বাংলাদেশের সামাজিক ও বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নারীরা নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) হতে পারবেন না মর্মে নির্দেশনা দেওয়া হাইকোর্টের রায় প্রকাশিত হয়েছে রোববার।
এই রায় নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। নারী অধিকারকর্মীরা বলছেন এটা নারীকে আরও পেছনে টেনে ধরবে। উচ্চ আদালতের কাছে নারী ন্যায় বিচার পায়নি। এর বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।
প্রসঙ্গত দিনাজপুরের এক নারীকে নিকাহ রেজিস্ট্রার বা কাজী নিয়োগ না করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই প্রার্থী রিট করেন। হাইকোর্টের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রিট খারিজ করে দেন। রবিবার বিচারপতিদের স্বাক্ষরের পর ওই রায় প্রকাশিত হয়েছে।
প্রকাশিত রায়টির পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, নারীরা মাসের একটি নির্দিষ্ট সময় ফিজিক্যাল ডিসকোয়ালিফেশনে থাকেন। সেক্ষেত্রে মুসলিম বিবাহ হচ্ছে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং আমাদের দেশে বেশিরভাগ বিয়ে মসজিদে পড়ানো হয়। ওই সময়ে নারীরা মসজিদে প্রবেশ করতে পারেন না এবং তারা নামাজও পড়তে পারেন না। সুতরাং বিয়ে যেহেতু একটা ধর্মীয় অনুষ্ঠান, সেহেতু এই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে নারীদের দিয়ে নিকাহ রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন সম্ভব নয়।
হাইকোর্টের এই পর্যবেক্ষণ দিয়ে এ সংক্রান্ত জারি করা রুল খারিজ করে দিয়েছেন। ফলে নারীরা নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) হতে পারবেন না।’
রিটকারীর আইনজীবী ফাউন্ডেশন ফর ল’ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম বলেন, ‘দেশের প্রধানমন্ত্রী নারী। নারীরা বিমানের পাইলট হচ্ছেন, সশস্ত্র বাহিনীতেও কাজ করছেন। তাহলে কেন নারীরা নিকাহ রেজিস্ট্রার হতে পারবেন না? তাই হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আমরা আপিল করবো।’
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়িয়ার পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে তিনজন মহিলার নাম প্রস্তাব করেন উপদেষ্টা কমিটি। তিন সদস্যের ওই প্যানেলের বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। একই বছর ১৬ জুন আইন মন্ত্রণালয় ‘বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নারীদের দ্বারা নিকাহ রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়’ মর্মে চিঠি দিয়ে তিন সদস্যের প্যানেল বাতিল করে।
পরে আইন মন্ত্রণালয়ের ওই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন নিকাহ রেজিস্ট্রারের প্যানেলের এক নম্বর ক্রমিকে থাকা আয়েশা সিদ্দিকা। সেই রিটের শুনানি নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের চিঠি কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
শুনানি শেষে জারি করা রুলটি খারিজ করে বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন। এর ফলে বাংলাদেশের সামাজিক ও বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নারীরা নিকাহ রেজিস্ট্রার হতে পারবে না মর্মে আইন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বহাল থাকলো বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।