয়াবহ অবস্থার হাত থেকে বাঁচাতে।
সাইবার আক্রমণের শিকার হওয়ার আগেই আমাদের জন্য রয়েছে কিছু করণীয়। সে বিষয়গুলো যদি মাথায় থাকে তাহলে অনেকাংশে আমরা নিরাপদ থাকতে পারি।
সাইবার আক্রমণ থেকে বাঁচার উপায় তুলে ধরা হলো-
১. সাইবার আক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে প্রথমত প্রয়োজন সাইবার সচেতনতা।
২. আপনি অন্ধকারে হাঁটতে পারবেন না। সাইবার একটি অন্ধকার জগত। এই জগতে এমন অনেক কিছু আছে যা আপনি জানেননা। এখানে এমন অনেক বিষয় আছে যা সম্পর্কে আপনার ধারণাও নেই। তাই প্রয়োজনীয় প্রতিটি বিষয়কে যাচাই বাছাই করে নিতে হবে।
৩. কেউ আপনার কাছে একটা লিঙ্ক পাঠিয়েছে। এখন আপনাকে দেখতে হবে সেটায় আপনি ক্লিক করবেন কি না। লিঙ্কটা ক্লিক করার পর দেখা যাচ্ছে তারা আপনার পাসওয়ার্ড চাচ্ছে। এখন আপনি কি করবেন? পাসওয়ার্ড কি দিয়ে দেবেন? এ বিষয়ে ভাবতে হবে, জানতে হবে। কেউ আপনাকে একটা লিঙ্ক পাঠালো আপনি সেটা ডাউনলোড করলেন, এরপর তারা একটা নাম্বার চাইলো; ই-মেইল চাইলো, এসব দেওয়া যাবে না। তারা একটা অ্যাপ বা সফটওয়্যার পাঠিয়েছে, কন্ট্রাক নাম্বার চাচ্ছে বুঝতে হবে তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন। আপনার ছবি চাচ্ছে, সহজেই বুঝে নিতে হবে এখানে কোনো সমস্যা রয়েছে। এসব তথ্য দেওয়া যাবে না।
৪. কোনো ই-মেইল আসলে আগে দেখতে হবে মেইলটা পরিচিত কি না। আনট্রাস্ট কোনো কিছুতে ক্লিক দেওয়া যাবে না। এর মাধ্যমে নিজের সব তথ্য অন্যের কাছে চলে যাবে। সুতরাং এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
৫. কেউ কোনো তথ্য চাইলে আগে নিশ্চিত হতে হবে আমার তথ্য আমি কাকে দেব আর কাকে দেব না। আমার প্রয়োজন কতটুকু। কতটুকু আমি তাকে বিশ্বাস করবো। এসব বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
৬. ফেসবুকে অনেকেই এখন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এজন্য আপনাকেই ঠিক করতে হবে আপনি ফেসবুক আইডি কতটুকু অপেন রাখবেন আর কতটুকু বন্ধ রাখবেন। সব ধরণের পদ্ধতি দেওয়া আছে। এখন নিজেকেই সেটা ঠিক করতে হবে কী করবেন। ফেসবুকে অনেকগুলো অপশন আছে যেগুলো বন্ধ রাখলে আপনি নিরাপদ থাকবেন। কিন্তু এ বিষয়গুলো অনেকে জানেননা। তাই ফেসবুক হ্যাক হওয়া বা হয়রানি হওয়ার আগে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। নিজে না জানলে কাউকে দিয়ে এ ব্যবস্থাগুলো করে নিলে আপনি নিরাপদ থাকবেন।#