ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর প্রথমবারের মত আদালতে হাজিরা দিলেন কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর।
বুধবার তিনি ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আবু বকর সিদ্দিকের আদালতে হাজিরা দেন।
পুনঃতদন্তে থাকা এ মামলার এজাহারভুক্ত আরেক আসামি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নানকেও আগামী সাত দিনের মধ্যে যে কোনো একদিন তদন্ত কমকর্তার কাছে হাজির হতে বলা হয়েছে।
জামিনে থাকা মিনহাজ মান্নান হাজির হলে তাকে তদন্ত কমকর্তা জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। এটা রিমান্ড নয় বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের উপ- কমিশনার জাফর হোসেন জানান।
আসামিদের পক্ষে এদিন আদালতে ছিলেন আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ মনসুরসহ আরো অনেকে।
করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে গতবছর ৫ মে লেখক মুশতাক আহমেদ এবং কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, ব্রোকারেজ হাউজ বিএলআই সিকিউরিটিজের কর্ণধার মিনহাজ মান্নান এবং রাষ্ট্রচিন্তার সংগঠক দিদারুল ভূইয়াকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার এসআই জামশেদুল ইসলাম তখন বলেছিলেন, কার্টুনিস্ট কিশোর তার ‘আমি কিশোর’ নামের ফেইসবুক একাউন্টে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সরকারের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনামূলক কার্টুন-পোস্টার পোস্ট করতেন। আর মুশতাক তার ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে কিশোরের সেসব পোস্টের কয়েকটি শেয়ার করেন।
পরে দিদারুল ও মিনহাজ মান্নান জামিনে মুক্তি পেলেও কিশোর ও মুশতাকের আবেদন সে সময় কয়েক দফা নাকচ হয়।
এই মামলায় আসামির তালিকায় মুশতাক, কিশোর, দিদার, মিনহাজের সঙ্গে আরও ছিলেন নেত্র নিউজের সম্পাদক সুইডেন প্রবাসী তাসনিম খলিল, জার্মানিতে থাকা ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক শাহেদ আলম, হাঙ্গেরি প্রবাসী জুলকারনাইন সায়ের খান (আল জাজিরার প্রতিবেদনের স্যামি), আশিক ইমরান, স্বপন ওয়াহিদ ও ফিলিপ শুমাখার।
তবে তদন্তের পর শুধু মুশতাক, কিশোর ও দিদারকে আসামি করে গত জানুয়ারিতে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় রমনা থানা পুলিশ। বাকি আট আসামিকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে গত ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেন এ মামলায় পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন।
সেই দায়িত্ব পাওয়ার পর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) উপপরিদর্শক ও মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা মো. আফছর আহমেদ আসামি কিশোর ও মুশতাককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেছিলেন।
কিন্তু সেই শুনানি হওয়ার আগেই ২৫ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে বন্দি অবস্থায় মুশতাকের মৃত্যু হয়। আর হাই কোর্ট থেকে গত ৩ মার্চ ছয় মাসের জামিন পাওয়া কিশোর পরদিন কারামুক্ত হন।
তদন্ত কর্মকর্তা আফছর আহমেদ জামিনে থাকা দুই আসামি মিনহাজ মান্নান আর দিদারুলকেও জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চেয়েছিলেন আদালতের কাছে। তবে দিদারুলের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে অভিযোগপত্র দেওয়ায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেননি বিচারক ।
কারাগারে থাকা অবস্থায় মারা যাওয়া লেখক মুশতাক আহমেদের মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার ফেরত দেওয়ার জন্য বুধবার আদালতের কাছে আবেদন করেছিলেন তার আইনজীবী।
পরে আদালত জব্দ জিনিসগুলো ফেরত দেওয়া যাবে কি না, সে বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ১০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেয়। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।