ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০   রাত ৯:৫৮ 

সর্বশেষ সংবাদ

নিবন্ধে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ পাবনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে, তদন্তে কমিটি

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের প্রকাশিত নিবন্ধে (আর্টিকেল) চৌর্যবৃত্তির (প্ল্যাজিয়ারিজম) অভিযোগ উঠেছে। অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক অভিযোগ করেছেন, তাঁদের প্রকাশিত নিবন্ধ থেকে চৌর্যবৃত্তি করেছেন এই দুই শিক্ষক।
অভিযুক্ত শিক্ষকেরা হলেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আওয়াল কবির এবং অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. ইয়াহিয়া বেপারী। অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম রোস্তম আলী গণমাধ্যমকে বলেছেন, এই ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, অভিযুক্ত দুই শিক্ষক আওয়াল কবির ও ইয়াহিয়া বেপারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শিক্ষাবিষয়ক একটি জার্নালে সম্প্রতি বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে একটি নিবন্ধ লেখেন। এরপর মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রকিব চৌধুরী ও মাহবুব রহমান অভিযোগ করেন, শিক্ষা বিষয়ে তাঁদের লেখা একটি নিবন্ধ থেকে বেশির ভাগ অংশই চৌর্যবৃত্তি করা হয়েছে। এরপর তাঁরা বিষয়টি নিয়ে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে অভিযোগ করেন।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২৯ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের প্রকাশিত নিবন্ধে চৌর্যবৃত্তির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় বলা হয়, এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। তাই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। সভায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত ও পরিবেশ রসায়ন বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির শিক্ষক এম শামীম কায়সার। এই কমিটি অভিযোগের বিষয়ে যাচাই করবে এবং অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে এ বিষয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কী ধরনের শাস্তি দেওয়া হয়েছে, তার আলোকে সুপারিশ করবেন। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
অভিযুক্ত শিক্ষকদের একজন মো. ইয়াহিয়া বেপারী গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি ওই নিবন্ধের সহলেখক। মূল লেখক আওয়াল কবির। তিনি শুধু নিবন্ধের গ্রামাটিক্যাল ও মেথডোলজি বিষয়টি দেখেছেন। তারপরও অভিযোগ পাওয়ার পর তাঁদের প্রকাশিত নিবন্ধ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া তিনি মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষকদের কাছে দুঃখও প্রকাশ করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জানিয়েছেন,ঘটনাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিয়ে ইউজিসিকে জানাতে বলেছে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি ঠেকাতে অ্যান্টি-প্ল্যাজিয়ারিজম সফটওয়্যার ‘টার্নিটিন’ কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। গত রোববার ইউজিসির এক সভায় গবেষণাপত্রে চৌর্যবৃত্তি মোকাবিলায় শিগগির টার্নিটিন সফটওয়্যার ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে ৩০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এই সফটওয়্যারের সেবা সরবরাহ করা হবে।
পর্যায়ক্রমে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এর ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। এ সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে গবেষণার স্বত্ব সংরক্ষণ ও মৌলিকত্ব নিশ্চিত করা সহজ হবে বলে মনে করছে ইউজিসি। সম্প্রতি একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষাপটে ইউজিসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত