বঙ্গবন্ধুর পলাতক চার খুনি শরীফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন খান, এ এম রাশেদ চৌধুরী ও এসএইচএমএইচএমবি নূর চৌধুরীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পাওয়া বীরত্বের খেতাব বাতিল করেছে সরকার।
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সভার সিদ্ধান্তের আলোকে ওই চারজনের খেতাব বাতিল করে রোববার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
তাদের মধ্যে নূর চৌধুরী ‘বীর বিক্রম, শরিফুল হক ডালিম ‘বীর উত্তম’, রাশেদ চৌধুরী ‘বীর প্রতীক’ এবং মোসলেহ উদ্দিন খান ‘বীর প্রতীক’ খেতাবধারী ছিলেন।
খেতাব বাতিল হওয়ায় তারা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য আর কোনো রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা পাবেন না।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এর আগে গত সপ্তাহে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সভায় ওই চারজনের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে। শিগগিরই তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় দণ্ডিত চার পলাতক খুনির খেতাব স্থগিতের জন্য হাই কোর্ট একটি আদেশ দিয়েছিল গতবছরের শেষ দিকে। এরপর গত ফেব্রুয়ারিতে জামুকার বৈঠকে চারজনের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য।
‘সংবিধান লঙ্ঘন, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের দেশত্যাগে সহায়তা এবং তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের’ কারণে সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের ‘বীর উত্তম’ খেতাবও বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছিল জামুকার ওই সভায়।
তবে জিয়ার বিষয়ে মন্ত্রণালয় কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে বিষয়ে কিছু বলেননি মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ঘটনার নেতৃত্বে ছিলেন কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা, যদিও এর পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কথা আওয়ামী লীগ নেতারা বরাবরই বলে আসছেন।
বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার দশ দিনের মাথায় সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পাওয়া জিয়াও ওই হত্যাকাণ্ডে ‘পুরোপুরি’ জড়িত ছিলেন বলে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতির পিতার খুনিদের রক্ষায় সে সময় একটি অধ্যাদেশ জারি করেছিলেন তখনকার ‘স্বঘোষিত’ রাষ্ট্রপতি খোন্দকার মোশতাক আহমেদ। পরে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা নিয়ে সংবিধান সংশোধন করে খুনিদের রক্ষার পথটি স্থায়ী করার প্রয়াস চালান। হত্যাকারীদের নানা পদ দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়।
১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় ফেরার পর ইতিহাসে চিহ্নিত কালো ওই অধ্যাদেশ বাতিলের পর জাতির পিতার খুনের বিচারের পথ খোলে।
এরপর বিচার প্রক্রিয়া শেষে আদালতের চূড়ান্ত রায় অনুযায়ী ছয় খুনির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তবে মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে পাঁচজন এখনও রয়েছেন পলাতক।
এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাই কোর্ট গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর ওই চারজনের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পাওয়া বীরত্বের খেতাব স্থগিতের নির্দেশ দেয়।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ও মন্ত্রীপরিষদ সচিবকে ওই নির্দেশ বাস্তবায়নের পাশাপাশি রুল জারি করে হাই কোর্ট।
সেই প্রেক্ষাপটে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) বৈঠকে খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হয় বলে কর্মকর্তারা জানান।