বাজারমূল্যের চেয়ে দুই থেকে ২৫ গুণ বেশি দামে মালামাল সরবরাহ; বিক্রীত মালের দামের চেয়ে ৫৮ গুণ ব্যয়ে মেরামত কিংবা একদিনের ব্যবধানে আট দেশ থেকে মালামাল সরবরাহের মতো বহু ‘রেকর্ড’ গড়েছে স্বাস্থ্যের ‘মিঠু সিন্ডিকেট’। দেশি যন্ত্রে বিদেশি স্টিকার লাগিয়ে গছিয়ে দেওয়া; নামে-বেনামে ৬১টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং মালামাল সরবরাহ না করেই শত শত কোটি টাকার বিল উত্তোলনের মতো কাজও হরহামেশাই করেছেন এ খাতের বিতর্কিত ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু। তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা বছরের পর বছর ধরে দেশের স্বাস্থ্য খাত জিম্মি করে রেখেছে।
পানামা পেপার্স কেলেংকারিতে নাম উঠেছে মিঠুর। এমনকি ১৫০০ কোটি টাকার ঋণ খেলাপিও এই মিঠু। তার বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগও আছে। এমনকি তার সঙ্গে সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ঘনিষ্ঠতার প্রমাণও পাওয়া গেছে। সম্প্রতি একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে মিঠুর অজানা অনেক দুর্নীতি উঠে এসেছে। তদন্তকারী সংস্থাগুলো সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের একজন সৎ, দক্ষ দেশপ্রেমিক বিচারপতিকে প্রধান করে দুদকসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা ও তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠনের সুপারিশ করেছে।
জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট এবং বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে দেওয়া তথ্য বলছে, স্বাস্থ্য খাতের ঠিকাদার মিঠুুর জন্ম ১৯৭০ সালে ১ জুন। বাবা মৃত কাওসার উদ্দিন আহমেদ, মা উম্মে কুলসুম ও স্ত্রী নিশাত ফারজানা চৌধুরী। মিঠুর জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ২৬৯৪৮১১০১৮৬৪৬, পাসপোর্ট নম্বর বিএইচ-০৮০৯৮৩৪, ৮৮০৭৬৫০৫৭ এবং ইই-০৮১১০০৫। স্থায়ী ঠিকানা রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষিটারী ইউনিয়নের মহিপুর গ্রাম। রংপুর শহরের (বাসা নম্বর ৪৬, রোড-১০) বুড়িরহাট রোড চিকনি ভাটায়। অন্যদিকে বর্তমান ঠিকানা হিসাবে রয়েছে গুলশান, বনানী, এলিফেন্টরোড, মালিবাগ, ডিওএইচএস এবং চট্টগ্রামের আগ্রবাদের বিভিন্ন ঠিকানার ৭টি বাসার তথ্য।
মেরামত ব্যয় ৫৮ গুণ : প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের ঠিকাদারির ইতিহাসে মিঠুই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি সরবরাহকৃত যন্ত্রপাতির দামের চেয়ে বেশি দামে সেগুলোর মেরামত সেবা দিয়েছেন। দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একটি ‘বেবি স্কেলার’ সরবরাহ করেন সাড়ে ৭ হাজার টাকায়। এটি মেরামত বাবদ বিল উত্তোলন করেছেন ৪ লাখ ১১ হাজার ৯০০ টাকা। অর্থাৎ পণ্যের দামের তুলনায় মেরমাত খরচ প্রায় ৫৮ গুণ বেশি। একইভাবে ৫ লাখ ৮৪ হাজার টাকায় একটি কার্ডিয়াক মনিটর সরবরাহ করে মেরামত বাবদ বিল উত্তোলন করেছেন ৬ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা। একটি ফটোথেরাপি মেশিন সরবরাহ করেছেনে ৬ লাখ ৫৯ হাজার টাকায়, যার মেরামত ব্যয় উত্তোলন করেছেন ৬ লাখ ৪০০ টাকা।
২০১৩-১৪ অর্থবছরের একটি দরপত্রে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রংপুর সিভিল সার্জন অফিসের অধীনে ৭টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভারী যন্ত্রপাতি সরবরাহের জন্য ২০১৬ সালের ২৯ মে কার্যদেশ পান। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘কিউ-সোর্স’, যার স্বত্বাধিকারী হিসাবে তার ভাই মোকসেদুলের নাম দেওয়া রয়েছে। সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলোÑ ২৯ মে কার্যাদেশ পেয়ে পরের দিনই (৩০ মে) জার্মানি, ব্রাজিল, কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, তাইওয়ান, পোল্যান্ড, চীন ও জাপানে তৈরি হওয়া ২৪ কোটি ৮৮ লাখ ৫৪ হাজার ৯৯০ টাকার মালামাল সরবরাহ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাস্থ্য খাতের সবচেয়ে আলোচিত ঠিকাদার মিঠু ৬১টি পৃথক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সিন্ডিকেট করে সব ধরনের কেনাকাটার নিয়ন্ত্রণ করেন। এর মধ্যে স্বত্বাধিকারী হিসেবে মিঠুর নিজ নামে রয়েছে আটটি প্রতিষ্ঠান। তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে লেক্সিকোন মার্চেন্ডাইজ, টেকনো ট্রেড, লেক্সিকোন আইটি প্রাইভেট লিমিটেড, মেসার্স টেকনো ট্রেড, মেসার্স টেকনো ফিশিং, মেসার্স প্রি-আক্সও, সিআর মার্চেন্ডাইজ, লেক্সিকোন হাসপিটালাইট, নর্থ এগ লিমিটেড, নর্থবেঙ্গল পোল্ট্রি ফার্ম; অ্যাপল সিরামিক লিমিটেড, মেড ইকুইপ ইঞ্জিরিয়ারিং ইনভেনচার, টেকনোক্রেট এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৭ সালে নিবন্ধনকৃত এম গেটওয়ে করপোরেশন। এ ছাড়া বড় ভাই মো. মোকসেদুল ইসলামের নামে প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৫টি। স্ত্রী নিশাত ফারজানার নামে ৩টি। এ ছাড়া অন্যান্য ভাই, ভাবি, ভাতিজা, ভাগিনা, বন্ধু ও তাদের স্ত্রীর নামে প্রতিষ্ঠান খুলে বিশাল রাজত্ব তৈরি করেন মিঠু।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুর অন্যতম সহযোগী তার ভাই মোকছেদুল ইসলাম ও ভাগ্নে বেনজীর আহমেদ। এ তিনজন এতটাই অপ্রতিরোধ্য যে, তার পরিধি দেশের সীমানা পেরিয়ে গেছে। এমনকি পানামা পেপার্স কেলেংকারিতেও নাম উঠেছে। স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে এরই মধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১২ সালে মিঠুর বিরুদ্ধে রাজধানীর বনানী থানায় দুদক একটি মামলা (নন সাবমিশন) করে। একই সঙ্গে তার ভাই মোকছেদুল ইসলামের নামে দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কেনাকাটায় অনিয়মের অভিযোগে একটি মামলা হয়।
সম্প্রতি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মিঠুর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা ও অনুসন্ধান শুরু হয়। কিন্তু পুনঃতদন্তে মিঠুর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি মর্মে দুদক অভিযোগ সমাপ্তি করে বলে জানা যায়। ওই নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, অন্তত ১৭টি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে মালামাল সরবরাহ না করে এবং বাজার দরের চেয়ে বহুগুণ বেশি দরে বিদেশি মালামালের পরিবর্তে স্থানীয় নিম্নমানের মালামাল সরবরাহ করে তিনি সরকারের শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। দুদকের উপপরিচালক মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারি ও সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সিরাজুল হক অনুসন্ধান ও তদন্ত পরিচালনা করেন। মিঠুর নিয়ন্ত্রণাধীন একাধিক কোম্পানির মাধ্যমে দুর্নীতির অভিযোগে ১০ থেকে ১২টি নথি খোলা হয়। সেগুলো অনুসন্ধানে একাধিক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে একটি নথির মাধ্যমে সব অভিযোগ সংযুক্ত করে সিরাজুল হক মাত্র একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমেই এসব নিষ্পত্তি করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের উপপরিচালক মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারি শনিবার আমাদের সময়কে বলেন, স্বাস্থ্যের একটি তদন্ত তার অধীনে ছিল তবে সেটি মিঠুর কিনা তার মনে নেই। বিষয়টি অনেক আগের। পরবর্তী সময়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন হওয়ায় তিনি এ বিষয়ে কোনো খবর রাখেননি।
লুটপাটের কিছু চিত্র : প্রতিবেদনে মিঠু সিন্ডিকেটের ঠিকাদারির নামে সরকারি অর্থ আত্মসাতের কিছু ঘটনা তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায়, মুগদা জেনারেল হাসপাতালে সিটিস্ক্যান মেশিন সরবরাহ করা হয় ১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকায়, যার বাজারমূল্য ৫ কোটি ৭৯ লাখ ৯১ হাজার টাকা। অর্থাৎ একটি সিটিস্ক্যান মেশিনে অতিরিক্ত মূল্য নেওয়া হয়েছে ৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এভাবে ৩১ লাখ ৬১ হাজার টাকার এক্সরে মেশিন সরবরাহ করেন ৩ কোটি ১৪ লাখ টাকায়, এক কোটি ৩৭ লাখ টাকার ভিডিও এন্ডোসকপি সরবরাহ করে ৪ কোটি টাকায়, দেড় লাখ টাকার ওটি লাইট সরবরাহ করেন ৫১ লাখ টাকায়। এভাবে মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, রংপুর সিভিল সার্জন অফিস, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ, মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে ২৬ কোটি ৫২ লাখ ১৫ হাজার টাকার মালামাল সরবরাহ করে ১৭ কোটি ৫৩ লাখ ৬৪ হাজার ৪৭০ টাকা আত্মসাৎ করেন। মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ২০১৪-১৭ অর্থবছরে মিঠুুর স্ত্রী নিশাত ফারজানার মালিকানাধীন ফিউচার ট্রেডকে ৮৬ কোটি ২৯ লাখ ৮২ হাজার ১৫৫ টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়, যেখানে প্রায় ৫৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়। মিঠুর ভাগ্নে মো. ফাহাদ মাহমুদের মালিকানাধীন অরডেন্ট সিস্টেমকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৬ কোটি ৮৯ লাখ ৪০ হাজার টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়। সেখানে আত্মসাৎ হয় ৪ কোটি টাকা। মিঠুর ভাবি সাবিহাতুল জান্নাতের মালিকানাধীন জিএসই অ্যান্ড ট্রেডিংকে ২০১৪-১৬ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩২ কোটি ৬১ লাখ ৫২ হাজার ১০০ টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়। যেখান থেকে প্রায় ২০ কোটি আত্মসাৎ করা হয়। রংপুর সিভিল সার্জন অফিসের অধীনে মিঠুর ভাই মো. মোকসেদুল ইসলামের মালিকানাধীন কিউ-সোর্সকে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেওয়া হয় ২৯ কোটি ৯৮ লাখ ২২ হাজার ৯৫৪ টাকার কার্যাদেশ। এর মধ্যে ২০ কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়। একই প্রতিষ্ঠানকে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৮ কোটি ৩৯ লাখ ৮১ হাজার টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়। সেখানেও আত্মসাৎ হয় ১২ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ওই প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ২৭ কোটি ৬৪ লাখ ৬০ হাজার ৭০০ টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এর মধ্যে আত্মসাৎ হয় প্রায় ১৮ কোটি টাকা। ২০১৪-১৯ অর্থবছরে এ সিন্ডিকেট কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি) থেকে ৭৩ কোটি ৭৪ লাখ ৩৭ হাজার টাকার কার্যাদেশ পায়, যার মধ্যে ৪২ কোটি ২২ লাখ ৮৯ হাজার টাকার আত্মসাৎ হয়েছে। এ ছাড়া এ সময়ে মিঠু সিন্ডকেটের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভুয়া বিল ভাউচার করে মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর এবং এজি অফিস সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশে আরও ৩০০ কোটি টাকা উত্তোলন করে।
ঋণ খোলাপি মিঠু : ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগও আছে। অর্থ মন্ত্রণালয় প্রকাশিত ঋণখোলাপিদের তালিকায় রয়েছে মিঠুর নাম। ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ, থ্রি আই মার্চেন্ডাইস, লেক্সিকন মার্চেন্ডাইজার, অ্যাপল সিরামিক লিমিটেড, অর্ডেন্ট সিস্টেম, হেভ ইন্টারন্যাশনাল নর্থ বেঙ্গল পোল্ট্রিসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এবং স্টারলিং ডায়াগনস্টিক লিমিটেড (নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র) অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৩৫ কোটি টাকাসহ আরব-বাংলাদেশ ব্যাংকে তার খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা।
এসব বিষয়ে জানতে মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুর তিনটি মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। তবে সব নম্বরই বন্ধ পাওয়া গেছে। এমনকি তার অফিসের নম্বরে ফোন দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, তিনি বর্তমানে সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।
দুর্নীতির বিষয়ে কথা হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, এসব অনিয়ম-দুর্নীতি আগের। তিনি তখন অধিদপ্তরের কোনো দায়িত্বে ছিলেন না। তবে তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর কেনাকাটায় স্বচ্ছতা আনতে প্রয়োজনীয় চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
আইনি ব্যবস্থার সুপারিশ : রাষ্ট্রের দুটি সংস্থা এ ঠিকাদারের বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত করে। তদন্ত শেষে তারা মিঠুর অবৈধ সম্পদ ও কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে বেশকিছু সাপারিশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের একজন সৎ, দক্ষ দেশপ্রেমিক বিচারপতিকে প্রধান করে দুদকসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সমন্বয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। সেই কমিটির মাধ্যমে মিঠু সিন্ডিকেটসহ অন্যদের বিরুদ্ধ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। মিঠূু সিন্ডকেটের সব প্রতিষ্ঠান কালো তালিকাভুক্ত করতে হবে। পাশপাশি ওই সিন্ডিকেটের সহযোগী বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে কর্মরত প্রশাসনিক কর্মকর্তা/সচিব ও হিসাবরক্ষকদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির বিষয়ে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
অনুসন্ধানকালে মিঠুর নিজ নামে, স্ত্রী, ভাই ভাগ্নে ও পরিবারের সদস্যদের নামে বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বিপুল অঙ্কের টাকার স্থাবর সম্পত্তির তথ্য পায় এ গোয়েন্দা সংস্থা। এ ক্ষেত্রে সুপারিশ করা হয়েছে, মিঠু ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদের সঠিক তথ্য উদঘাটন করে অভিযোগটি পুনরুজ্জীবিত অথবা পুনরায় সম্পদের অনুসন্ধান করে সম্পদ বিবরণীর নোটিশ জারি করে প্রাপ্ত অবৈধ স্থাবর/অস্থাবর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা। মিঠু সিন্ডিকেটের প্রতিষ্ঠানগুলো গত ১০ বছরে যেসব হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ, সিভিল সার্জন কার্যালয়ে যেসব চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে, তার তথ্য সংগ্রহ করে প্রকৃত মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে বিপুল অর্থ আত্মসাতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। একই সঙ্গে মিঠুর পৃষ্ঠপোষক এসব কর্মকর্তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশের স্বাস্থ্য খাতে মিঠু সিন্ডিকেটকে সরকারি অর্থ আত্মসাতের সহায়তায় রাষ্ট্রের স্বাধীন একটি সংস্থার কর্মকর্তাদের ইন্ধন রয়েছে। এসব কর্মকর্তাদের কর ফাইল তলব করে পুনঃতদন্তের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রাক্তন সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, বিচারপতিকে দিয়ে তদন্ত করানোর সুযোগ সীমিত থাকায় দুদককেই বলতে হবে, তারা যেন নিরপেক্ষভাবে তদন্ত পরিচালনা করে।
এ বিষয়ে দুদকের প্রাক্তন মহাপরিচালক (তদন্ত) মাইদুল ইসলাম বলেন, বিচার শেষ হোক বা না হোক পুনঃতদন্ত করার সুযোগ রয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হলে আদালত পুনঃতদন্ত চাইতে পারে। আবার দুদক চাইলেও পুনঃতদন্ত করা সম্ভব। দুদক আইনের ১৯-এর বিধিতে এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, অনুসন্ধান নথিভুক্ত হলেও পুনঃতদন্ত করা সম্ভব।( সৌজন্যে -আমাদের সময়,প্রতিবেদক রাশেদ রাব্বি)।