ঢাকা   শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১   বিকাল ৩:১৮ 

সর্বশেষ সংবাদ

স্বর্ণ ব্যবসায়ী অনুপ হত্যা রহস্য উদঘাটন করলো পিবিআই, মাটি খুঁড়ে লাশ উদ্ধার, চারজন গ্রেফতার

মুন্সিগঞ্জের স্বর্ণ ব্যবসায়ী অনুপ বাউল হত্যার ৫ মাসের মধ্যেই এর রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। হত্যার সঙ্গে জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের পুরো রহস্য উদঘাটন করে তদন্তকারী সংস্থা হিসেবে দক্ষতার পরিচয় দিলো পিবিআই। মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করা হয়েছে ব্যবসায়ী অনুপ বাউলের মৃতদেহ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ধানমন্ডির পিবিআই সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানান সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার।

তিনি জানান রিপন মণ্ডল নামের একজনকে ১০ লাখ টাকা ধার দেন স্বর্ণ ব্যবসায়ী অনুপ বাউল। রিপন মণ্ডলের মাধ্যমে দেওয়া সেই টাকা নিয়ে সৃষ্টি হয় বিরোধ। বিষয়টি নিয়ে অনুপ বাউলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন নয়ন। পরিকল্পনা অনুযায়ী রিপনসহ চারজন অনুপ বাউলকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। হত্যার পর অনুপ বাউলের মরদেহ মাটি কাটার ভেকু দিয়ে ৪ ফুট গভীর করে বালির নিচে পুঁতে রাখেন রিপন।
রিপন ভেবেছিলেন, মাটির নিচে সব কিছুই চাপা পড়ে গেছে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ঘটনার পাঁচ মাস পর নিখোঁজ স্বর্ণ ব্যবসায়ী অনুপ বাউলের লাশ ১৬ ফুট বালির নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত নয়ন মণ্ডলসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন ভেকুর মালিক রিপন মণ্ডল (২৬), পিযুষ করাতি (২৫) ও দিলীপ চন্দ্র রায়।
তিনি বলেন, পাঁচ মাস আগে গত ৪ জানুয়ারি মুন্সিগঞ্জের সিরাজদী খাঁন এলাকা থেকে শ্বশুরবাড়ি মাদারীপুর যাওয়ার পথে নিখোঁজ হন স্বর্ণ ব্যবসায়ী অনুপ বাউল। এ ঘটনায় পরের দিন নিখোঁজের ছোট ভাই বিপ্লব বাউল একটি জিডি করেন। বিষয়টি চাঞ্চল্যকর হওয়ায় সিরাজদী খাঁন থানা পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, ডিবি ও পিবিআই মুন্সিগঞ্জ জেলা তদন্ত শুরু করে।
পিবিআই মুন্সিগঞ্জ জেলা জিডি তদন্ত করতে গিয়ে ভুক্তভোগীর ছোট ভাই বিপ্লব বাউলকে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি অপহরণ মামলা করার পরামর্শ দেয়। পরে বিপ্লব বাউল বাদী হয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি কেরানীগঞ্জ মডেল থানা অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি অপহরণ মামলা করেন। থানা পুলিশ মামলাটি প্রায় তিন মাস তদন্ত হওয়ার পর রহস্য উদ্ঘাটন না হওয়ায় গত ২১ এপ্রিল পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে মামলাটির তদন্তভার পায় পিবিআই ঢাকা জেলা।
বনজ কুমার মজুমদার আরও বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের এসআই মো. সালে ইমরান প্রথমে হত্যাকাণ্ডে জড়িত রিপন ও ড্রামে করে মরদেহ বহনকারী অটোরিকশাচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তাদের থেকে প্রাপ্ত তথ্য, গোয়েন্দা তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে সন্দেহভাজন হিসেবে রিপনকে চিহ্নিত করা হয়। তারপর অনেকটা নিশ্চিত হয়ে আসামি রিপন, পিযুষ, নয়ন ও দিলীপকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তাদের দেওয়া তথ্যে মরদেহ গুমের স্থান চিহ্নিত করা হয়। গতকাল বুধবার ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (বিসিক) বোয়ালখালী সিরাজদী খাঁন এলাকায় রিপন তার নিজস্ব ভেকু চালিয়ে ১৬ ফুট গভীর বালির নিচ থেকে অনুপ বাউলের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করেন।
পিবিআইপ্রধান বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানান, নিহত অনুপ বাউলের স্বর্ণ ব্যবসার সহযোগী নয়ন মণ্ডল। তাদের দুজনের মধ্যে পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধ ছিল। এই বিষয়কে কেন্দ্র করে নয়ন মণ্ডল স্বর্ণ ব্যবসায়ী অনুপ বাউলকে খুনের পরিকল্পনা করেন। নয়ন তার চাচাতো ভাই রিপন, পিযুষ ও দিলীপের সাহায্য নিয়ে অনুপ বাউলকে হত্যা করেন।
তিনি আরও বলেন, গত ৪ জানুয়ারি সকালে পাওনা টাকা দেওয়া ও মাদারীপুরে স্বর্ণের অর্ডার পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে অনুপ বাউলকে জয়েনপুরে ডেকে নিয়ে আসেন নয়ন মণ্ডল। জয়েনপুরে রিপন মণ্ডলের গ্যারেজে আগে থেকে অপেক্ষায় থাকা রিপন মণ্ডল, পিযুষ ও দিলীপের সঙ্গে নয়ন ও অনুপ বাউল একত্রিত হন। ওই সময় পাওনা টাকা নিয়ে ভুক্তভোগী অনুপ বাউলের সঙ্গে তাদের ঝগড়া শুরু হয়। একপর্যায়ে চারজন মিলে অনুপ বাউলকে গ্যারেজের খাটের মধ্যে ফেলে কাপড় দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। হত্যার পর লাশ একটি ড্রামে ভরে রাখেন। পরে বিকেল ৩টায় আসামিরা অটোরিকশা করে লাশ ভর্তি ড্রামটি মুন্সিগঞ্জের সিরাজদী খান থানার বোয়ালখালী বিসিক এলাকায় বালুর মাঠের কাছে নিয়ে যান। অটোরিকশাচালক চলে গেলে আসামিরা ড্রামটিকে বালুর মাঠের ভেতরে নিয়ে যান। তারপর কাদাযুক্ত একটি স্থানে লাশ পুঁতে ফেলে আসামিরা চলে যান।
লাশ পুঁতে রাখার পর নয়ন তার প্রতিবেশী পিংকুর বাসায় গিয়ে গোসল করেন। যেহেতু নিহত নয়নকে নিয়ে অনুপের মাদারীপুর যাওয়ার কথা ছিল। তাই নিহতের লোকজন নয়নকে অনুপের বিষয়ে বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সাক্ষাতের বিষয়টি অস্বীকার করে নিখোঁজ অনুপকে খোঁজাখুঁজিতে অংশ নেন নয়ন। বিভিন্ন সংস্থা নয়নকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি হত্যার বিষয়টি অস্বীকার করেন বলেও জানান পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত