ঢাকা   শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১   রাত ১:২৪ 

সর্বশেষ সংবাদ

মুজিব ভাস্কর্য: ‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিতর্ক চলবে না’- দুবৃত্তদের কঠোর হাতে দমন করার অঙ্গীকার, দেশজুড়ে আমলাদের সমাবেশ

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুর ও অবমাননার প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকাসহ দেশজুড়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন সরকারি কর্মকর্তারা।
শনিবার ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘গভর্নমেন্ট অফিসিয়াল ফোরাম’-এর ব্যানারে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন কর্মসূচিটি সমন্বয় করে।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘আমরা আমাদের জীবদ্দশায় জাতির পিতার প্রতি কোনো রকম অপমান বা অসম্মান হতে দেব না। এটাই আমাদের আজকের অঙ্গীকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জনগণের সেবক। জাতির পিতা আমাদের সংবিধানের অংশ। সংবিধান রক্ষা করাই আমাদের দায়িত্ব।’
বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদ এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবিধানিকভাবে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃত। বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার সম্পর্ক নিবিড়।’
‘বঙ্গবন্ধুর ওপর কোনো ধরণের আক্রমণ ও অপমান সহ্য করা হবে না,’ যোগ করেন তিনি।
এতে পুলিশের আইজিপি বেনজির আহমেদসহ বিসিএস এর সবগুলোর ক্যাডারের অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও মহাসচিবরাসহ প্রায় সব পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা যোগ দেন।
সমাবেশে দেয়া বক্তৃতায় পুলিশের আইজিপি বেনজির আহমেদ বলেন, “স্বাধীনতা, সংবিধান, রাষ্ট্র ও জাতির জনক- নো বডি ক্যান টাচ দেম”।
“আমরা তাদের মোকাবেলা করবো। বঙ্গবন্ধু দেশ, পতাকা, মানচিত্র দিয়েছেন। তার ওপর হামলা সংবিধানের ও রাষ্ট্রের ওপর হামলা। রাষ্ট্র অবশ্যই বিধিবিধান অনুযায়ী কঠোর হস্তে মোকাবেলা করবে”।
বিসিএস অডিট ও অ্যাকাউন্টস এসোসিয়েশনের মহাসচিব গোলাম সারোয়ার ভুঁইয়া বলেন, “জাতির পিতাকে যারা অসম্মান করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ করছি”।
বিসিএস কর অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ফজলে হায়াত কায়সার বলেন, “বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ হতোনা, আর বাংলাদেশ না হলে এত ক্যাডার সার্ভিস হতোনা। ভাস্কর্য যারা ভেঙ্গেছে তারা দেশবিরোধী, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি”।
বিসিএস শুষ্ক ও আবগারি ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব কাস্টমস কমিশনার বলেন, “এখনো এ দেশে কিছু মানুষ দেখা যাচ্ছে যারা জাতির পিতাকে অশ্রদ্ধা করছেন। ভাস্কর্য ভাঙ্গার মতো দুঃসাহস দেখাচ্ছে। তাদের প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করছি”।
তিনি বলেন, “অনেক মুসলিম দেশে ভাস্কর্য আছে। আমরা কি তাহলে বেশি মুসলমান হয়ে গেছি। আসলে তারা স্বাধীনতার প্রতি আঘাত করতে চায়। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, বঙ্গবন্ধু- এসব নিয়ে বিতর্কের সুযোগ নেই”।
বিসিএস তথ্য ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, “স্বাধীনতার বিপক্ষে যারা থাকবে তাদের বিপক্ষে সরকারি কর্মকর্তাদের কণ্ঠ সোচ্চার থাকবে”।
“ভাস্কর্য মোটেও ধর্মীয় বিষয় নয়, এটি শিল্পকর্মের অংশ। বাংলাদেশ এটি যুগ যুগ ধরে প্রচলিত। হঠাৎ করে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে এতো কথা কেন। এটি হলো রাজনীতি। কর্মকর্তাদের স্বাধীনতার প্রশ্নে অবস্থান থাকতে হবে”।
বিসিএস গণপূর্ত ক্যাডারের পক্ষে গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, “যারা বাংলাদেশের চাকা পেছনে নিতে চায় সেই একাত্তরের পরাজিত শক্তি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীকে বেছে নিয়েছে”।
“তারা রাতের অন্ধকারে ভাস্কর্য ভেঙ্গেছে । আমরা এটাকে সহজভাবে মেনে নিতে পারিনা”।
বিসিএস সড়ক ও জনপথে প্রকৌশলী সমিতি, বিসিএস টেলিকম সমিতি, বিসিএস কৃষি ক্যাডার, বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার সহ প্রায় প্রতিটি সেক্টরে বিসিএস কর্মকর্তাদের অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ সমাবেশে বক্তব্য দেন।
খাদ্য সচিব মোসাম্মৎ নাজমানারা খানুম, আইন ও বিচার বিভাগের যুগ্ম সচিব বিকাশ কুমার সাহা, বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক আ ম সেলিম রেজা, বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ মাসুদ মাহমুদ খন্দকার, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক প্রমুখ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদে দেশব্যাপী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিক্ষোভ ঃঃ

বঙ্গবন্ধুর সম্মান অটুট রাখতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় রাজপথে নেমেছে বিচারক-পুলিশসহ প্রশাসন। ভাস্কর্য অবমাননার প্রতিবাদ জানিয়ে শনিবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল থেকে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানববন্ধন, মৌন মিছিল এবং বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন।

জাতির পিতার সম্মান অটুট রাখার অঙ্গীকারে মাঠে নামেন চট্টগ্রামের বিচারক-পুলিশসহ প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তারা। ভাস্কর্য অবমাননার প্রতিবাদ জানিয়ে সকাল থেকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানববন্ধন, মৌন মিছিল এবং বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।

নগরীর দামপাড়া থেকে শুরু হয় দিনভর এ কর্মসূচি। প্রথমে মানববন্ধন করেন বিচারক-পুলিশসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা। এরপর তারা মিছিল নিয়ে সমবেত হন শিল্পকলা একাডেমির মুক্ত মঞ্চে। মুর্হতের মধ্যে পুরো চত্বর লোকে-লোকারণ্য হয়ে উঠে। “জাতির পিতার সম্মান-রাখবো মোরা অম্লান” শ্লোগানে সাজানো মঞ্চে বঙ্গবন্ধুর বীরগাঁথা শোনানোর পাশাপাশি ভাস্কর্য বিরোধীদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে একে একে বক্তব্য রাখেন বিচারকসহ সর্বস্তরের কর্মকর্তারা।
এতে বক্তব্য রাখেন মহানগর দায়রা জজ আশফাকুর রহমান, জেলা ও দায়রা জজ ইসমাইল হোসেন, বিভাগীয় পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পরিচালক আবু সাঈদ।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ইসমাইল হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এ প্রতিবাদী কর্মসূচিতে বক্তারা যে কোনো মূল্যে জাতির জনকের ভাস্কর্য রক্ষা এবং তার সম্মান অটুট রাখার অঙ্গীকার করেন। তারা বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে মৌলবাদী গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র শুরু হওয়ার পর প্রথম প্রতিবাদ শুরু হয়েছিলো চট্টগ্রাম থেকেই। এবার চট্টগ্রামের সর্বস্তরে সরকারি কর্মকর্তারা সেই প্রতিবাদের মিছিলে সামিল হলেন।

কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধু নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদে বাগেরহাটেও মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টায় বাগেরহাট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে জেলায় কর্মরত সরকারি কর্মকর্তারা এই প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন, বাগেরহাট জেলা ও দায়রা জজ গাজী রহমান, পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায়, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. খালেদ কনক, বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোছাব্বেরুল ইসলাম, বাগেরহাট সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রদীপ কুমার বকসী প্রমুখ। এছাড়া বাগেরহাটে কর্মরত সকল সরকারি দপ্তরের দপ্তর প্রধান ও প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তারা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন।
 
জাতির পিতার ভাস্কর্য অবমাননার প্রতিবাদে সিরাজগঞ্জে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের আয়োজনে শহীদ এম মনসুর আলী অডিটরিয়ামে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহম্মদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, বিচার বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা, কর্মচারিসহ সরকারি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এসময় বক্তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য অবমাননা এবং কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান।

সাম্প্রতিক সময়ে কতিপয় দুষ্কৃতিকারী কর্তৃক স্বাধীনতার মহান স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুর ও অবমাননার প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে সভা করেছেন সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস।

এদিকে সুনামগঞ্জে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তরা বলেন, ভাস্কর্য ভেঙে স্বাধীনতা বিরোধীরা পাকিস্তানের আদর্শ বাস্তবায়ন করতে চায়। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী কোটি কোটি মানুষ তা মেনে নেবেন না।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদের সভাপতিত্বে ও সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলামের পরিচালনায় প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা ও দায়রা জজ ওয়াহিদুজ্জামান শিকদার, পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, সিভিল সার্জন মো. শামছ উদ্দিন,কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. ফরিদুল হাসান, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাবুব আলম,বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সৈকত দাসসহ জেলা প্রশাসন ও জেলায় কর্মরত বিভিন্ন অফিস প্রধানগণ। প্রতিবাদ সমাবেশে জেলায় কর্মরত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও রাজশাহী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোনা, চাঁদপুর, ঝালকাঠি, মুন্সীগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মোংলা, ভোলা, বগুড়া, ঠাকুরগাঁও, রাঙামাটি, নাটোর, কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত