সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্যাড ও নাম ব্যবহার করে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পক্ষে বিবৃতি দেয়ার ঘটনায় পক্ষে বিপক্ষে বিক্ষোভ করেছেন আওয়ামী লীগ বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ভবনে এ বিক্ষোভ করেন তারা। সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের কক্ষের সামনে দুই পক্ষের আইনজীবীরা নিজ নিজ দলের পক্ষে স্লোগান দিতে শুরু করেন। মিছিল ও স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে আইনজীবীদের মধ্যে এই উত্তেজনা।
এর আগে, গত শনিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্যাডে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতার মহান ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্যের প্রতিবাদ’ শীর্ষক বিবৃতি দেন সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
সমিতির প্যাড ব্যবহার করে দলীয় ও ব্যক্তিগত বিবৃতি দেয়ার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেন সমিতির সভাপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্যাড ব্যবহার করে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের পক্ষে বিবৃতি দেয়া এটাই প্রথম। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে যারা নির্বাচিত হন, তারা মূলত আইনজীবীদের কল্যাণে কাজ করে থাকেন। তারা অনেকেই কিন্তু রাজনীতি করেন। কিন্তু এ ভাবে সমিতির প্যাড ব্যবহার করে কেউ বিবৃতি দেননি।
অন্যদিকে বিএনপি-জামাত সমর্থিত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে তার বিবৃতির পক্ষে সাফা্ই গেয়ে বলেন, মুক্তিযুদ্ধে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অসামান্য অবদান একটি মীমাংসিত সত্য। ১৯৭১ সালে দিশেহারা এ জাতির ক্রান্তিকালে তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান যদি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করতেন ও চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা না দিতেন, তাহলে আজ বাংলাদেশ নামে রাষ্ট্রের সৃষ্টি হতো কিনা সেটাই যেখানে প্রশ্ন, সেখানে মুক্তিযুদ্ধকালে রণাঙ্গনে শহীদ জিয়ার ভূমিকা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন উত্থাপন মুক্তিযুদ্ধের প্রতি চরম অবমাননার শামিল। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সরকার একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান রণাঙ্গনে যে সাহসিকতা ও ভূমিকা রেখেছিলেন তার স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে ‘বীর উত্তম’ উপাধিতে ভূষিত করে।
তিনি আরও বলেন, জিয়াউর রহমানের মতো এমন একজন বীর সেনানী এবং সফল রাষ্ট্রনায়ক সম্পর্কে তার চরিত্রে কালিমা লেপনের যে অপচেষ্টা সম্প্রতি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে করা হয়েছে, সেটি অত্যন্ত বিভ্রান্তিমূলক এবং ইতিহাসের মীমাংসিত সত্যের বিকৃতি। এ ধরনের মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দেয়া থেকে সবাইকে বিরত থাকার আহ্বান জানান মি.কাজল।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শফিক উল্লাহর নেতৃত্বে সংবাদ সম্মেলন হয় সমিতির দক্ষিণ হলে । এতে অ্যাডভোকেট শফিক উল্লাহ বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্যাড ও স্মারক ব্যবহার করে জনসম্মুখে সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজলের ব্যক্তিগত বক্তব্যকে প্রচার করে জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা হয়েছে মাত্র। এই বিবৃতি একান্ত তার ব্যক্তিগত বক্তব্য, যা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নয়। কারণ এর আগে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সভাপতি-সম্পাদক থেকে অনেকেই জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন এবং আছেন। কিন্তু আইনজীবী নেতারা নিজ স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনকে কখনোই রাজনৈতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেননি। দল-মত নির্বিশেষে নিরপেক্ষতার প্রশ্নে সবসময় তারা বদ্ধপরিকর ও আপসহীন ছিলেন। অথচ আজ সুপ্রিম কোর্ট বারের প্যাড ব্যবহার করে নিজ রাজনৈতিক দলের মত প্রকাশ করার মতো সস্তা রাজনীতি করে সমিতির দীর্ঘদিনের ইতিহাস, ঐতিহ্যকে ধ্বংস করার চক্রান্ত শুরু করা হলো।
তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে খন্দকার মোশতাক আহমেদ ও জিয়াউর রহমানসহ কিছু ব্যক্তি পাকিস্তানের পক্ষ হয়ে কনফেডারেশন করার জন্য ষড়যন্ত্র করেছিল। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু যখন দেশ গড়ার কাজে ব্যস্ত তখন জিয়াউর রহমান দেশে অরাজক সৃষ্টিকারী গণবাহিনী ও সর্বহারা বাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতা করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর কিছু সংখ্যক দুষ্কৃতিকারী সৈনিক জিয়া ও মোশতাকের ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্য সফল করার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের সদস্যদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করে।’
জিয়া সামরিক আইন জারি করে বন্দুকের নল দ্বারা ক্ষমতায় প্রতিস্থাপিত হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পঁচাত্তর পরবর্তী খুনি জিয়াউর রহমান সামরিক বাহিনীতে গুপ্ত হত্যা, রাজনীতিবিদদের হত্যাসহ এমন কোনো কর্মকাণ্ড নেই যা করেননি।
অ্যাডভোকেট শফিক উল্লাহ আরও বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদকের বক্তব্য তার দলীয় বক্তব্য, যা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বক্তব্য নয় বরং তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্যাড ও স্মারক তাদের হীন দলীয় ও রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে বারের ঐতিহ্য ও রীতিনীতি লংঘনের মতো জঘন্য অপরাধ করেছেন। অনতিবিলম্বে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।