উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনের জন্য সুসংহত আইনি কাঠামোসহ আইনের শাসন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন অপরিহার্য বলে মনে করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, সেকারণেই সরকার বিষয়ভিত্তিক নতুন নতুন আইন প্রণয়ন এবং বিদ্যমান আইন যুগোপযোগী করার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিয়েছে। এক্ষেত্রে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।
লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি অতিথি হিসেবে বনানীর বাসা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন আইনমন্ত্রী ।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রথমবার সরকার গঠনের পর লেজিসলেটিভ ড্রাফটিং উইং প্রতিষ্ঠা করেন এবং ২০০৯ সালে পুনরায় সরকার গঠন করলে ওই বছরের ২৩ ডিসেম্বর উক্ত উইংকে তিনি লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগে উন্নীত করেন। আইনি পরিকাঠামো বিনির্মাণে এ বিভাগ সরকারকে সার্বিক সহায়তা প্রদান করছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে গত কয়েক বছরে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য, পুষ্টি, মাতৃত্ব, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, অবকাঠামো উন্নয়ন, ক্রীড়া, পরিবেশ, টেলিযোগাযোগ, সংস্কৃতি, সামাজিক নিরাপত্তা, জেন্ডার সমতা, নারীর ক্ষমতায়ন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রভূত অগ্রগতি সাধিত হয়েছে যা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও প্রশংসিত হচ্ছে । সরকারের এ সকল কর্মকাণ্ডকে আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে বিভিন্ন আইন, অধ্যাদেশ ও আইনি মর্যাদা সম্পন্ন দলিল, চুক্তি ইত্যাদি প্রণয়নে এ বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
মন্ত্রী জানান, এ বিভাগের সহায়তায় ২০০৯ সাল হতে অদ্যাবধি গুরুত্বপূর্ণ ৫১০টি আইনের খসড়া প্রণয়ন ও ভেটিং, ৪৪টি অধ্যাদেশ প্রণয়ন, ৪৪১৫টি বিধিমালা, প্রবিধানমালা, আদেশ, নীতিমালা ইত্যাদির খসড়া প্রণয়ন ও ভেটিং, প্রায় ৪৫০টি চুক্তি ভেটিং এবং আইনি ব্যবস্থায় জনগণের অভিগম্যতা এবং সকলের কাছে আইনের সহজবোধ্যতা ও সহজলভ্যতা নিশ্চিতকরণ ও আন্তর্জাতিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ১৬৮টি আইন, বিধিমালা ও চুক্তির নির্ভরযোগ্য অনূদিত পাঠ প্রণয়ন করা হয়েছে।
তিনি জানান, “ল’জ অব বাংলাদেশ” (http://bdlaws.minlaw.gov.bd) website টি বাংলাদেশের প্রচলিত ১৭৯৯ হতে অদ্যাবধি সকল আইনের একটা বিশাল অনলাইন ভাণ্ডার। যার মাধ্যমে একজন ব্যবহারকারী তার চাহিদামত সর্বশেষ প্রকাশিত আইন ও অধ্যাদেশ এবং উহার সফট্কপি ডাউনলোডসহ প্রয়োজনে প্রিন্ট করতে পারেন। বর্তমানে এটাই বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের একমাত্র ওয়েব পোর্টাল যা প্রতিদিন প্রায় ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার বার অনুসন্ধান হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, রূপকল্প বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় স্বল্প সময়ের মধ্যে একটি মধ্য-আয়ের, জ্ঞানভিত্তিক, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধশালী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারের নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর যাদুকরি নেতৃত্বে দেশ আজ বিস্ময়কর অর্থনৈতিক উন্নতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধন করে চলছে।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মানবাধিকারের সংগ্রামের ফসল হিসেবে। আর এই ফসল ফলিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বর্তমান সরকারই ১৯৯৬ সনে তাদের যুগান্তকারী রাজনৈতিক উত্থানের পর দেশে একটি মানবাধিকারের পরিবেশ সৃষ্টি এবং পূর্বসূরিদের অনুসৃত বিচারহীনতার সংস্কৃতি তিরোহিত করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা প্রথম অনুভব করতে পেরেছিলেন।
বক্তৃতায় লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের গুরুত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে লেজিসলেটিভ ক্যাডার সার্ভিস গঠনের বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে।
লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব মো. মইনুল কবির এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার সহ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানের প্রথমে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর অবদান এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট ও কার্যক্রম নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।