ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১   সকাল ৬:২২ 

সর্বশেষ সংবাদ

সুপ্রিমকোর্টের ভবন উদ্বোধনে যা বললেন আইনমন্ত্রী

স্বাধীনতার মাসের শেষ দিনে বক্তব্যের প্রথমেই আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, সোনার বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু শেখ রাসেলসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল শাহাদাতবরণকারিকে। স্মরণ করছি ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নৃশংসভাবে হত্যাকৃত জাতীয় চার নেতাকে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী ৩০ লাখ বীর শহিদকে। আরো স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধকালীন নির্যাতিত দুই লক্ষ মা-বোনকে। আমি সকলের আত্মার শান্তি কামনা করছি। বঙ্গবন্ধুর তথা বাঙালি জাতির মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম লক্ষ্য ছিলো বৈষম্যহীন ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতাকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য হতে মুক্তি এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সোপান হিসেবে দেখতে চাইলে সর্বক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার বিকল্প নাই। সর্বক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব রাষ্ট্রের সকল অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের হলেও, বিচার বিভাগ এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। সে কারণেই নব্য স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান কার্যকর হওয়ার পর কাল বিলম্ব না করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার বাতিঘর স্বরূপ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠা করেন এবং এ কোর্টকে তিনি সাংবিধানিকভাবে বিশেষ মর্যাদার আসনে স্থান দেন। বাংলাদেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার যে অনন্য বাতিঘর প্রতিষ্ঠা করে গেছেন, তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সুহৃদ আন্তরিকতায় এবং সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় বিচারপতি, প্রশাসন ও আইনজীবীগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিকশিত হয়ে আজ শক্তিশালী ও সুমহান প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিচ্ছে ন্যায়বিচারের বাণী। অবদান রাখছে সামাজিক শান্তি, সমতা ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠায়। কোন প্রতিষ্ঠানের উন্নতি ও সাফল্য নির্ভর করে মূলত সেই প্রতিষ্ঠানের সততা, কর্মদক্ষতা, সক্ষমতা এবং সেবার মানের ওপর। এই বাস্তবতার নিরিখেই সরকার বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টসহ গোটা বিচার বিভাগের কর্মদক্ষতা, সক্ষমতা এবং বিচার সেবার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বাস্তবমুখী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ও করে যাচ্ছে। যার কিছু উদাহরণ তুলে না ধরলে আমার বক্তব্য অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে। আমরা যদি সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠার একেবারে গোড়ার দিকে ফিরে যাই তাহলে দেখতে পাই, ১৯৭২ সালে হাইকোর্ট বিভাগে মাত্র ১০ জন এবং আপিল বিভাগে ৩ জন বিচারক নিয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট যাত্রা শুরু করেছিল। গর্বের সাথে বলতে হয় ১৯৭২ সালের ১৩ জন বিচারকের বিপরীতে বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের ৯৪ জন বিচারক নির্ভয়ে ও স্বাধীনভাবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। অবকাঠামোর ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই, ২০০১ সালে এনেক্স ভবন উদ্বোধন করার পূর্বে সুপ্রিম কোর্টে মাত্র ২৭টি এজলাস কক্ষের ব্যবস্থা ছিল এবং তা ছিল সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনে। কিন্তু ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবার সরকার গঠন করলে তাঁর পিতার হাতে গড়া এ প্রতিষ্ঠানে তিনি ৩৫টি এজলাসের সংস্থান সম্বলিত এনেক্স ভবন নির্মাণ করে দেন এবং ২০০১ সালের জানুয়ারি মাসে তা স্বয়ং উদ্বোধন করেন। আজ ‘বিজয় – ৭১’ নামে যে ভবন উদ্বোধন করা হচ্ছে সেখানেও অতিরিক্ত ৩২টি এজলাসের ব্যবস্থা সহ বিচারপতিগণের জন্য ৫৬টি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত চেম্বারের সংস্থান রাখা হয়েছে। এর বাইরে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিগণের আবাসন সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে সরকার ২০১৭ সালে ১০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকার কাইরাইলে ২০ তলা বিশিষ্ট বিচারপতি ভবন নির্মাণ করে দেয়, যেখানে রয়েছে ৩৫০০ বর্গফুটের ৭৬টি ফ্লাট। এভবন নির্মাণের ফলে বিচারপতিগণের দীর্ঘদিনের আবাসন সমস্যার নিরসন হয়। “আদালত কর্তৃক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০’ প্রণয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে ভার্চুয়াল কোর্ট প্রবর্তনও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তার ফসল। করোনার অতিমারির সেই মহাআতঙ্কের সময়ে প্রধানমন্ত্রীর উৎসাহ ও দিক নির্দেশনা, সুপ্রিম কোর্টের নিরলস পরিশ্রম, আইনজীবীগণের সহযোগিতা এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে আমরা খুবই তাড়াতাড়ি ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করতে পেরেছিলাম যা বিশ্বের অনেক বড়বড় ও উন্নত দেশ পারেনি। সেই লকডাউনের সময়ে ভার্চুয়াল কোর্টে জামিন শুনানির ব্যবস্থা করার ফলেই কিন্তু জেলখানায় বন্দী আসামীদের অতিরিক্ত চাপ এবং করোনার ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হয়েছে। আশার কথা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে সুপ্রিম কোর্ট এখন আদালত পরিচালনার সক্ষমতা অর্জন করেছে। সুপ্রিম কোর্টের অনেক কাজই এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পাদন করা সম্ভব হচ্ছে। তদুপরি গোটা বিচার বিভাগকে ডিজিটাইজড করার জন্য আমরা ২ হাজার ২০০ কোটি টাকার ই-জুডিসিয়ারি প্রকল্প গ্রহণ করতে যাচ্ছি। আমরা আশা করছি, এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পুরো বিচার বিভাগের কর্মদক্ষতা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। মানসম্পন্ন ন্যায়বিচার প্রদানের ক্ষেত্রে বিচারকগণের নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ও আর্থিক স্বচ্ছলতা একটি নিয়ামক ভূমিকা পালন করে থাকে। সেজন্য মাননীয় বিচারপতিগণের আর্থিক সুবিধাদি বৃদ্ধিসহ তাঁদের নিরাপত্তা ও বিচারিক কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সরকার সহায়ক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। ফলে বিচারপতিগণ নির্ভয়ে ও স্বাধীনভাবে ন্যায়বিচার প্রদান করে যাচ্ছেন; বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, জেলহত্যা মামলা, ১৯৭১-এর মানবতা বিরোধী অপরাধ ও ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল মামলার বিচার করে দেশ থেকে বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর করতে সক্ষম হয়েছেন; পঞ্চম ও সপ্তম সংবিধান সংশোধন আইন বাতিলের সাহস দেখিয়েছেন। বিজ্ঞ আইনজীবীগণ বিচার বিভাগের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাঁদেরকে বিচ্ছিন্ন রেখে বা পিছনে ফেলে বিচার বিভাগের পুরোপুরি উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব নয়। সেকারণে আইনজীবীগণের পেশাগত মান উন্নয়নে সরকার আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। ১১৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫ তলা বিশিষ্ট বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ভবন নির্মাণ করে দিয়েছে। অধিকন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসে বর্তমান সরকারই প্রথম আইনজীবীগণের জন্য ২০ কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছে। এসব যুগান্তকারী ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে বর্তমানে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের কর্মদক্ষতা, সক্ষমতা ও সেবার মান অতীতের যেকোন সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেজন্য আমরা এখন আশাবাদী যে সুপ্রিম কোর্টে বিচারপ্রার্থী জনগণ দ্রুত ন্যায়বিচার পাবেন এবং এর মাধ্যমে সেখানে মামলা জট কমে আসবে। আমরা এটাও আশ্বস্ত করতে পারি যে, বঙ্গবন্ধুর ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালনকারী এবং গণমানুষের বিশ্বাস, আস্থা ও নির্ভরশীলতার আশ্রয়স্থল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও উন্নয়নের যে ধারা চলমান রয়েছে তা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত