অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এনআরবি ব্যাংকের পরিচালক এম বদিউজ্জামান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক। সোমবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ মামলা দুটি দায়ের করেন সংস্থার সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সাইদুজ্জামান। দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক জানান “এক মামলায় বদিউজ্জামানকে একমাত্র আসামি করা হয়েছে। অপর মামলায় তার স্ত্রী নাসরিন জামানকে প্রধান করে দুইজনকে আসামি করা হয়েছে।”
নতুন প্রজন্মের এনআরবি ব্যাংকের পরিচালক এম বদিউজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলার এজাহারে তার বিরুদ্ধে এক কোটি তিন লাখ ১০ হাজার ৭২২ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং তা দখলে রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে।
অপর মালায় নাসরিন জামানের বিরুদ্ধে এক কোটি ৪৯ লাখ ২৮ হাজার ৯২২ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং তা দখলে রাখার অভিযোগ আনা হয়।
এ মামলায় বদিউজ্জামানকে আসামি করার বিষয়ে এজাহারে বলা হয়, “বদিউজ্জামানের অপরাধলব্ধ অর্থ দ্বারা তার স্ত্রী নাসরিন জামান সম্পদ গড়েছেন।“
মামলা দুটিতে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন- ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারা অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকটির পরিচালক এম বদিউজ্জামান এবং তার পরিবারের সদস্যের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ ও বিদেশে অর্থ পাচারের অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। দুদকের উপপরিচালক শামসুল আলমকে প্রধান করে সহকারী পরিচালক শহিদুর রহমান ও সহকারী মিরাজ হোসেন সমন্বয়ে ৩ সদস্যের টিম গঠন করে ।
সূত্র জানায়, এম বদিউজ্জামানের দেশে ছাড়াও বিদেশেও ব্যবসা রয়েছে। তিনি সিঙ্গাপুরে দুটি কোম্পানি গড়ে তুলেছেন। দুদক থেকে তাদেরকে সম্পদবিবরণী দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হলে তারা প্রায় ৭০০ কোটি টাকার সম্পদের হিসাব জমা দেন।
বদিউজ্জামানের স্ত্রী নাসরিন জামানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতিসহ অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠার পর অনুসন্ধানে নামে দুদক। প্রাথমিক অনুসন্ধানে তাদের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়।
তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অ্যাডভান্স হোম প্রাইভেট লিমিটেড ও ফিনিক্স লিমিটেডের বিপুল অঙ্কের শেয়ার কেনা, মানি লন্ডারিং ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ ছিল।
বদিউজ্জামানের যত সম্পদ:
বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্প :এনআরবি ব্যাংকের পরিচালক বদিউজ্জামান দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকায় নামে-বেনামে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে রাজধানীর বারিধারার বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্পের এফ ব্লকের ১৮নং রোডে বড় আকারের একটি প্লটে নির্মিত বাড়ি, যার মূল্য কমবেশি দশ কোটি টাকা। বসুন্ধরা প্রকল্পের এ ব্লকে মেইন রোডে পাঁচ কাঠা জমির ওপর ১৫নং প্লটে রয়েছে সাততলা বাণিজ্যিক ভবন। ভবনটির মালিকানায় রয়েছেন বদিউজ্জামানসহ তার পরিবারের সদস্যরা। এ ভবনের আনুমানিক মূল্য ২০ কোটি টাকা। বসুন্ধরা প্রকল্পের এ ব্লকের ৮নং প্লটে পাঁচ কাঠা জমিতে রয়েছে একটি বহুতল বাণিজ্যিক ভবন। বদিউজ্জামান এ ভবনটি তিন কোটি টাকায় নির্মাণ করার পর ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের কাছে ১৬ কোটি টাকায় বিক্রি করেন।
গুলশান :রাজধানীর গুলশান ১নং রেইন্স ওয়াটার ফ্রন্ট আবাসিক ভবনে রয়েছে প্রায় তিন হাজার একশ বর্গফুটের ফ্ল্যাট। এর দাম প্রায় সাত কোটি টাকা।
বনানী : বনানীর এ ব্লকের ৭৭/এ নং প্লটে রয়েছে অ্যাডভান্স রাইটস নামে বহুতল আবাসিক ভবন। যার বর্তমান মূল্য প্রায় ৬৫ কোটি টাকা।
জোয়ারসাহারা : রাজধানীর জোয়ারসাহারা মৌজায় জগন্নাথপুরে ১১ কাঠা জমিতে নির্মিত অ্যাডভান্স রেইনবো নামে ৯ তলা আবাসিক ভবন। যার আনুমানিক মূল্য ১৫ কোটি টাকা। জোয়ারসাহারায় ভাটারা থানায় ১৪ কাঠা জমিতে নির্মিত অ্যাডভান্স প্যারাডাইস নামে ৯ তলা আবাসিক ভবনে রয়েছে এক হাজার ৪৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা।
উত্তরা : রাজধানীর উত্তরার ১৩নং সেক্টরের ৩নং রোডের ৬নং প্লটে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। যার বর্তমান বাজারমূল্য দশ কোটি টাকা।
ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা থানায় রয়েছে ১৪৮ বিঘা জমির ওপর অ্যাডভান্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। এই জমি ও এর ওপর গড়ে ওঠা সব স্থাপনার আনুমানিক মূল্য দশ কোটি টাকা। এটি বদিউজ্জামানসহ তার ছেলের নামে কেনার পর ২০১৩ সালে লাবিব গ্রুপের কাছে ৬০ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়।
গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জ জেলা সদরে প্রায় ৩৫০ বিঘা জমিতে রয়েছে দুটি আবাসিক প্রকল্প- অ্যাডভান্স নিরালা ও অ্যাডভান্স সুগন্ধা। এগুলোর বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। গোপালগঞ্জ সদরে সার্কিট হাউস রোডে রয়েছে নিজের নামে বিলাসবহুল আবাসিক বাড়ি, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় দশ কোটি টাকা।
অস্থাবর সম্পদ :বদিউজ্জামানের নামে ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডে প্রায় ২০ কোটি টাকার শেয়ার রয়েছে। এনআরসি ব্যাংক থেকে কেনা হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকার শেয়ার। বিভিন্ন ব্যাংকেও বদিউজ্জমান এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে বিরাট অঙ্কের অর্থ জমা রয়েছে।