ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১   বিকাল ৩:১৫ 

সর্বশেষ সংবাদ

হারুণের ৫ বছরের কারাদণ্ড হাইকোর্টে বহাল,তবে জেলে যেতে হবে না: সংসদ সদস্য পদ থাকা নিয়ে বিভ্রান্তি

পাঁচ বছর কারাদণ্ড বহাল থাকায় বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুণ অর রশিদ সংসদ সদস্য পদ হারাচ্ছেন কী না তা স্পষ্ট নয়। সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ সদস্য পদে থাকার যেসব অযোগ্যতার কথা বলা হয়েছে সেটা মি. হারুণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। তবে কোন আদালতের রায়ের পর তা কার্যকর হবে তা অস্পষ্ট। এই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে তিনি সদস্যপদ হারাবেন এবং তার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হলে সংসদ সদস্যপদে নির্বাচন করতে পারবেন না।‘
মি. হারুণ যেহেতু পাঁচবছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন ফলে সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি অযোগ্য হয়ে গিয়েছেন। তবে সেটা কি বিচারিক আদালতের রায়, হাইকোর্টের রায় না আপিল বিভাগের চূড়ান্ত নিস্পত্তির পর কার্যকর হবে তা সুস্পষ্ট করে সংবিধানে বলা হয়নি। যদি বিচারিক আদালতের রায় গ্রহণ করা হতো তা হলে ২০১৯ সালের ১৯ অক্টোবর থেকে সেটা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কারণ ওই দিন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত মি. হারুণকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু এই রায়ের বিরুদ্ধে এমপি হারুণ হাইকোর্টে আপিল করায় তার সদস্যপদ বাতিলের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। বৃহস্পতিবার নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে মি. হারুণের আপিলের রায় হাইকোর্ট ঘোষণা করে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বহাল রাখেন। হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানিয়েছেন এমপি হারুণের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। ফলে এবারও যুক্তি থাকবে আপিল বিভাগে আপিল নিস্পত্তি না হলে সংবিধানের বিধান কার্যকর হবে না। যদিও দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান মনে করেন সংবিধান অনুযায়ি মি .হারুণ সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।
উল্লেখ্য শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সংসদ সদস্য হারুন অর রশিদের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। তবে তাকে নতুন করে আর জেলে যেতে হবে না। তিনি যে ১৬ মাস হাজতবাস করেছেন সেই সময়কালটাই সাজা হিসেবে গণ্য হবে বলে রায়ে বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. সেলিমের একক বেঞ্চ এমপি হারুনের আপিল আবেদনটি খারিজ করে আদেশ দেন। এ মামলায় তিন আসামির কারাভোগের সময়কালকে (১৬ মাস) সাজা হিসেবে গণ্য করে তাদের আপিল খারিজ করেন হাইকোর্ট। ফলে সাজা বহাল থাকলেও এমপি হারুনকে নতুন করে কারাভোগ করতে হবে না।
এদিন আদালতে এমপি হারুনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। তার সঙ্গে ছিলেন সৈয়দ মিজানুর রহমান ও এইচ এম সানজীদ সিদ্দিকী। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো.খুরশীদ আলম খান।
২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় এমপি হারুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। একইসঙ্গে ওই রায়ে তাকে ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন আদালত।
বিচারিক আদালতের ওই রায়ে এমপি হারুন ছাড়াও চ্যানেল নাইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসামি এনায়েতুর রহমান বাপ্পীকে (এমডি, চ্যানেল ৯) ৪০৯ ও ১০৯ ধারায় দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং অপর আসামি ইশতিয়াক সাদেককে তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ৪০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল।
বিচারিক আদালতের দেওয়া পাঁচ বছরের সাজার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর হাইকোর্টে আপিল করেন বিএনপি নেতা হারুন অর রশীদ। পরে উচ্চ আদালত আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে অর্থদণ্ড স্থগিত এবং আসামিদের জামিন আদেশ দেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, হারুন চার দলীয় জোট সরকারের সময় ২০০৫ সালে ব্রিটেন থেকে একটি হ্যামার ব্র্যান্ডের গাড়ি শুল্কমুক্তভাবে ক্রয় করে। গাড়িটি তিনি পরে আরেক আসামি ইশতিয়াক সাদেকের কাছে ৯৮ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন। এরপর সাদেক গাড়িটি চ্যানেল নাইনের এমডি বাপ্পীর কাছে বিক্রি করেন।
নিয়ম অনুযায়ী শুল্কমুক্ত গাড়ি তিন বছরের মধ্যে বিক্রি করলে শুল্ক দিতে হয়, কিন্তু আসামি হারুন শুল্ক না দিয়ে বিশ্বাস ভঙ্গ করেন। এ অভিযোগে ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তেজগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক ইউনুছ আলী এমপি হারুনসহ তিনজনের নামে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলায় ২০০৭ সালের ১৮ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়। ওই বছরই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয় এবং আদালত ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। হারুন অর রশীদ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিত হন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত