অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার আসামি টেকনাফের বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এবং তার স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় চার্জশিট দিয়েছে দুদক।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন সোমবার চট্টগ্রামের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে এই চার্জশিট দাখিল করেন।
সেখানে ৪৯ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫৭ টাকা সম্পদের তথ্য গোপন করে মিথ্যা তথ্য দেওয়া এবং ২ কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকার ‘জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ’ অর্জন ও অন্যকে হস্তান্তরের অভিযোগ আনা হয়েছে প্রদীপ ও চুমকির বিরুদ্ধে।
দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক জানান “সোমবার চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হলে অভিযোগপত্র গ্রহণের শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হবে। মোট ২৯ জনকে এ মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে।”
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে হত্যার অভিযোগে প্রদীপ গ্রেপ্তার হওয়ার পর গত বছরের ২৩ অগাস্ট দুদকের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে এই মামলা করেন।
প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে তিন কোটি ৯৫ লাখ পাঁচ হাজার ৬৩৫ টাকার ‘জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ’ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন এবং অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয় মামলার এজাহারে।
আইনজীবী মাহমুদুল হক বলেন, “তদন্তের পর টাকার অংকে কিছু পরিবর্তন হয়েছে। ওসি প্রদীপ ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে যে সম্পদ অর্জন করেছেন তা স্ত্রী ও শ্বশুরের নামে স্থানান্তর, হস্তান্তর ও ভোগ দখলে রেখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।”
অভিযোগপত্রে যেসব সম্পদের উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো হল- নগরীর পাথরঘাটায় একটি ছয়তলা বাড়ি, ষোলশহরে সেমিপাকা ঘর, ৪৫ ভরি সোনার গয়না, একটি করে কার ও মাইক্রোবাস এবং কক্সবাজারে ফ্ল্যাট।মামলায় বলা হয়েছে, প্রদীপ ‘ঘুষ ও দুর্নীতির’ মাধ্যমে অর্জিত অর্থ গোপন করার জন্য চট্টগ্রামের পাথরঘাটা এলাকায় ওই ছয়তলা বাড়ি করেন তার শ্বশুরের নামে। পরে তার শ্বশুর ওই বাড়ি তার মেয়ে চুমকিকে দান করেছেন বলে দেখানো হয়।
আয়কর রির্টানে চুমকি কারণের কমিশন ব্যবসা এবং বোয়ালখালী উপজেলায় ১০ বছরের জন্য লিজ নেওয়া পাঁচটি পুকুরে মাছের ব্যবসার যে আয় দেখানো হয়েছে, তাও স্বামী প্রদীপ দাশের ‘জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে বলে মনে করছেন তদন্ত কর্মকর্তা।
দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল বলেন, “মাছ চাষের ব্যবসার যে হিসেব দেখানো হয়েছে, বাস্তবে তার অস্তিত্ব নেই বলে দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে।”
এর আগে গত ২৯ জুন দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের জব্দ করা সম্পত্তি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ডিসির জিম্মায় থাকবে বলে আদেশ দেয় আদালত।
কক্সবাজারের টেকনাফের কাছে বাহারছড়া চেকপোস্টে গত বছরের ৩১ জুলাই রাতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
ওই ঘটনার পর সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস গতবছরের ৫ অগাস্ট কক্সবাজারের হাকিম আদালতে ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। সেখানে বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলিকে ১ নম্বর এবং টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে ২ নম্বর আসামি করা হয়।
মামলা হওয়ার পর ওসি প্রদীপসহ সাত পুলিশ সদস্য ৬ অগাস্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর প্রদীপকে সরকারি চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর হত্যা মামলায় ১৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয় র্যাব। গত ২৭ জুন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রদীপসহ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয়।সূত্র -বিডি নিউজ।