করোনা পরিস্থিতির কারণে চার মাস ধরে আদালতের বিচার কার্যক্রম বন্ধ। উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালতে স্বল্প পরিসরে ভার্চুয়াল কোর্ট চলছে। এতে সুযোগ পাচ্ছেন না বেশিরভাগ আইনজীবী। ফলে মামলা মোকদ্দমা না থাকায় আইনজীবীরা পড়ছেন বিপাকে, আর্থিক অনটনে। আইনজীবীদের দাবি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে আদালত পুরোদমে খুলে দেয়া হোক। এ নিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী, নাহিদ সুলতানা যূথী। যিনি সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। আইনজীবীদের স্বার্থ বিবেচনায় এডভোকেট নাহিদ সুলতানা যূথী’র লেখাটি আমরা প্রকাশ করলাম।
“বর্তমান প্রেক্ষাপট ও আইন অঙ্গন ”
দেশে স্বল্প পরিসরে অফিস চলছে সরকারের নির্দেশনা অনুসারে , প্রায় ৪ মাসের উপরে আমরা ঘরে বসে অদৃশ্য শত্রু মোকাবেলা করছি। আমাদের কোনও দিকেই রক্ষা নাই । ঘরে থাকলে জীবন চলবে না । না খেয়ে মরতে হতে পারে আর বাইরে গেলে করোনা ……কোনটা আমাদের গ্রহণ করা উচিত !
বিচার প্রার্থীরা অবরুদ্ধ ,আদালত বন্ধ ,স্বল্প পরিসরে চলছিল কয়েকটি আদালত কিন্তু ৪ মাসের উপরে চলছে আমাদের এই অদৃশ্য যুদ্ধ … মাননীয় আইন মন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ভার্চুয়াল কোর্ট খোলা রেখে স্বল্প আকারে আদালত খোলা হবে , সুপ্রিম কোর্ট বার এর দাবী , বিচার প্রার্থীদের এবং আইনজীবীদের জন্য রেগুলার কোর্ট খুলে দেয়ার দাবী …………
জীবন নাকি জীবিকা কোনটা প্রাধান্য পাবে?
জীবন আসলে যখন যেমন , এখন জীবন ৪ মাসের উপরে বন্দি ,কতদিন পর্যন্ত আমাদের এই অদৃশ্য শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে জানিনা , সংসার কিভাবে চলবে , বাড়িভাড়া না দিতে পেরে অনেকেই চলে গিয়েছে দেশে গ্রামের বাড়িতে …চলে গেল বা বাড়ি ছেড়ে দিল সবই চলছে কিন্তু কার দুঃখ কে দেখবে অবস্থা চলছে ,কালকেই কোনও একটি টিভি তে দেখেছি একজন বাড়িওয়ালার আকুতি উনি ভাড়াটিয়া কে ছাড়তে চান না … কেন ? কারন উনার সংসার চলে বাড়িভাড়ায় এভাবে কয়েক স্তরে চলছে জীবন যুদ্ধ প্রত্যেকটি সেক্টর একে ওপরের উপর নির্ভরশীল । এখানে বলাই বাহুল্য অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে জীবিকা…।। অসুখ ,হসপিটাল ,অপারেশন টাকার জন্য না পারছে চিকিৎসা করাতে, না পারছে ঘরে বসে স্বস্তিতে থাকতে …অবস্থাদৃষ্টে দাঁড়িয়েছে যা হবার হবে ……যা হবার হবে কিন্তু মানুষ জীবন যুদ্ধে হেরে যেতে চায়না তাই বিশ্ব এখন স্বল্প পরিসরে নেমেছে কাজে , ভেঙ্গেছে লকডাউন ,যার যার যোগ্যতা ও কাজের নেচার অনুযায়ী রেগুলার বা ভার্চুয়াল, কেউ কিন্তু বসে বেতন পাচ্ছে না ! বাংলাদেশে
যারা চাকরি করেন তাদের চিন্তা নাই ।।সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী সম্ববত ৬০ % বেতন পাচ্ছেন সরকারী কর্মচারীরা কিন্তু আমাদের আইন মন্ত্রানলয়ের সরাসরি নিয়োগকৃত প্রায় ২০০ বা ততোধিক আইন কর্মকর্তা বেতন পাচ্ছেন ঘরে বসেই …চোখের উপর অসঙ্গতি দেখলে মানুষের মনে ক্ষোভের সঞ্চার হয় …। একটি গ্রুপ জীবনের মায়া ত্যাগ করে জীবীকার প্রয়োজনে মাঠে নামতে চাচ্ছে আর আরেকটি গ্রুপ বসে বেতন পাচ্ছেন তারপরও . কোর্ট কাছারি খোলার ক্ষেত্রে বিচারপতি মহোদয়দের মতবিরোধ খবর দেখলে জনমনে বিরূপ প্রভাব পড়ে । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার ঘোষণায় জীবীকার উপর গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছেন এবং সরকারি কর্মচারীরা সীমিত আকারে তাদের কাজ করছেন /করে চলেছেন সেখানে বিচার বিভাগের সিদ্ধান্তে হতে হবে সরকারের সাথে সমন্বয় করে জনগণের কথা চিন্তা করা … দেশের একটি অঙ্গ এমন ভাবে স্বল্প পরিসরে চলতে পারে না । আইনজীবী সমিতির দাবী রেগুলার কোর্ট খুলে দেয়া হোক ….. সামাজিক দুরত্ব মেনে যার যার জীবন তার তাই নিজের জীবনের প্রতি দায়িত্ববোধ নিজেদের ই আনতে হবে …।।আইনজীবীরা চাচ্ছে রেগুলার কোর্ট কিন্তু রেগুলার কোর্ট আর ভার্চুয়াল কোর্ট দুই ই থাকতে পারে ….
রেগুলার হোক আর ভার্চুয়াল হোক ৫৬ + কোর্ট ও যদি ভার্চুয়াল হতো তাইলে জনমনে ক্ষোভ হতোনা, বিচার প্রার্থীরা পেতো তাদের নাগরিক অধিকার । বর্তমান কমিটিকে সাধুবাদ জানাই দুর্নীতির শিকড়ে গিয়েছেন কিন্তু তা যেন সিদ্দিক এন্টারপ্রাইজ নামক একটা বহিরাগত ব্যবসায়িকে দায়ীর মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে নিজেদের দায়িত্বের অবহেলা ও এর সাথে কি ধরণের রাঘব বোয়ালেরা জড়িত ,কারা কারা জড়িত তা খুঁজে বের করবেন তাইলে আপনাদের সাধুবাদের পরিধি হবে আরও ব্যাপক । আপনারা কোর্ট খোলার জন্য মাননীয় প্রধান বিচারপতির সাথে আলোচনা করতে পারেন ……। AAG DAG হতে কোনও অতিরিক্ত যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না ….আমি জানিনা আছে কিনা অতিরিক্ত কোনও যোগ্যতা , আমি জানতে রাজি আছি যোগ্যতার মাপকাঠি কি ? অনেক দিন হয়েছে যারা ১০ বা তার ও বেশি সময় আইন কর্মকর্তা হিসাবে আছেন তাদের বাদে নতুন আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে সমতা আনা যেতে পারে
সংবাদে দেখছি মাননীয় বিচারপতিরা একমত হতে পারেননি তাই ভার্চুয়াল কোর্ট চলবে ……।।১৩ টি ভার্চুয়াল কোর্ট দিয়ে এভাবে রাষ্ট্রের একটি অঙ্গ এমন ভাবে চলতে পারে না। আমরা পুরনায় ৫৬ বা কাছাকাছি কোর্ট ই ভার্চুয়াল চাই অথবা কিছু রেগুলার কিছু ভার্চুয়াল কোর্ট ( স্বাভাবিক সময়ের মত ) কোর্ট হতে পারে …এবং আমরা আইনজীবীরা সরকারের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের কোর্ট পুরোপুরি চালু হোক সেটাই আমাদের কাম্য ……। আমাদের গতি হবে সচল, করোনা হবে স্থবির …।। করোনায় থেমে যাবে না আমাদের স্বাভাবিক গতিধারা……।