ঢাকা   মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২   রাত ৩:৫৮ 

সর্বশেষ সংবাদ

সাবরিনার এনআইডি জালিয়াতির ঘটনায় অধ্যাপক মিজানুরকে জড়িয়ে খবর, ইসি সচিব ও সময় টিভিকে উকিল নোটিশ

ডা. সাবরিনা শারমিন হুসেন ওরফে সাবরিনা আরিফের দ্বিতীয়বার ভোটার হওয়ার ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমানকে জড়িয়ে প্রকাশিত সংবাদের জন্য নির্বাচন কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর ও সময় টেলিভিশনের বার্তা প্রধান তুষার আব্দুল্লাহসহ চারজনকে নোকিল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে পাঠানো এই উকিল নোটিশে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই খবর   ও সেখানে দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাহার করে সংবাদ সম্মেলন করে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। অন্যথায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর ছাড়াও জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের টেকনিক্যাল এক্সপার্ট মো. শাহাবুদ্দিন এবং সময় টিভির তুষার আব্দুল্লাহর সঙ্গে প্রতিবেদক বেলায়েত হোসাইনের কাছে এই উকিল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
অধ্যাপক মিজানুর রহমানের পক্ষে নোটিশটি পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ আইনজীবী মো. সাজ্জাদ হোসেন, খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ, মোহাম্মদ বাকির উদ্দিন ভূইয়া, মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ও মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব।

ডাক ও ইমেইলে নোটিশটি পাঠানো হয়েছে জানিয়ে মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব সাংবাদিকদের বলেন, “নোটিশ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইলেক্ট্রনিক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট এবং অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ প্রত্যাহার করে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমাদের মক্কেলের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা না চাইলে নোটিশ গ্রহীতাদের বিরদ্ধে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা করাসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।” 

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে জেকেজি হেলথ কেয়ারের নমুনা পরীক্ষা নিয়ে জালিয়াতির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের বরখাস্ত চিকিৎসক ডা. সাবরিনা। দুদকের অনুসন্ধানে তার দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র থাকার তথ্য বেরিয়ে আসে, এ নিয়ে মামলা করেছে নির্বাচন কমিশন।

তিনি দ্বিতীয়বার ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন ২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারি। তার ওই আবেদনে তৎকালীন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমানের একটি ভিজিটিং কার্ড পাওয়া গেছে বলে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ ঘটনা তদন্তে একটি কমিটিও করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে নির্বাচন কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর বলেছিলেন, “যদি কেউ অন্যায় চাপ প্রয়োগ করে তদবির করেন, বা যেটা করা যাবে না ওটার বিষয়ে চাপ দিয়ে বলেন এটা দিতে হবে, তবে সেটা অন্যায়। এক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র আইন অনুযায়ী উনিও একজন আসামি হবেন।”

নির্বাচন কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীরের এ বক্তব্যের আগেই সময় টিভি সাবরিনা আরিফের দ্বিতীয়বার ভোটার হওয়ার ঘটনায় অধ্যাপক মিজানুর রহমানকে জড়িয়ে সংবাদ প্রচার করে।

পরে গত শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে পাঠানো এক বিবৃতিতে অধ্যাপক মিজানুর রহমান নির্বাচন কমিশনের সচিব ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের টেকনিক্যাল এক্সপার্টকে ক্ষমা চাইতে বলেন।

ক্ষমা না চাইলে ‘মানহানির জন্য’ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করেছিলেন তিনি। এছাড়া এ বিষয়ে সম্প্রচারিত সংবাদ প্রতিবেদন প্রত্যাহার করতেও সময় টিভির প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন অধ্যাপক মিজানুর রহমান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষক মিজানুর রহমান বিবৃতিতে বলেছিলেন, “আমি এখনও আশা করি, সময় টিভি কর্তৃপক্ষ ও নির্বাচন কমিশন আমার কাছে অপেশাদার ও অপরাধমূলক আচরণের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাইবে।

“নির্বাচন কমিশন সচিবকে ক্ষমা চাইতে হবে। কারণ সচিব যে শব্দ ব্যবহার করেছে,  শব্দ চয়ন করেছে- আসামি করা হবে। এত বড় শব্দ- উনি আসামি শব্দের অর্থ বুঝেন কি না আমি জানি না। যদি ক্ষমা না চায় কে আসামি হবে- আমি দেখব।”

এরপর নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. আলমগীর বলেছেন, তিনি অধ্যাপক মিজানুর রহমানকে জড়িয়ে কোনো বক্তব্য দেননি। সে কারণে ক্ষমা চাওয়ার প্রসঙ্গ আসছে না।

বরং ওই ঘটনা নিয়ে সময় টেলিভিশন যে খবর প্রকাশ করেছে, তা ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

অধ্যাপক মিজানের বিরুদ্ধে মামলা হবে- তা বলিনি: ইসি সচিব

ইসি সচিব ক্ষমা না চাইলে আইনি ব্যবস্থা: অধ্যাপক মিজান  

অধ্যাপক মিজানুর রহমানের নোটিশে বলা হয়েছে, “নোটিশ গ্রহীতারা পারস্পরিক যোগসাজশে অধ্যাপক মিজানুর রহমানের নামে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে ক্রমাগতভাবে মিথ্যা, সূত্রহীন সংবাদ প্রচার করেছে।”

জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন, ২০১০ এর ৪ ধারা তুলে ধরে এতে বলা হয়, “আইন অনুযায়ী একজন নাগরিককে কেবল একটি জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার বিধান আছে।

“জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন বিধিমালা, ২০১৪ এবং জাতীয় পরিচয়পত্র ও সংরক্ষিত তথ্য উপাত্ত (সংশোধন, যাচাই এবং সরবরাহ) প্রবিধানমালা, ২০১৪ অনুযায়ী যাচাই বাছাই করে একজন নাগরিককে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার সম্পূর্ণ দায় দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার। তাছাড়া এ আইন, বিধি, প্রবিধি ও নাগরিকের পরিচয়পত্র নিবন্ধন আবেদনের কোথাও সুপারিশের কোনো বিধান নাই।

“ফলে অধ্যাপক মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে নোটিশ গ্রহীতাদের আনা ‘কথিত সুপারিশ’র অভিযোগ আইন ও বিধি ও তথ্যগতভাবে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বানোয়াট।”

নোটিশে আরও বলা হয়েছে, “পারস্পরিক যোগসাজশে মিজানুর রহমানকে জড়িয়ে সময় টিভি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে মিথ্যা, বানায়োট ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচার করে চরম মানহানি করা হয়েছে।

“তাই দণ্ডবিধির ৪৯৯ ধারা অনুযায়ী মানহানিকর এবং ৫০০ ধারা অনুযায়ী এটি শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ। এই অপরাধ প্রমাণ হলে নোটিশ গ্রহীতারা দুই বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ডে বা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।

“এছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর ২৯ ধারা অনুযায়ী নোটিশ গ্রহীতারা মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে মানহানিকর তথ্য প্রকাশ বা প্রচার করে অপরাধ করেছেন। এ আইনে অপরাধ প্রমাণ হলে প্রত্যেককে ৩ বছরের কারাদণ্ড বা ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত  অর্থদণ্ডে বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।”

এছাড়াও বিদ্যমান আইন অনুযায়ী অধ্যাপক মিজানুর রহমানের ‘ক্ষতি ও মান সম্মানহানি করার কারণে’ নোটিশ গ্রহীতাদের বিরুদ্ধে আর্থিক ক্ষতিপূরণ আদায়ের মোকদ্দমা দায়ের করার আইনি বিধান আছে বলেও উল্লেখ করা হয়ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত