সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত বিভিন্ন আইনে হওয়া ৭ হাজার মামলার বেশীরভাগেরই ভুক্তভোগী নারী। এছাড়া অনলাইন ব্যবহারকারী ১০০ জন নারীর মধ্যে ৭৩ জনই সাইবার বুলিং বা হয়রানির শিকার হন। সাইবার অপরাধ দমনে পুলিশের অন্তত ৫টি ইউনিট থাকলেও পুরুষ সদস্য দিয়ে পরিচালিত হওয়ায় সেগুলোতে যান না নারীরা।
এ বাস্তবতায়, শুধু নারী পুলিশ সদস্যদের পরিচালনায় ‘পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন’ নামে নতুন ইউনিট গঠন করেছে পুলিশ সদর দপ্তর।
পুলিশের আইজি বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘সাইবার অপরাধ দমন এবং পর্নগ্রাফি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে যে সব মামলা হয়েছে তার অধিকাংশতেই দেখা যায় ভিক্টিম নারী।’
সাইবার জগতে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই বাংলাদেশ পুলিশের উদ্যোগে চালু হলো ‘পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন’। পুলিশ সদর দপ্তরের এলআইসি শাখার অধীনে এই সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
সোমবার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানে এ সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আইজিপি বলেন, ‘সাইবার ক্রাইম একটি বৈশ্বিক সমস্যা। সাধারণত দেশে ১৬ থেকে ২৪ বছরের নারীরা এই অপরাধে সবচেয়ে বেশি শিকার হয়। জাতিসংঘের একটি পরিসংখ্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, সাইবার অপরাধের শিকার ভিকটিমের চার ভাগের তিন ভাগ হল হলো নারী। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও সাইবার স্পেস নিরাপদ রাখতে আমাদের এই উদ্যোগ। নতুন এই ইউনিট এর বিশেষত্ব হলো এখানে যারা সেবা দেবেন, তদন্ত করবেন, তারা সবাই পুলিশের নারী সদস্য। যার ফলে ভিকটিমরা নির্দ্বিধায় তাদের সমস্যাগুলো বলতে পারবেন।’
আইজিপি আরও বলেন, ‘কোনো ভিকটিম চাইলে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ৯৯৯ এর মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবেন। আমরা চাইবো, আজকে এটি উদ্বোধন হওয়ার পর থেকে যারা চাইবেন তারা যেন আমাদের থেকে সেবা নেন। আমরা সাইবার জগতকে নিরাপদ করতে চাই।
সাইবার জগতে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে এক নির্দেশনায় তিনি বলেন, এর ঝুঁকি সম্পর্কে ব্যবহারকারীদের সচেতন হতে হবে। তিনি সবাইকে নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারের নির্দেশনা দেন।
যে সব অপরাধের ক্ষেত্রে এখানে অভিযোগ করা যাবে তা হল, ব্যক্তিহত ছবি বা ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া, সোশ্যাল মিডিয়ার আইডি হ্যাক করা বা হ্যাক করার মাধ্যমে প্রতারণা, ছবি বা ভিডিও এডিট করে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি, কারও ছবি ব্যবহার করে আপত্তিকর কন্টেন্ড দিয়ে ফেইক আইডি তৈরী করা, ফোন নম্বর বিভিন্ন খারাপ পোস্টে/সাইটে ছড়িয়ে দেয়া, সাইবার বুলিং ও হ্যারেসমেন্ট, অনলাইনে আপত্তিকর ছবি/ভিডিও/তথ্য ফাঁস করার হুমকি দিয়ে অর্থ দাবী করা এবং যৌন হয়রানিমূলক মেসেজ/মেইল/লিংক পাঠানো।
নতুন এই কার্যক্রমের সেবা দেওয়ার জন্য একটি হটলাইন নাম্বার (০১৩২০-০০০৮৮৮) চালু করা হয়েছে। এছাড়াও ই-মেইল (cybersupport.women@police.gov.bd) ও ফেসবুক পেইজে (URL: https://m.facebook.com/PCSW.PHQ/) মেসেজ করে ভুক্তভোগী নারীরা তাদের অভিযোগ জানাতে পারবেন।
অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলামসহ পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।