ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ এমন এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে যার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সদস্যদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়ার যোগসূত্র পাওয়া গেছে। গ্রেফতার এই ব্যক্তির নাম রাহুল কুমার সেন ওরফে লালু সেন। তার স্ত্রী বাংলাদেশী নাগরিক এবং একজন আইনজীবী। তাকে জেরা করে একাধিক বিস্ফোরক তথ্য পেয়েছে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাক্স ফোর্স ,এসটিএফ। এমন খবর দিয়েছে ভারতের পত্রপত্রিকা।
গত বৃহস্পতিবার বারাসত তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে দুটো ল্যাপটপ, একটি আইপ্যাড, দুটো মোবাইল ফোন এবং বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার হয়েছে।
এসটিএফ জানায়, বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে আসা জঙ্গিদের টাকার যোগান দিতে লালু। এমনকি তারা কোথায় থাকবে, কোথায় আত্মগোপন করবে, নতুন পরিচয়পত্র তৈরি, সব দায়িত্ব সামাল দিতো সে।
পুলিশ জানিয়েছে লালু মূলত জঙ্গিদের ভারতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে দেওয়া এবং আশ্রয়ের বন্দোবস্ত করত। সেক্ষেত্রে লালু ঠিক কতজনকে এই ব্যবস্থা করে দিয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তকারীদের নজরে লালুর স্ত্রীর ভূমিকাও। লালুর স্ত্রী আদৌ তার স্বামীকে জঙ্গি কার্যকলাপে সহায়তা করত কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কলকাতা পুলিশের এসটিএফ লালুকে জেরা করে মোট ২২টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের খোঁজ পেয়েছে। ওই অ্যাকাউন্টগুলির মাধ্যমে জেএমবির সঙ্গে লালু টাকা আদানপ্রদান করত বলে বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এছাড়াও তার কাছ হুন্ডির মাধ্যমে টাকা আসত বলে আগেই জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। জানা যায়, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ভারতে জঙ্গিদের গা ঢাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করত সে। তৈরি করে দিত ভুয়ো পরিচয়পত্র। ঠিক কতজনকে এভাবে লালু পশ্চিমবঙ্গে ঢুকতে সাহায্য করেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও লালুর স্ত্রীর গতিবিধির দিকে নজর রাখা হয়েছে। পুলিশ জানায়, লালুর স্ত্রী সাথী সেন বাংলাদেশের বাসিন্দা। তিনি পেশায় বাংলাদেশের আইনজীবী। সেই সূত্রে একাধিকবার বাংলাদেশে গিয়েছে লালু। তার স্ত্রী সাথী স্বামীকে সম্পূর্ণরূপে জঙ্গি কার্যকলাপে সহায়তা করেছে বলেই মনে করছে গোয়েন্দারা।
এছাড়াও জেএমবির অন্যতম নেতা আনোয়ার আলি ওরফে হৃদয়ের সঙ্গেও লালুর যোগসূত্র খুঁজে পাচ্ছেন তদন্তকারীরা। সূত্রের খবর, মাসদুয়েক আগে হৃদয় উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতে এসেছিল। সেই সময় প্রায় সপ্তাহখানেক লালুর বাড়িতে ছিল সে। পরে যদিও কোনও একটি গুরুত্বপূর্ণ ফোন আসে হৃদয়ের কাছে। তারপরই সে সোজা বাংলাদেশে চলে যায়। কে ফোন করেছিল তাকে, ঠিক কী কথোপকথন হয়েছিল হৃদয়ের তা এখনও জানা যায়নি। কলকাতা পুলিশের এসটিএফ সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছে। হৃদয় তার ব্যবহৃত ল্যাপটপ এবং আইপ্যাডটি ফেলে যায় লালুর বাড়িতে। সেগুলি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে কোনও তথ্য পাওয়া যায় কিনা, সেদিকেই তাকিয়ে তদন্তকারীরা।