ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০   রাত ৮:৪৮ 

সর্বশেষ সংবাদ

ই-কমার্সে ১০ দিনে পণ্য ডেলিভারি না হলে মূল্য ফেরত দিতে হবে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিকা জারি, ফিরবে শৃংখলা

রাজধানীর ভেতরে পাঁচ দিনের মধ্যে এবং রাজধানীর বাইরের শহরে ১০ দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারির নিশ্চিত করা এবং সময় মতো পণ্য ডেলিভারি দিতে ব্যর্থ হলে সাত দিনের মধ্যে মূল্য ফেরত দেওয়ার বিধানসহ ‘ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা-২০২১’ জারি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সোমবার এ নির্দেশিকা জারি করে মন্ত্রণালয়।
একই সঙ্গে ইতিমধ্যে যেসব ই-কমার্স কোম্পানিতে আগাম মূল্য পরিশোধের পর ক্রেতা পণ্য ডেলিভারি কিংবা মূল্য ফেরত কোনোটিই সময়মত পাচ্ছেন না তাদের দ্রুত ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ দায়ের করার পরামর্শ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত নির্দেশিকাটি অবিলম্বে কার্যকর হবে।
এ বিষয়ে হাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ই-কমার্স কোম্পানিগুলো আগে থেকে ক্রেতাদের থেকে যে অগ্রিম মূল্য নিয়েছে, সেগুলোর পণ্য ডেলিভারি বা মূল্য ফেরতের ক্ষেত্রেও একই সময়সীমা কার্যকর হবে। যেসব ক্রেতা অগ্রিম মূল্য পরিশোধের পরও পণ্য বা মূল্য ফেরত পাচ্ছেন না, আমাদের পরামর্শ হলো- তারা যেন দ্রুত ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ক্রেতার অগ্রিম মূল্য পরিশোধের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পণ্যটি ডেলিভারিম্যান বা ডেলিভারি সংস্থার কাছে হস্তান্তর করে তা টেলিফোন, ই-মেইল বা এসএমএসের মাধ্যমে জানাবে ই-কমার্স কোম্পানিগুলো। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ডেলিভারিম্যান পণ্যটি ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেবে।
এতে আরও বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কোনো পণ্য বা সেবা ডেলিভারিম্যানের কাছে হস্তান্তর করার মতো অবস্থায় না থাকলে সে ক্ষেত্রে ই-কমার্স কোম্পানিগুলো ওই পণ্যমূল্যের ১০ শতাংশের বেশি অর্থ অগ্রিম নিতে পারবে না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত এসক্রো সার্ভিসের মাধ্যমে পুরো অর্থই অগ্রিম নিতে পারবে। অগ্রিম মূল্য আদায়ের ক্ষেত্রে অফারে প্রদর্শিত পণ্য অবশ্যই দেশের ভেতরে ‘রেডি টু শিপ’ (মার্কেট প্লেসের নিজস্ব নিয়ন্ত্রণে বা মার্কেটপ্লেসে নিবন্ধিত থার্ড পার্টি বিক্রেতার নিয়ন্ত্রণ) পর্যায়ে থাকতে হবে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ডেলিভারির সময়সীমা আরও সংক্ষিপ্ত হবে এবং ক্রয়াদেশ গ্রহণকালে ডেলিভারির সময় সুস্পষ্টভাবে ক্রেতাকে জানাতে হবে। কোনো একটি ক্রয়াদেশে একাধিক পণ্য থাকলে আলাদা আলাদা ডেলিভারি চার্জ আরোপ করা যাবে না। তবে মার্চেন্ট ভিন্ন ভিন্ন হলে আলাদা ডেলিভারি চার্জ নেওয়া যাবে এবং ক্রয়াদেশ নিশ্চিত করার আগেই তা ক্রেতাকে জানাতে হবে।
এই নির্দেশিকা প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে সরকার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স, কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন, ভ্যাট নিবন্ধন বাতিল করাসহ সংশ্লিষ্ট মার্কেটপ্লেস নিষিদ্ধ করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবে। ক্ষতিগ্রস্ত ক্রেতা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ অন্যান্য আদালতে আইনানুগ প্রতিকারের জন্য মামলা করতে পারবে।
নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, সকল ধরনের ডিজিটাল ওয়ালেট, গিফট কার্ড, ক্যাশ ভাউচার বা অন্য কোনো মাধ্যম, যা অর্থের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, তা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া তৈরি, ব্যবহার বা ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া ডিজিটাল মাধ্যমে কোনো ধরনের অর্থ ব্যবসা পরিচালনা করা যাবে না।
ই-কমার্স কোম্পানিগুলো যেসব পণ্য বিক্রির অফার দেবে, তা ওই ই-কমার্স কোম্পানি বা তার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ মার্চেন্টদের নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে। কোনো পণ্য বিক্রির অফারে কী পরিমাণ পণ্য স্টকে আছে, তা উল্লেখ করতে হবে এবং প্রতিটি বিক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই পণ্যের স্টক আপডেট করতে হবে।
এতে বলা হয়েছে, সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধের পর মানুষের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কোনো কারণে ক্রেতার চাহিদামতো পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব না হলে অর্ডার দেওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তা ক্রেতাকে ফোন, এসএমএস বা ইমেইলে জানাতে হবে। এক্ষেত্রে অন্য কোনো পণ্য কেনার জন্য ক্রেতাকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বাধ্য করা যাবে না।
পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে কোনো ধরণের ডিসকাউন্ট, ফ্রি ডেলিভারি বা অন্য কোনো সুবিধা থাকলে তা পরিষ্কারভাবে পণ্যের বর্ণনায় থাকতে হবে।
এতে আরও বলা হয়েছে, পণ্য ও সেবার বিষয়ে ক্রেতা যাতে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করতে পারেন, সেজন্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্রেতা সংখ্যার অনুপাতে কাস্টমার কেয়ার কর্মী নিয়োগ দিতে হবে। কোনো পণ্য ও সেবার বিষয়ে ক্রেতার অভিযোগ রেকর্ডেও যথাযথ ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং যেকোনো অভিযোগ ৯৬ ঘণ্টার মধ্যে সমাধান করে ক্রেতাকে জানাতে হবে।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার সময় মুদ্রিত বিল প্রদান করতে হবে, যাতে প্রদত্ত ভ্যাট ও অন্যান্য কর (যদি থাকে) উল্লেখ করতে হবে। কোনো বিদেশি কোম্পানি বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসা করতে চাইলে তাদের অবশ্যই নিবন্ধন নিতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত