বিদেশগামী যাত্রীদের কোভিড- ১৯ পরীক্ষার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো রাজধানীর চারটি প্রতিষ্ঠানকে। কিছুদিন তারা ভালো চালিয়েছিলো। কিন্তু এর পরই জড়িয়ে পড়ে দুর্নীতি ও অনিয়মে। তারা দিতে থাকে ভূয়া সনদ। বিদেশগামী যাত্রীরা এ নিয়ে পড়েন বিপদে। টাকা দিয়ে অনেকেই কিনে নেন নেগেটিভ রিপোর্ট। এমন ভয়াবহ অনিয়মের অভিযোগে চারটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম স্থগিত করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিঞা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এসব প্রতিষ্ঠানকে বিদেশগামী যাত্রীদের আরটি-পিসিআর টেস্ট ও নমুনা সংগ্রহের কার্যক্রম স্থগিত করার নির্দেশ দেয়া হয়।
প্রতিষ্ঠান চারটি হলো- রাজধানীর পুরানা পল্টনের আল জামী ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বাংলামোটরের রূপায়ন ট্রেড সেন্টারে অবস্থিত স্টিমজ হেলথ কেয়ার (বিডি), বিজয় স্মরণীর সিএসবিএফ হেলথ সেন্টার এবং মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসেস সেন্টারের মিরপুর ব্রাঞ্চ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো ওই চিঠিতে লেখা হয়েছে, সম্প্রতি এসব প্রতিষ্ঠান বিদেশগামী করোনা পজিটিভ যাত্রীকে নেগেটিভ সনদ দিয়েছে। সেই সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেছে।
এছাড়া নমুনা সংগ্রহের নামে বুথে দালাল নিয়োগের মতো অনৈতিক কর্মে যুক্ত হয়েছে এ চার প্রতিষ্ঠান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিএইচআইএস-২ এর ডাটাবেজ যাচাইয়ের প্রাথমিক অনুসন্ধানে এ চার প্রতিষ্ঠানের এসব অপকর্মের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, বৈশ্বিক মহামারিতে তাদের এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ড অনাকাঙ্ক্ষিত ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ। যা দেশের ভাবমূর্তি ভয়ঙ্কররূপে ক্ষুন্ন করেছে। ফলে এ চার প্রতিষ্ঠানের ও তাদের আওতাধীন সব বুথের নমুনা সংগ্রহসহ বিদেশগামী যাত্রীদের আরটি–পিসিআর টেস্ট কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হলো।
বিদেশগামী যাত্রীদের অনেকেই দালালদের খপ্পরে পড়ে ভুয়া করোনা সনদ সংগ্রহ করছেন। এতে করে তারা প্রতারিত হচ্ছেন। বিদেশগামীদের প্রতারণা থেকে বাঁচতে করোনা টেস্ট করার ক্ষেত্রে আটটি নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
আরটি-পিসিআর পরীক্ষার অনুমোদন পাওয়া দেশের সব বেসরকারি হাসপাতাল ও ল্যাবগুলোকে আটটি নির্দেশনা মানতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এসব নির্দেশনার অমান্য করলে বা এর ব্যত্যয় ঘটলে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
নির্দেশনাগুলো হলো—
১. পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিদেশগামী যাত্রীদের কোভিড-১৯ নমুনা সংগ্রহের জন্য ল্যাবসমূহের নিজস্ব ভবনের বাইরে স্থাপিত সব ধরনের নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
২. বিদেশগামী যাত্রীদের নমুনা কোনো অবস্থাতেই বাসাবাড়ি থেকে সংগ্রহ করা যাবে না।
৩. বিদেশগামী যাত্রীদের নমুনা সংগ্রহের সময় মূল পাসপোর্ট যাচাই করে পাসপোর্ট নাম্বার উল্লেখপূর্বক নমুনা সংগ্রহ ফর্ম পূরণ করতে হবে। কোনোক্রমেই পাসপোর্টের ফটোকপি গ্রহণযোগ্য হবে না।
৪. বিমানবন্দরে বিদেশগামী যাত্রীদের কোভিড-১৯ পরীক্ষা সনদ, পাসপোর্ট নাম্বার দ্বারা যাচাই করা হবে। শুধু টেলিফোন/মোবাইল নাম্বার প্রমাণক হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে।
৫. সাত দিনের মধ্যে কোনো পজিটিভ রিপোর্ট থাকলে ওই যাত্রীকে দেশত্যাগের অনুমতি দেওয়া যাবে না।
৬. কোনো বিদেশগামী যাত্রী কোভিড-১৯ পজিটিভি হলে, সে কমপক্ষে সাত দিন পর শুধু সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ল্যাবে পুনরায় পরীক্ষা করাবেন এবং পরবর্তী সময় যদি নেগেটিভ সনদপ্রাপ্ত হন, সে ক্ষেত্রে দেশত্যাগ করতে পারবেন।
৭. কোনো আরটি-পিসিআর ল্যাবের ব্যাপারে কোনো ধরনের অভিযোগ উত্থাপিত হলে ল্যাবটির কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করে তদন্তসাপেক্ষে পরবর্তী অনুমোদনের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
৮. কোনো বিদেশগামী যাত্রীর কোভিড-১৯ পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি উভয় স্থানে প্রথমে পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে যাচাই করে দেখতে হবে যে, সে গত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অন্য কোথাও আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করেছে কিনা। করে থাকলে এবং পজিটিভ হলে তাকে সাত দিন পর্যন্ত পুনরায় আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করার সুযোগ দেওয়া যাবে না।