স্বাধীনতাবিরোধীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা চেয়ে চিঠি দেয়ার পর গত ৬ মাসে মাত্র দুই হাজার ৫০৪ জনের তালিকা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে ৮৯৭ জন এবং বৃহত্তর রংপুর জেলা থেকে ১৬০৭ জনের নাম পাওয়া গেছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১৮তম বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়। গত ২৩ ফেব্রুয়ারী এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারদের তালিকা অানুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশের উদ্যোগ নিচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। তবে যে গতিতে তালিকা তৈরির কাজ চলছে নির্ধারিত সময়ে নির্ভুল তালিকা তৈরী সম্ভব হবে কি না এ নিয়ে সন্দিহান সংসদীয় কমিটি।
বৈঠকে রাজাকার ও স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা সংগ্রহে ঢিমেতালে গতিকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কমিটির সদস্যরা। মাঠ পার্যায়ে প্রশাসনিক কাজের গতি নিয়েও তারা ক্ষুব্ধ। তবে এখন পর্যন্ত যতটুকু পাওয়া গেছে, তা যাচাই বাছাই করে অবিলম্বে গেজেট আকারে প্রকাশের সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার, আলবদর, আল-শামস ও শান্তি কমিটির সদস্যদের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়নের লক্ষ্যে একটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। উপ-কমিটির কাছ থেকে তালিকা পাওয়া গেলে প্রাপ্ত তালিকাসহ যাচাই-বাছাইপূর্বক গেজেট আকারে প্রকাশের অনুরোধ জানিয়ে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের কাছে পাঠানো হবে।
সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে কমিটির সদস্যরা বিশেষ করে কমিটির সভাপতি ও সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যাচাই-বাছাই অনির্দিষ্টকাল চলতে পারে না এবং এটাকে ‘নিয়মিতকরণ’ বলে সংজ্ঞায়িত করে প্রক্রিয়াটি দ্রুত সম্পন্নের সুপারিশ করা হয়।
উল্লেখ্য ২০২০ সালের ৯ আগষ্ট সংসদীয় কমিটির সভায় স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের তালিকা তৈরি ও তা প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি শাজাহান খানকে আহ্বায়ক করে তালিকা তৈরির জন্য একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়।
রাজাকারদের তালিকা তৈরির জন্য গঠিত সাব-কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন— স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, এবি তাজুল ইসলাম, ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল ও মোসলেম উদ্দিন আহমেদ।
এই তালিকা তৈরিতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের মধ্যে যারা সংসদ সদস্য আছেন, তাদের সহযোগিতা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
এই সাব-কমিটি যুদ্ধকালীন কমান্ডার এবং উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড থেকে রাজাকারদের তথ্য সংগ্রহ করবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য নিয়ে স্বাধীনতাবিরোধীদের ‘বিতর্কিত’ তালিকা প্রকাশের পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। পরে তা বাতিল করা হয়। এবার তড়িঘড়ি করে রাজাকার, আল বদরদের তালিকা প্রকাশ করেও যাতে কোনো সমালোচনার মুখে না পড়তে হয় কমিটি সে দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে বলে জানিয়েছেন একজন সদস্য।
এ জন্য প্রত্যেক জেলা উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারদের ব্রিফ করে দেওয়া হয়েছে। তারা তালিকা তৈরি করবেন। কোনও একক কর্তৃপক্ষ তালিকা করবে না।
কমিটির সভাপতি শাজাহান খান এ প্রসঙ্গে’ “আইন আদালত”কে বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের সরকারি চাকরি দেওয়া হয় না। ‘ভিয়েতনামে তিন প্রজন্ম পর্যন্ত চাকরি দেওয়া হয় না। অথচ বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীরা মন্ত্রী পর্যন্ত হয়েছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে,ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে। কাজেই স্বাধীনতাবিরোধীদের সন্তানরা যাতে সরকারি চাকরি না পায়, সে বিষয়ে কিছু একটা করা দরকার। সেজন্য রাজাকারদের তালিকাটা দরকার। এই কাজটা এবার আমরা করবো।’