দিন সাতেকের নিভৃতবাস। ওমিক্রন কাঁটা মোটামুটি এর মধ্যেই দূর হবে। ডাক্তারবাবুরা সেরকমই বলছেন। তবে ওমিক্রন গেলেও শরীরে থেকে যাচ্ছে মারাত্মক দুর্বলতা। তাই নিভৃতবাস শেষে টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও বেশ কিছু সতর্কতা জরুরি। শরীর তরতাজা রাখতে কি গাদাগাদা মাল্টিভিটামিনস খাবেন, নাকি উপায় অন্য কিছু! আসুন শুনে নেয়া যাক।
করোনার নয়া স্ট্রেন ওমিক্রন প্রায় সবাইকেই কাবু করছে। সংক্রমণ যত বাড়ছে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে উদ্বেগও। তবে সুখের বিষয় এই যে, পাল্টা মাত দিয়ে ওমিক্রনকেও কাবু করছে মানুষ। অর্থাত, ক্রমশ ওমিক্রন কাঁটা সরিয়ে খুলে যাচ্ছে সুস্থতার পথ।
তবে সুস্থ হলেও, রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও, এর জেরে কিছু ভোগান্তি তো থেকেই যাচ্ছে। তার মধ্যে সবথেকে স্পষ্ট যা, তা হল ভীষণ শারীরিক দুর্বলতা। এতটাই দুর্বলতা গ্রাস করছে শরীরকে যে, তা যেন আলাদা একটা অসুখের মতোই। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বরং কয়েকটা নিয়ম মানলেই তা কাটিয়ে ওঠা যাবে।
প্রথমত, করোনামুক্তির পরও খাওয়া-দাওয়ার উপর নজর দিন। স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে তো বটেই। তবে সব হুড়মুড়িয়ে খাওয়া একেবারেই ঠিক নয়। কেননা হজমের দিকটিও খেয়াল রাখতে হবে। তাই খিদে চনমনে হচ্ছে কিনা সেটা আগে খেয়াল করুন। খিদে বুঝে অল্প অল্প করে খাবারের পরিমাণ বাড়ান। হালকা খাবার, বাড়িতে রান্না করা ঘরোয়া খাবার, যেগুলোয় পর্যাপ্ত ফ্যাটের জোগান আছে, সেগুলো খেতে শুরু করুন। অল্প অল্প করে এই ধরনের খাবার খাওয়ার ফলে হজমক্রিয়া ক্রমশ স্বাভাবিক হবে। তাতে দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা যাবে দ্রুত। না হয় পুষ্টির খোঁজে একগাদা খাবার একসঙ্গে খেয়ে ফেললে পুষ্টি হোক আর না হোক, হজমের গোলমাল দেখা দিতে পারে। তাতে কাজের কাজ কিছুই হবে না। হিতে বিপরীত হবে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এই সময় ভিটামিন সি বা সাইট্রাস-যুক্ত ফল খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অনেকেই। আমরা তা খাচ্ছিও, এই সময়টায় এই ধরনের ফল খাওয় জরুরি । তবে পরিপাক ক্রিয়া স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই ধরনের ফলও অতিরিক্ত না খাওয়াই ভাল। বেশি ফল খেলে রাতারাতি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটা বেড়ে যাবে, তা তো নয়। তাই এগুলোও খেতে হবে মাত্রা রেখে। মনে রাখতে হবে, দুর্বলতা কাটানোর জন্য তাড়াহুড়োয় একাধিক জিনিস খাওয়া বা বেশি পরিমাণে খাওয়ায় ক্ষতিই হতে পারে। ধীরে ধীরে শরীরকে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে, এমনটাই পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
আবার দুর্বলতার কারণে অনেকেই ব্যায়াম করছেন না। করোনা থেকে সেরে ওঠার পর খুব ভারী ব্যয়াম না হলেও হালকা ব্যায়াম করা কিন্তু খুব জরুরি। যোগ ও প্রাণায়াম এই সময় ভীষণ উপকারী। শরীরের পাশাপাশি কোভিড আমাদের মনের উপরও প্রভাব ফেলে। তাই করোনামুক্ত হলেও মনের যত্ন নিতে হবে। তার জন্য দরকার পর্যাপ্ত ঘুম ও মেডিটেশন। ওমিক্রনের সরাসরি প্রভাব দিন সাতেকের চেষ্টায় কাটিয়ে ওঠা গেলেও, করোনা সেরে যাবার পর কিন্তু আরও একটু মনযোগ দিতে হবে শরীরের প্রতি। নইলে শরীরে লং কোভিড বাসা বাঁধার সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই ধীরে ধীরে শরীরের অস্বাভাবিতা কাটিয়ে উঠতে করোনামুক্তির পরেও আরও কিছুদিন এই নিয়মগুলো মেনে চলাই ভাল। সপ্লিমেন্ট বা নানারকম এনার্জিবর্ধকের দিকে বেশি না ঝুঁকে শরীরকে স্বাভাবিক করতে তিনটি জিনিসের উপরই জোর দেয়া দরকারি- পরিমিত খাওয়া-দাওয়া, হলাকা ব্যায়াম আর পর্যাপ্ত ঘুম বা মনকে শান্ত রাখা। ব্য়স , এতেই ক্রমে চাঙ্গা হয়ে উঠবেন আপনি।
রোগ থেকে সেরে ওঠার জন্য ওষুধ যেমন দরকার, তেমনই দরকার পথ্য। অর্থাৎ প্রয়োজনীয় যত্ন আত্তি। কিন্তু মারণ ভাইরাস করোনা সেই পথেই কাঁটা তুলেছে। এ রোগ থেকে আত্মরক্ষার প্রথম শর্তই হল সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। তাই রোগ চিহ্নিত হলেই রোগীকে যেতে হচ্ছে আইসোলেশনে। এদিকে খাবার কিংবা ওষুধ দেয়ার প্রয়োজনে কাউকে না কাউকে তাঁর কাছে যেতে হতেই পারে। আর সেই সুযোগে ভাইরাস কিন্তু থাবা বসাতে পারে সেই মানুষটির শরীরেও। তাই প্রয়োজন বাড়তি সতর্কতা গ্রহণ করা। কীভাবে তা সম্ভব?
প্রথমত, রোগীর পরিচর্যা করলেও যথাসম্ভব দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করুন। তাঁর ব্যবহার করা কোনও জিনিস, যেমন থালাবাসন বা তোয়ালে, রুমাল ইত্যাদি অন্য কেউ ব্যবহার করবেন না। কেবল মানুষে মানুষে নয়, এই সময় ব্যবহৃত জিনিসপত্রের মধ্যেও সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং মেনে চলা জরুরি। রোগী যা কিছু ডিসপোজেবল জিনিস ব্যবহার করছেন, যেমন ওষুধের ফয়েল, সিরিঞ্জ, টিস্যু, মাস্ক, এ ছাড়া জলের বোতল, খাবারের উচ্ছিষ্ট, সেগুলি পরিষ্কার করার সময়েও অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করুন। গ্লাভস পরে জড়ো করুন সবকিছু, এবং প্যাকেটে ভরে নির্দিষ্ট জায়গাতেই ফেলুন, যাতে তার থেকে সংক্রমণ না ছড়াতে পারে। এই কাজটি করার সময় মাস্ক পরতে ভুলবেন না।
দ্বিতীয়ত, করোনা ভাইরাসকে রুখতে মাস্কের বিকল্প যে নেই, সে কথা এতদিনে সকলেরই জানা। রোগীর পরিচর্যার দায়িত্বে যিনি রয়েছেন তাঁকে সব সময় ত্রিস্তরীয় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। তবে যে কোনও মাস্ক নয়, বেছে নিন সঠিক মাস্ক। একটি ডিসপোজেবল মাস্ক রোজ পরে থাকবেন না। মাস্ক মাটিতে পড়ে গেলে বা কোনও কারণে নোংরা হয়ে গেলে অবশ্যই সেটি পালটে নিন। মাস্ক পরে থাকার সময়ে তার বাইরের দিকে বারবার হাত দেবেন না। আর মাস্ক পরার আগে এবং খোলার পর অবশ্যই হাত ভাল করে স্যানিটাইজ করে নিন।
রোগীর পরিচর্যা করতে গেলে মাস্ক ছাড়া যে জিনিসটি সর্বক্ষণের সঙ্গী, তা হল স্যানিটাইজার। রোগী বা তাঁর ব্যবহৃত যে কোনও জিনিস ধরার পর হাত স্যানিটাইজ করতে হবে। হাত ধোয়ার পর একই রুমাল বা তোয়ালে দিয়ে বারবার হাত মোছার বদলে ডিসপোজেবল টিস্যু ব্যবহার করাই সবচেয়ে ভাল।
রোগকে অতিরিক্ত ভয় পাওয়া যেমন ভাল নয়, তেমনই হেলাফেলা করারও প্রশ্ন নেই। অতএব সবরকম সতর্কতা অবলম্বন করেই এই বিপদের মোকাবিলা করা জরুরি। বিদেশী পত্রিকা অবলম্বনে।