পিকে হালদার কাÐে তোলপাড় চলছে বাংলাদেশে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আটক দেশের আর্থিক খাতের অন্যতম বড় কেলেঙ্কারির খলনায়ক প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারকে তিন দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন জানানো হলে আদালত তা মঞ্জুর করে। শনিবার উত্তর চব্বিশ পরগনার একটি আদালতে তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার এ আবেদন জানানো হয়েছিল। রোববার এ আদেশ দেয়া হয়।
এর আগে বাংলাদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়া পি কে হালদার ও তাঁর কিছু সহযোগীর পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সম্পত্তিতে অভিযান চালায় ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। পি কে হালদারের অন্য সহযোগীদের মধ্যে আছেন প্রীতিশ কুমার হালদার, প্রাণেশ কুমার হালদারসহ আরও কয়েকজন। শনিবার পি কে হালদারকে কলকাতা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্রে জানা গেছে, পি কে হালদারের দখল করা চারটি প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও রিলায়েন্স লিজিং (বর্তমান নাম আভিভা ফাইন্যান্স) থেকে তিনি ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করেছেন।
দুদক পি কে হালদারের প্রায় এক হাজার কোটি টাকার মূল্যের জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাটসহ অন্যান্য স্থাবর সম্পদ ক্রোক করেছে। এ ছাড়া তাঁর ও তাঁর অর্থ কেলেঙ্কারির সহযোগীদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৩৪টি মামলা করেছে দুদক। এসব মামলায় পি কে হালদারসহ আসামি ৮০ জন। এর মধ্যে ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁরা বর্তমানে জেলে।
এ অর্থ কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে এ পর্যন্ত আলোচিত পি কে হালদারের ৮৩ সহযোগীর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৩৩ জনের সম্পদের হিসাব বিবরণী চেয়ে নোটিশ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে তিনজনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। পি কে হালদারের ৬৪ সহযোগীর বিদেশ ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
ভারত জানালে পি কে হালদারের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
বাংলাদেশে আর্থিক খাতে আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) গ্রেফতার করার বিষয়ে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। এ ব্যাপারে ভারত জানালেই তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সেমিনারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ কথা বলেন। ‘শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: ইতিহাসের পুনর্র্নিমাণ’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পি কে হালদার বাংলাদেশের ওয়ান্টেড। বাংলাদেশ সরকার ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।
শনিবার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে পি কে হালদারের প্রাসাদসম বাড়িসহ অনেক সম্পদের সন্ধান পায় ইডি। সংস্থাটি পি কে হালদার ও তাঁর সহযোগীদের সম্পদের সন্ধানে গত দুই দিনে অন্তত ১০টি স্থানে অভিযান চালিয়েছে। প্রধানত আর্থিক কেলেঙ্কারি, বেআইনিভাবে ভারতে অর্থ পাঠানো, বিদেশে অর্থ পাচার ও আইনবহির্ভূত সম্পত্তির বিষয়ে তদন্ত করছে ইডি। অবশ্য এ পর্যন্ত কতগুলো বাড়ি, জমি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের হদিস পাওয়া গেছে, তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য জানা যায়নি।
এনআরবি গেøাবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পি কে হালদার বাংলাদেশে আর্থিক খাতের শীর্ষ দখলদার ও খেলাপিদের একজন। ২০১৯ সালে তিনি বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে যান, পরে কানাডায় পাড়ি জমান।