বোট ক্লাব থেকে অল কমিউনিটি ক্লাব। বিতর্ক যেনো পিছুই ছাড়ছেনা নায়িকা পরীমণির । মধ্যরাতে বোটক্লাবে গিয়ে যৌন হয়রানীর শিকার হন। এ নিয়ে এখন তোলপাড় চলছে দেশজুড়ে। আর বুধবার জানা গেলো আরেক ঘটনা। বলা হচ্ছে বোটক্লাব কেলঙ্কারির আগের রাতে পরীমণি তার দলবলসহ মধ্যরাতে হাজির হন গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাবে। সেখানে তিনি উশৃঙ্খল আচরণ করেন। ভাংচুর পর্যন্ত করেন। বিষয়টি এতোদিন চাপাই ছিলো। কিন্তু বোটক্লাব কেলঙ্কারির ঘটনায় পরীমণিরও বিভিন্ন অঘটনের খবর প্রকাশ পেতে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে পরীমণি বিভিন্ন বারে গিয়ে মাদক গ্রহণ করেন এবং উশৃঙ্খল আচরণ করেন। তিনি একাই নন সঙ্গে নিয়ে যান দলবল।
তবে ঢাকা বোট ক্লাবে পরীমণির ওপর হামলা ও যৌন নির্যাতন ,এ ঘটনায় মামলা, ক্লাবের প্রভাবশালীসদস্যসহ কয়েকজন গ্রেপ্তার হওয়ার পর এসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে। ফলে মনে হচ্ছে এখানে পক্ষ থেকে নানা প্রতিপক্ষের সৃষ্টি হচ্ছে।
পরীমণির বিরুদ্ধে ক্লাবে ভাঙচুরের অভিযোগে গুলশান থানায় একটি জিডি দায়ের করেছে অল কমিউনিটি ক্লাব কর্তৃপক্ষ। পুলিশ জানিয়েছে ঢাকা বোট ক্লাবকাণ্ডের পর আরও কিছু বিষয় খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে তারা। বিশেষ করে নিয়ম ভেঙে কয়েকটি ক্লাবে মধ্যরাতে এই নায়িকার যাতায়াত ও মদ্যপানের খোঁজ-খবর করছে পুলিশ।
ইতিমধ্যে গুলশান ও বনানী থানার পুলিশ বিভিন্ন অভিজাত ক্লাবের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এছাড়া আরও কয়েকটি ক্লাবের কর্মকর্তারা পুলিশকে জানিয়েছেন, হঠাৎ করে মধ্যরাতে পরীমণি এসে হাজির হন। অনেক সময় নিয়ম ভেঙে পরীমণির জন্য বার খোলা রাখতে হয়। তিনি কিছু শুনতেও চান না। উশৃঙ্খল আচরণ করেন।
গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ৭ জুন গভীর রাতে ৯৯৯–এর একটি কলে গুলশান থানা-পুলিশের একটি দল অল কমিউনিটি ক্লাবে যায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কথা-কাটাকাটির জেরে ক্লাবে গ্লাস ভাঙচুর করেছেন পরীমণি। পরে আর এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ করেননি। আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা (পুলিশ) ক্লাবে আবারও পরিদর্শনে যাব।’
এদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে অল কমিউনিটি ক্লাবের সভাপতি কে এম আলমগীর ইকবাল বেসরকারি‘সময় টেলিভিশন’কে বলেছেন, ঘটনার দিন পরীমণি একজন সদস্যের মাধ্যমে কয়েকজনকে নিয়ে ক্লাবে আসেন। তার পোশাক দেখে ক্লাবের একজন সদস্য আপত্তি তোলেন। তাঁকে চলে যাওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু পরীমণি তার কথা না শোনায়, তিনি নিজেই চলে যান। পরীমণি যে সদস্যের মাধ্যমে এসেছিলেন তিনিও পরীমণিকে চলে যেতে বলেন। পরিমণি কথা না শোনায় এক পর্যায়ে ওই সদস্যও চলে যান।
আলমগীর ইকবাল বলেন, পরীমণি তখন চিৎকার চেচামেচি শুরু করেন। ক্ষিপ্ত হয়ে গ্লাস, ছাইদানী ছুড়ে মারতে থাকেন। এ সময় ক্লাবের লোকজন ৯৯৯ –এ কল করেন। পুলিশ আসার পরও তিনি এগুলো ছুড়তে থাকেন। তখন ক্লাবের দুজন ওয়েটার ছিল। এ সময় পুলিশ তাদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের অভিযোগ শোনেন। কিছুক্ষণ পর পুলিশের অনুরোধে পরীমণি ও অন্যরা চলে যান। এরপর আর কোনো ঘটনা ঘটেনি। তিনি বলেন, পরীমণি যে সদস্যের সঙ্গে ক্লাবে এসেছিলেন তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ক্লাবের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ৮ জুন বুধবার রাতে বোট ক্লাব কাণ্ডের তদন্তে নেমে কেচো খুঁড়তে সাপ বেরুচ্ছে। তার ব্যাপারে জানাতে ঢাকার একাধিক ক্লাবের কর্মকর্তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন।
তারা পুলিশ ও গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন, পরীমণি তার কস্টিউম ডিজাইনার জিমিসহ কয়েকজন যুবক-যুবতী নিয়ে প্রায়রাতেই অভিজাত ক্লাব ও তারকা হোটেলে ঘুরে বেড়াতেন। তাদের সঙ্গে নিয়ে মদ পান করতেন মধ্যরাত পর্যন্ত। এক্ষেত্রে প্রায় রাতেই তার কারণে ক্লাবের আইন ভাঙা হতো। বিশেষ করে হাফপ্যান্ট পরে তার সঙ্গী হওয়া জিমি ড্রেসকোডের তোয়াক্কা করতেন না কখনোই। এক ক্লাবে সময় কাটিয়ে তিনি যেতেন আরেক ক্লাবে।
গুলশান পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, গত ৩ জুন রাত ১২টার পর পরীমণি, তার সাবেক প্রেমিক তামিম হাসান ও দু’টি বেসরকারি টেলিভিশনের দু’জন কর্মকর্তা পরিচয়ধারীকে নিয়ে গুলশানের একটি অভিজাত ক্লাবে যান। তখন তারা মদ্যপ ছিলেন। ক্লাবে ঢুকে পরীমণি ও অন্যরা বার ব্যবহার করতে চান। বার বয় জালাল এতে অসম্মতি জানালে পরীমণি তার গালে চড় মারেন। ক্লাব কর্মকর্তারা বেসামাল আচারণের প্রতিবাদ করলে তিনি নিজেই পুলিশে কল করেন। গুলশান থানা পুলিশের দু’টি পিকআপ ভ্যান সেখানে যায়।
পরে তারা বুঝিয়ে পরীমণিকে বাসায় পাঠান। এ খবর পুলিশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসার পর বনানী থানা পুলিশ ওই ক্লাবের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বার বয় জালালের কাছ থেকে সেই রাতের ঘটনা জানতে চায়। ক্লাব কর্তৃপক্ষ এজন্য পুলিশের কাছে সময় চেয়েছেন বলে জানা গেছে।