ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১   সকাল ১১:০৭ 

সর্বশেষ সংবাদ

বান্দরবানে ‘ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের মুসলিম’ ওমর ফারুক হত্যা নিয়ে বিতর্কে পাহাড়ি ও বাঙালি

বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা বান্দরবানের রোয়াংছড়ির ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের মুসলিম মোহাম্মদ ওমর ফারুককে হত্যার এক সপ্তাহ পরেও এ বিষয়ে দায়ের করা মামলার কোন অগ্রগতি নেই বলে জানিয়েছে সেখানকার পুলিশ।
গত ১৮ই জুন রাতে মি. ফারুককে রোয়াংছড়িতে নিজের বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে গুলি করে হত্যার ঘটনার পর সেখানকার বাঙালি সংগঠনগুলো ঘটনার জন্য সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতিকে দায়ী করলেও জনসংহতি সমিতি বলছে পার্বত্য এলাকায় ধর্মকে ব্যবহার করে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল রাখতে একটি ”বিশেষ গোষ্ঠী” এটি করতে পারে বলে মনে করেন তারা।

জনসংহতি সমিতির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক কে এস মং মারমা বিবিসি বাংলাকে বলেন জনসংহতি সমিতি কারও ব্যক্তিগত ধর্ম পালন নিয়ে কৌতূহল দেখায় না, কারণ এখানে সব ধর্মের প্রতিনিধিত্ব আছে এবং সংগঠনটি ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে।
“বিভিন্ন ঘটনা ঘটিয়ে পার্বত্য অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা কারা তৈরি করে এটা এ অঞ্চলের সবাই জানে। এবার তারা ধর্মকে ব্যবহার করে সেটি করতে চাইছে। কিন্তু যতটুকু জানি ওমর ফারুক তো নতুন করে মুসলিম হননি। পুলিশের উচিত খুঁজে বের করা যে কারা এগুলো ঘটিয়ে অস্থিতিশীলতা তৈরি করে পাহাড়িদের বিপদে ফেলার চেষ্টা করে,” বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন।
তবে পার্বত্য নাগরিক পরিষদের নেতা কাজী মুজিবুর রহমান ঘটনার জন্য জনসংহতি সমিতিকেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, “মুসলিম হওয়ার কারণেই ওমর ফারুককে হত্যা করেছে কারণ তিনি তার এলাকায় একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করছিলেন।”
তবে রোয়াংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তৌহিদ কবীর বলছেন কেন ওমর ফারুক খুন হয়েছেন সেটি এখনো তাদের অজানা এবং এ নিয়ে তদন্তে কোন অগ্রগতি এখনো হয়নি।
যদিও স্থানীয় কয়েকজন পেশাজীবী বলছেন পার্বত্য অঞ্চলে মাঝেমধ্যেই এমন কিছু ঘটনা ঘটে যার পরপরই বাঙালি কিছু সংগঠন সোচ্চার হয়ে ওঠে এবং পাহাড়ি বিভিন্ন সংগঠনকে দায়ী করা হয়। কিন্তু এসব ঘটনার তদন্তে পুলিশকে খুব একটা উৎসাহ দেখাতে দেখা যায় না।
ওমর ফারুক কে , কীভাবে খুন হলেন
রোয়াংছড়ির ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের সদস্য মোহাম্মদ ওমর ফারুককে ১৮ই জুন শুক্রবার রাত আটটার দিকে তার বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে বাইরে মসজিদের সামনে গুলি করে হত্যা করে একদল লোক। ওই মসজিদটি তিনিই প্রতিষ্ঠা করছিলেন।
একসময় খ্রিস্টান ধর্ম পালন করা ওমর ফারুক ও তার পরিবারের সদস্যরা প্রায় সাত বছর আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।
রোয়াংছড়ির স্থানীয় একজন ওয়ার্ড মেম্বার গান্ধীলাল তঞ্চংগা বলছেন ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বেরণ চন্দ্র ত্রিপুরা ২০১৪ সালে থানচি থানার আলীকদমে গিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নিজের নাম মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাখেন। পরে তার পরিবারের সদস্যরাও ইসলাম গ্রহণ করে সেখানেই বসবাস করেন।
“কিন্তু সম্প্রতি কয়েক বছর আগে তিনি আবার রোয়াংছড়িতে ফিরে আসেন। তার শ্বশুরের কাছ থেকে পাওয়া জায়গায় তিনি মসজিদ তৈরি করছিলেন। কিন্তু তাকে নিয়ে কোন ধরনের কোন সমস্যার কথা তিনিও কখনো আমাদের জানাননি বা ওই সম্প্রদায়ের আরও অনেকেই যারা মুসলিম হয়েছেন বিভিন্ন সময়ে তারাও জানাননি,” জানান গান্ধীলাল তঞ্চংগা।
মি. তঞ্চংগা বলছেন ত্রিপুরা সম্প্রদায়ে ওমর ফারুকই একমাত্র মুসলিম নন এবং তিনি নতুন করেও মুসলিম হননি।
তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী এখন ওই সম্প্রদায়ে মোট ৩৩টি পরিবার আছে যার মধ্যে ৫টি পরিবার মুসলিম।
এছাড়া গত এক দশকেরও বেশি সময়ে আরও এগারোটি পরিবার মুসলিম হয়েছিলো কিন্তু তারমধ্যে ৫/৬টি পরিবার আবার খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে গেছে।
“এলাকাটি আসলে খুবই দরিদ্র মানুষের। নানা কারণে এখানে ধর্মান্তরিত হওয়ার প্রবণতা কম নয়। কিন্তু সেসব কারণে কেউ আক্রোশের শিকার হননি । ওমর ফারুকের ঘটনায় তাই আমরা বিব্রত। বুঝতে পারছি না যে কি হলো,” বলছিলেন তিনি।
রোয়াংছড়ি বাজারে রোয়াংছড়ি জামে মসজিদেও নামাজ পড়তেন ওমর ফারুক। তাছাড়া তুলাছড়ি ত্রিপুরা পাড়ায় তিনি যে মসজিদ নির্মাণ করছিলেন সেখানেও ইমামতি করতেন মিস্টার ফারুক। ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের মুসলিমদের জন্য স্থানীয় যাদুমনি পাড়াতেও আরেকটি মসজিদ আছে।
কিন্তু এসব মসজিদ নিয়ে বা ধর্মকর্ম পালন নিয়েও ওমর ফারুক কোন দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন বা কোন সমস্যায় পড়েছেন এমনটি কখনো তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা পুলিশ প্রশাসনকে জানাননি।
আবার তিনি যেখানে থাকতেন তার থেকে সেনা ক্যাম্পও খুব বেশি দূরে নয়।
এমন একটি জায়গাতেই ১৮ই জুন শুক্রবার রাতে একদল লোক তার বাড়ি ঘেরাও করে তাকে ডেকে বাইরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে।
এর পর বাঙালি কিছু সংগঠন ঘটনার জন্য মোহাম্মদ ওমর ফারুককে ‘নওমুসলিম’ আখ্যা দিয়ে তাকে হত্যার জন্য জনসংহতি সমিতিকে দায়ী করে নানা কর্মসূচি পালন করতে শুরু করে।
তবে সমিতির দিক থেকে হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানানো হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে আর কোন মন্তব্য এতোদিন করা হয়নি।বিবিসি বাংলা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত