ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১   রাত ৪:১১ 

সর্বশেষ সংবাদ

সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়-সিইসি

সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন করা কঠিন বলে মনে করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
“নির্বাচনটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হওয়া বাঞ্ছনীয়। এর মাধ্যমেই নির্বাচনে এক ধরনের ভারসাম্য গড়ে ওঠে”
নির্বাচনকালীন সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন করা ‘কঠিন হবে’ বলে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সোমবার নির্বাচন ভবনে জাতীয় পার্টির একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন।
সিইসি বলেন, “… এটা গ্রাউন্ড রিয়েলিটি যে, সরকারের যদি রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকে তবে নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে এককভাবে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন।”
পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে কিছু অভিযোগ ও কিছু দাবি জানাতে এদিন কমিশনে গিয়েছিল সংসদের প্রধান বিরোধী দলটির প্রতিনিধি দল।
দলটির মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নুর অভিযোগ, সিটি নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে ‘ব্যাপক’, কিন্তু পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। বরিশাল সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তকে প্রত্যাহারের দাবিও জানান তিনি।
সিইসি বলেন, এখন পর্যন্ত সরকারের তরফ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা তারা পাচ্ছেন। আগামীতেও তা থাকবে বলে আশা করছেন তারা।
বরিশালে যা হয়েছে
বরিশালের রিটার্নিং কর্মকর্তা সম্প্রতি বরিশালে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়ে তদন্ত করে কমিশনে প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের অনুরোধ ‘উপেক্ষা করে’ জাতীয় সংসদের উপনেতা বৃহস্পতিবার বরিশালে দলের প্রার্থীর পক্ষে সমাবেশে অংশ নিয়েছেন বলে তথ্য পেয়েছে ইসি। এরপর সেদিনই নির্বাচন কমিশন থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ এলেও প্রতিবেদনে কী আছে, তা প্রকাশ করা হয়নি।
স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর পক্ষে সংসদ সদস্য, মন্ত্রীসহ সরকারি সুবিধাভোগী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্রচারে অংশ নেয়ায় বিধিনিষেধ রয়েছে।
জি এম কাদের সংসদ সদস্য। পাশাপাশি সংসদে উপনেতা হিসেবে তিনি প্রতিমন্ত্রীর সমান মর্যাদা পান। তাই তাকে বরিশালে জাপা প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে অংশ নিতে নিষেধ করেছিল নির্বাচন কমিশন।
জাপার কী বক্তব্য :
বৈঠক শেষে জাপা মহাসচিব অভিযোগ করেন, বরিশালের রিটার্নিং কর্মকর্তার ‘বাজে ব্যবহার’ এবং ‘পক্ষপাতমূলক’ আচরণ করেছেন।
বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন বলে জানান সিইসি।
পাঁচ সিটি নির্বাচন নিয়ে চুন্নু বলেন, “পাঁচ সিটি ভোটে জাপা কিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিল। সেগুলো সুরাহা করার জন্য এসেছি।
“…ভালো নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি মূলত ইসির দায়িত্ব, রাজনৈতিক দলেরও আছে। প্রার্থীদেরও আছে, যারা ক্ষমতায় আছেন তাদেরও আছে। কাজেই সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। আমাদের মনের মধ্যে একটা শঙ্কা, যে নির্বাচনটা ফ্রি, ফেয়ার হয় কি না।”
গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে ভোট বাতিল হলেও অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে ‘দৃশ্যমান’ ব্যবস্থা না নেয়ার বিষয়টি নিয়েও কথা বলে জাপা প্রতিনিধি দল।

বৈঠকের পর জাতীয় পার্টির মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
চুন্ন বলেন, “কমিশনকে আমরা বলেছি যে, শাস্তিমূলক বিষয়গুলো যদি দৃশ্যমান না হয়, জনগণ যদি জানতে না পারে তাহলে তো আস্থাটা আসবে না।”
সাহস দিতে নির্বাচন কমিশনে যাওয়ার কথাও জানান তিনি। বলেন, “ইসির প্রতি আমাদের আস্থা আছে। আছে বলেই তো আসছি তাদের সহযোগিতা করতে এবং সহযোগিতা নিতে।”
জাপা প্রতিনিধি দলের অন্যদের মধ্যে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন ভূইয়া, দপ্তর সম্পাদক-২ এম এ রাজ্জাক খানও উপস্থিত ছিলেন।
সরকারের ওপর চাপ রাখবে ইসি :
সিইসি জাপার সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন যত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে, ততই অধিকতর অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে।
“নির্বাচনটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হওয়া বাঞ্ছনীয়। এর মাধ্যমেই নির্বাচনে এক ধরনের ভারসাম্য গড়ে ওঠে”, বলেন তিনি।
হাবিবুল আউয়াল বলেন, “আমরাও স্বীকার করেছি এবং আমরাও জোর দিয়ে বলেছি যে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে সরকার বিদ্যমান থাকবে, তাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা অবশ্যই প্রয়োজন হবে।”
অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রতিদ্বন্দ্বী দল, সরকারের যে প্রশাসন, পুলিশসহ সবার ‘সহযোগিতা’ পাওয়ার কথাও জানান তিনি।
সিইসি বলেন, “আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর সরকারের তরফ থেকে আজ অবধি কোনো নির্বাচনে হস্তক্ষেপ পাইনি। এখন সকলের দৃষ্টি জাতীয় নির্বাচনের দিকে। প্রশাসনের যে সহায়তা এখন পর্যন্ত যা পেয়েছি উনারা যদি একটা নিউট্রাল অবস্থানে থাকেন তাহলে আমাদের পক্ষে নির্বাচন ভালোভাবে করা সম্ভব হবে।
“ভবিষ্যতে কী হবে আমরা তো নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। সরকারের ওপর আমাদের তরফ থেকে চাপটা থাকবে।”
গণমাধ্যমের বরাতে নির্বাচন প্রভাবিত হলে দেখতে পেলে সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাসও দেন সিইসি।
তিনি বলেন, “নির্বাচন প্রভাবিত হলে, সোশ্যাল মিডিয়া নয়, (মূল ধারার) গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমাদের কাছে তথ্য এলে… নেগেটিভ কোনো বিষয় যদি আমরা দেখি, তাহলে কমিশন যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।”
‘লোম বাছতে গিয়ে কম্বল উজাড়’ বাস্তব নয় :
সিলেট সিটিসহ অনেক এলাকায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিইসি বলেন, “অসংখ্য আচরণবিধি লঙ্ঘন হবে। সবকিছু আমলে নেয়ার মত হবে না। কারণ হচ্ছে লোম বাছতে গিয়ে যদি কম্বল উজাড় করে ফেলি সেটা খুব বাস্তব হবে না।

বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল।
“আমি বলেছি- দিন শেষে মানুষ জানতে চায় যে নির্বাচনটা কেমন হলো।”
সিইসি বলেন, “নির্বাচনটা ভালো হয়েছে কিনা-দৃশ্যমান করতে হবে; দৃশ্যমান না হলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
“আমরা আশাবাদী সরকারের সদিচ্ছা থাকবে এবং জাপা মহাসচিবকে বলেছি প্রতিদ্বন্দ্বিতা আপনাদের করতে হবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভারসাম্য তৈরি করতে হবে। যদি ভালোভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করেন তাহলেও নির্বাচনের শুদ্ধতা বিঘ্নিত হতে পারে।”
সিইসির সঙ্গে নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান, ইসি সচিব জাহাংগীর আলমও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত