ঢাকা   মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২   রাত ৩:৪৪ 

সর্বশেষ সংবাদ

কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দিতে সুপারিশ, ৩ পুলিশের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

কক্সবাজারের একটি রোহিঙ্গা পরিবারের ১০ সদস্যকে পাসপোর্ট দেওয়ার সুপারিশ করায় তিন পুলিশ পরিদর্শকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)
ওই রোহিঙ্গা পরিবারের সদস্যরা অবৈধভাবে ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়ায় ও স্মার্ট কার্ড পাওয়ায় সাবেক জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয়েছে।
পাশাপাশি পরিচয় গোপন করে পাসপোর্ট ও স্মার্ট কার্ড গ্রহণ করায় রোহিঙ্গা পরিবারটির ১৩ সদস্যকেও আসামি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এ মামলাটি করেন সংস্থার উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন।
মামলায় আসামি করা হয়েছে কক্সবাজার জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার সাবেক পরিদর্শক এসএম মিজানুর রহমান, রুহুল আমিন, প্রভাষ চন্দ্র ধর ও কক্সবাজার জেলার সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেনকে।
তারা বর্তমানে কেউ কক্সবাজারে নেই। দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা বর্তমানে কর্মরত আছেন।
আসামি রোহিঙ্গা নাগরিকরা হলেন- মো. তৈয়ব, তার তিন ভাই মোহাম্মদ ওয়াসেস, মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, মোহাম্মদ রহিম, স্ত্রী নূর হামিদা, সন্তান আব্দুর রহমান, আব্দুস শাকুর, নূর হাবিবা, বোন আমাতুর রহিম, ভগ্নিপতি নুরুল আলম ও বোনের তিন ছেলে মেয়ে আসমাউল হুসনা, আমাতুর রহমান ও মো. ওসামা।
মামলার বাদী শরীফ উদ্দিন জানান, কক্সবাজার সদর উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের এ পরিবারটি রোহিঙ্গা হলেও দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন।
“তাদের পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশি পাসপোর্ট, স্মার্ট কার্ড গ্রহণ করে অনেকেই প্রবাস জীবন যাপনও করছেন। তারা মায়ানমার থেকে পরিচিত লোকজনদের নিয়ে এসে পরিবারের সদস্য পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশি পাসপোর্ট পেতেও সহায়তা করেন বলে আমাদের তদন্তে এসেছে।”
এই পরিবারের অনেক সদস্য বাংলাদেশে অবস্থান করে জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে সামাজিক কর্মকাণ্ডেও জড়িয়ে পড়েছেন বলে জানান তিনি।
দুদক কর্মকর্তা শরীফ বলেন, পরিবারটির সদস্যদের পাসপোর্ট পেতে পুলিশ জনপ্রতনিধিসহ অনেকেই সহায়তা করেছেন। তারা নির্বাচন কমিশনের অনিবন্ধিত ল্যাপটপের মাধ্যমে চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার ঠিকানা ব্যবহার করে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন এবং স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ করেছেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, তৈয়বের পরিবারের আট সদস্যের পাসপোর্ট আবেদনে পুলিশ পরিদর্শক মিজানুর রহমান তাদের পাসপোর্ট প্রাপ্তির সপক্ষে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলেন। আর সেটি যাচাই বাছাই না করে একমত পোষণ করে অন্য পরিদর্শক প্রভাষ চন্দ্র ধর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়েছিলেন।
অপরদিকে তৈয়ব ও আমাতুর রহিমের পাসাপোর্ট আবেদনে পুলিশ পরিদর্শক রুহুল আমিন পাসপোর্ট প্রাপ্তির সপক্ষে প্রতিবেদন জমা দেওয়ায় তারাও পাসপোর্ট পেয়ে যায় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, ইসলামাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের রোহিঙ্গা জন্মনিবন্ধন বইয়ের চারটি পৃষ্টা এবং জাতীয়তা সনদের বালাম বই ‘গায়েব’ করা হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা সেগুলো যাচাই বাছাই করলে সহজেই তা ধরতে পারতেন। কিন্তু তারা তা করেননি।
মামলার এক পর্যায়ে বলা হয়, নূর মোহাম্মদ আনছারী নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি আসামিদের রোহিঙ্গা উল্লেখ করে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র বাতিলের আবেদন করেছিলেন।
নির্বাচন কমিশন থেকে তা যাচাই করতে বলা হলে তৎকালীন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেন অভিযুক্তদের পক্ষে ‘শক্তিশালী নথিপত্র’ আছে বলে মতামত দেন।
এছাড়াও আসামিদের ভোটর তালিকা নিবন্ধন ফরম-২ নির্বাচন কার্যালয়ে সংরক্ষিত না নেই বলেও উল্লেখ করা হয়েছে দুদকের মামলায়।
শরীফ উদ্দিন বলেন, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে দুদক রোহিঙ্গাদের হাতে পাসপোর্টের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে। তখনই পুলিশ অভিযুক্ত রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট বাতিলের জন্য প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল।
তিনি বলেন, আসামিদের পাসপোর্ট পেতে ইসলামাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নূর সিদ্দিক ও কক্সবাজার আদালতের এক আইনজীবী তাদের পাসপোর্ট আবেদনে প্রত্যয়ন করেছিলেন।
এ মামলার তদন্তে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ আরও আনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হতে পারে বলেও জানান দুদক কর্মকর্তা শরীফ। সূত্র-বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত