বিএনপিকে বাদ দিয়ে এবার সরকার পতনের জন্য নতুন একটি জোট গঠন করা হয়েছে। ৭টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত এই জোটের বেশির ভাগেরই নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন নেই। এই জোটের নাম দেয়া হয়েছে “গণতন্ত্র মঞ্চ।” নেতৃত্বে রয়েছেন আ স ম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, রেজা কিবরিয়া, জোনায়েদ সাকি।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসর“ল হামিদ মিলনায়তনে নতুন এই জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটে।
গণতন্ত্র মঞ্চের দলগুলো হলো- আ স ম রবের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার, নাগরিক ঐক্য, সাইফুল হকের, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জোনায়েদ সাকির গণসংহতি আন্দোলন, রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নূরের গণ অধিকার পরিষদ, রফিকুল ইসলাম বাবলুর ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুমের রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।
সাতটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন আছে আ স ম রবের জেএসডি এবং সাইফুল হকের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির। বাকিগুলোর নিবন্ধন নেই।
জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে গণতন্ত্র মঞ্চের আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। এতে জোটের রূপরেখাও ঘোষণা করা হয়।
এ সময় আ স ম আব্দুর রব বলেন, ‘আমরা প্রকাশ্যে জনতার সামনে কথা বলি। আমরা ষড়যন্ত্র করি না। ষড়যন্ত্র করে সরকার। অবৈধ সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে ষড়যন্ত্র করছে।’ তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র নয়, প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েই সরকারবিরোধী আন্দোলনে যাবে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’। দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সরকারবিরোধী লড়াই-সংগ্রামের বিকল্প নেই। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সবাইকে আগামী দিনের সংগ্রামে অংশ নিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণ-অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরীয়া, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম বাবলু ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম প্রমুখ উপ¯ি’ত ছিলেন।
এ সময় দেশে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদের আগামী ১১ই ঢাকায় বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে নতুন এই জোট। জোটের রূপরেখায় বলা হয় – আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা এবং অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করতে হবে এবং একটি রাজনৈতিক ঐক্যমতের ভিত্তিতে গঠিত অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
আরও বলা হয়, রাষ্ট্রের তিন অঙ্গ- সংসদ, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা ও সরকারের জবাবদিহিতার কার্যকরী ব্যবস্থা গড়ে তোলা। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কার। একইসাথে ফেডারেল পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা বিষয়ে আলোচনার জন্য জাতীয় কমিশন গঠন।’
‘বিচার বিভাগের পরিপূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, নিম্ন আদালতকে নির্বাহী বিভাগ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে তার পরিচালনা ও তদারকি উচ্চ আদালতের হাতে ন্যস্ত করা, প্রধান বিচারপতিসহ বিচারক নিয়োগ ও পদোন্নতির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের’ কথাও বলা হয় জোটের রূপরেখায়।
এছাড়াও, ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা; মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের নীতিতে রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের জীবন ও মর্যাদা নিশ্চিত করা এবং দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থানস ও অর্থনীতির টেকসই প্রকৃতিবান্ধব ভিত্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সকল জনগণের জন্য সমান সুযোগের নিশ্চয়তা তৈরি’ বিষয়েও উল্লেখ করা হয়েছে। এই জোটে বিএনপিকে অর্ন্তভ’ক্ত করা হবে কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন কেউ আসতে চাইলে আমরা আপত্তি জানাব না। কারণ সবার উদ্দেশ্য সরকারের পতন।