ময়মনসিংহের গফরগাঁও ও ভালুকার নয় আসামির বিরুদ্ধে একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের মামলার রায় ঘোষণা করা হবে বৃহস্পতিবার।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও হত্যার মত অপরাধের চারটি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে এ আসামির বিরুদ্ধে।
বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারকের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মঙ্গলবার এ মামলার রায়ের জন্য এ দিন ঠিক করে দেয়।
উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে গত বছরের ২৬ জানুয়ারি মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখা হয়েছিল।
কিন্তু করোনাভাইরাসের মহামারীর কারণে গতবছর একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো মামলারই রায় দিতে পারেনি ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে এ মামলা পরিচালনা করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন, জাহিদ ইমাম, তাপস কান্তি বল ও রেজিয়া সুলতানা চমন। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ান।
“গত বছরের শুরুর দিকে এ মামলার যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের জন্য অপেক্ষমান রেখেছিল ট্রাইব্যুনাল। পরে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি এবং আরও কিছু সমস্যার কারেণ রায় ঘোষণা করা যায়নি। আজ ট্রাইব্যুনাল আদেশ দিয়ে বলেছে, বৃহস্পতিবার এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে।
২০১৮ সালের ৪ মার্চ এ মামলায় মোট ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেছিল ট্রাইব্যুনাল। বিচার চলা অবস্থায় গ্রেপ্তার ও পলাতক দুইজনের মৃত্যু হলে এখন আসামি আছেন ৯ জন।
এই ৯ জনের মধ্যে মো. খলিলুর রহমান মীর, মো. শামসুজ্জামান ওরফে আবুল কালাম, মো. আব্দুল্লাহ, মো. রইছ উদ্দিন আজাদী ওরফে আক্কেল আলী ও আব্দুল লতিফ কারাগারে আছেন।
আর এ এফ এম ফয়জুল্লাহ, আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডল, সিরাজুল ইসলাম তোতা ও আলিম উদ্দিন খান পলাতক।
অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে মো. আব্দুল মালেক আকন্দ ওরফে আবুল হোসেন ওরফে আবুল মেম্বার গ্রেপ্তার হওয়ার পর বিচার চলাকালে মারা যান। পলাতক অবস্থায় মারা যান আসামি নুরুল আমিন শাজাহান।
২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর এ মামলার তদন্ত শুরু হয়। পরে তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনে ট্রাইব্যুনাল ২৫ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায়ের মত অপরাধের তিনটি অভিযোগ এনে ২০১৮ সালের ৪ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
অভিযোগ গঠনের পর ওই বছরের ১০ মে থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ ও শুনানি শুরু হয়। মোট ১৮ জন সাক্ষী এ মামলায় সাক্ষ্য দেন।
সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ২০১৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর যুক্তিতর্ক শুরু হয়ে শেষ হয় গত বছরের ২৬ জানুয়ারি। ওই দিনই মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষায় রাখা হয়।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর রাজশাহীর বোয়ালিয়ার সাবেক শিবির নেতা মো. আব্দুস সাত্তার ওরফে টিপু সুলতানের যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় এসেছিল ট্রাইব্যুনালে। সেই রায়ে টিপু সুলতানকে মৃত্যুদণ্ড দেয় যুদ্ধাপরাধ আদালত।
সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মোট রায় হয়েছে ৪০টি মামলার। এর মধ্যে ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় হয়েছে ২৮টি। আর ট্রাইব্যুনাল-২ রায় দিয়েছে ১২টি।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত রায় আসা ৪১টি মামলার ১০৩ জন আসামির মধ্যে ছয়জন বিচারাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মোট ৯৫ জনের সাজা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৬৮ যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ সাজার রায় এসেছে।