ঢাকা   শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১   রাত ৯:০২ 

সর্বশেষ সংবাদ

আইনের শাসন ছাড়া কোনো দেশ এগিয়ে যেতে পারে না, বিচারালয় যেন বাণিজ্যালয়ে পরিণত না হয়: শেষ কর্মদিবসে বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী

আপিল বিভাগের বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী বলেছেন, আইনের শাসন ছাড়া কোনো দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। বিচারালয় কোনো অবস্থাতেই যাতে বাণিজ্যালয়ে পরিণত না হয়—এটি বার ও বেঞ্চ উভয়কে শক্তভাবে রুখতে হবে। বিচারিক জীবনের শেষ কর্মদিবসে বৃহস্পতিবার তিনি ভার্চ্যুয়াল এক বিদায়ী বক্তব্যে এসব কথা বলেন। অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে তাকে বিদায় সংবর্ধনা জানানো হয়।
২৮ জুলাই ৬৭ বছর পূর্ণ হবে আপিল বিভাগের এই বিচারপতির। সুপ্রিম কোর্টের রুলস অনুযায়ী আগামী ১৮ থেকে ২৯ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন ছুটি নির্ধারিত। আর আগামী দুইদিন (শুক্র ও শনিবার) সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় বৃহস্পতিবার ছিল বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকীর শেষ কর্মদিবস। এর মধ্য দিয়ে এই বিচারপতির ৪১ বছরের বিচারিক কর্মজীবনের ইতি ঘটতে যাচ্ছে। প্রথা অনুসারে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রথমে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও পরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস বিদায়ী বিচারপতির কর্মময় জীবন তুলে ধরে বক্তব্য দেন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, আপিল বিভাগের বিচারপতিরা ও সিনিয়র আইনজীবীরা এতে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত ছিলেন।
বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, ‘বিচারকাজ সম্পাদন মূলত আইনজীবী ও বিচারকের রসায়ন, পাখির দুটি ডানার মতো, একটি ডানা দিয়ে উড়তে পারে না। যৌথ প্রচেষ্টার এই অভিযাত্রার মূল উদ্দেশ্য একটাই, তা হলো সাংবিধানিক সংরক্ষণ, প্রতিপালন ও সমর্থন করা। বিদায়ক্ষণে সবাইকে আহ্বান জানাই আসুন একটি সুস্থ, সরল, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক বিচার বিভাগের অবকাঠামো আমরা রচনা করে যাই,…জনমনে আমাদের ভাবমূর্তির দুর্ভিক্ষ দূরীভূত হয়।’
‘মনীষীরা বলেন, পৃথিবীতে তিনটি বেহেশতি জায়গার মধ্যে একটি বিচারালয়’ উল্লেখ করে বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, ‘আজ বিচারিক জীবনের ইতি টানছি। এই মুহূর্তে আমি আপনাদের কাছে একটি দাবি রেখে যেতে চাই, বিচারপ্রার্থীদের এই স্বর্গীয় আশ্রয়স্থল, এই বিচারালয় কোনো অবস্থাতেই যাতে বাণিজ্যালয়ে পরিণত না হয়। এটি বার ও বেঞ্চের উভয়কে শক্তভাবে রুখতে হবে।’
বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, ‘বিচারিক জীবনের ৪১ বছরের দায়িত্বের হিসাব আর থাকছে না। দায়িত্ব ছিল এই দেশের প্রতি, জনগণের প্রতি আমি কতটুকু দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি, তা বিচারের ভার আপনাদের ওপর ন্যস্ত। বিচারিক জীবনের শেষ সময়ে সবাইকে আবারও মনে করিয়ে দিতে চাই, ‘আইনের শাসন ছাড়া কোনো দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। বাংলাদেশের উন্নয়নের যে অগ্রযাত্রা চলছে, তার সফল অংশীদার হবে এই বিচার বিভাগ।’
শুরুতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালতে যে কজন মুক্তিযোদ্ধা বিচারপতি আছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী। ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে উন্নীত হন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে একটি অনন্য নজির স্থাপিত হয়।
যেখানে দুজন সহোদর ভাই একই সঙ্গে আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর কনিষ্ঠ ভাই আপিল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।’
বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী ১৯৫৪ সালের ২৯ জুলাই কুষ্টিয়া জেলার খোকসা উপজেলার রমানাথপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ও এলএলবি পাস করেন। ১৯৭৯ সালে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়ে কুষ্টিয়ায় আইন পেশা শুরু করেন। ১৯৮০ সালের ২৩ এপ্রিল জুডিশিয়াল সার্ভিসে তৎকালীন মুনসেফ হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৭ সালের ৭ মে তিনি জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে পদোন্নতি পান। পরবর্তী সময়ে তিনি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালের ৩০ জুন হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১১ সালের ৬ জুন তিনি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হিসেবে স্থায়ী হন। ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত