চীনের উইঘুর মুসলিমদের ওপর নির্যাতন নিয়ে এবার সোচ্চার হলো কানাডা। কানাডার সংসদীয় কমিটির রিপোর্টে উইঘুর মুসলিমদের নিয়ে চীনের নীতির কড়া সমালোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, উইঘুরদের ধরে শিবিরে আটকে রাখা হয়, তাঁদের দিয়ে জোর করে কাজ করানো হয়, তাঁরা সবসময় রাষ্ট্রের নজরদারিতে থাকেন, তাঁদের জোর করে জন্মনিয়ন্ত্রণও করা হয়। রিপোর্টে বলা হয়েছে, উইঘুরদের বিরুদ্ধে চীন গণহত্যার নীতি নিয়েছে। তারা উইঘুরদের সংস্কৃতি ও ধর্ম মুছে দিতে চায়।
এদিকে কানাডার এই রিপোর্টের তীব্র বিরোধিতা করেছে চীন। বৃহস্পতিবার চীনের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, এই রিপোর্ট ভিত্তিহীন। কানাডা কখনোই চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। কানাডার সংসদীয় কমিটি ওই এলাকার রাজনৈতিক স্থায়িত্ব, আর্থিক বৃদ্ধি, জাতিগত ঐক্য ও সামাজিক সৌহার্দ্যকে দেখেইনি।
ছবি- ইন্টারনেট।
বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বলেছেন, এই রিপোর্ট মিথ্যা ও ভুল তথ্যে ভরা। রিপোর্ট থেকে বোঝা যাচ্ছে, কমিটির সদস্যরা এই ব্যাপারে কিছুই জানেন না।
সাম্প্রতিক সময়ে কানাডা ও চীনের সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছে। ২০১৮-র ডিসেম্বরে চীনের এক বড় টেলিকম কোম্পানির প্রতিনিধিকে গ্রেপ্তার করে অামেরিকার হাতে তুলে দেয় কানাডা। চীনও কানাডার এক সাবেক কূটনীতিক ও একজন ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে। অক্টোবরের গোড়ায় কানাডার বিদেশমন্ত্রী বলেছিলেন, চীন ‘হোস্টেজ ডিপ্লোমেসি’ করছে। গত কয়েক মাসে দুই দেশের সম্পর্ক আরো খারাপ হয়েছে। কানাডা চীনের মানবাধিকার ভঙ্গ, হংকং, এবং উইঘুরদের নিয়ে সোচ্চার হয়েছে। চীন বলছে, কানাডা এই ভাবে তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। এই পরিস্থিতিতে উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন নিয়ে সংসদীয় রিপোর্ট দুই দেশের মধ্যে বিরোধ নতুন মাত্রা পেলো।
**শিনজিয়াং থেকে আমদানি বন্ধ আমেরিকায়
এদিকে দশ লাখেরও বেশি উইঘুর মুসলিমকে শ্রম শিবিরে জোর করে কাজ করানো হয় বলে অভিযোগ। আর এ জন্য চীনের শিনজিয়াং প্রদেশ থেকে সবধরণের আমদানি বন্ধের আইনে অনুমোদন দিয়েছে মার্কিন হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস।
ব্যবসায়ী মহলের চাপ সত্ত্বেও মার্কিন হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে সর্বসম্মতিতে পাস হয়েছে শিনজিয়াং থেকে কোনো জিনিস আমদানি না করা সংক্রান্ত বিল। সদস্যদের মতে, উইঘুরদের দিয়ে জোর করে শ্রম শিবিরে রেখে কাজ করানো হয় শিনজিয়াং প্রদেশে। দশ লাখেরও বেশি মানুষকে এই অত্যাচারের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। তাই অত্যাচার বন্ধ করার জন্য শিনজিয়াং প্রদেশের জিনিস আমদানি নিষিদ্ধ করা হলো।
জাতিসংঘও বলছে, উইঘুর মুসলিমদের জোর করে শিবিরে রেখে এই কাজ করাচ্ছে চীন। অামেরিকা ও অন্য দেশগুলি এ নিয়ে অতীতে সোচ্চার হয়েছে। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। এখন অ্যামেরিকা চাপ দিয়ে এই অত্যাচার বন্ধ করতে চাইছে।
স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, ”দুঃখের কথা হলো, জোর করে কাজ করানো মানুষরা যে জিনিস তৈরি করছেন, সেগুলি অ্যামেরিকার দোকানে ও বাড়িতে ঠাঁই পাচ্ছে। বেইজিং-কে আমাদের সরাসরি বার্তা দিতে হবে। এই অত্যাচার বন্ধ করতে হবে।’ ডয়েচে ভেলে/রয়টার্স /এপি।