ঢাকা   শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১   সন্ধ্যা ৬:২৬ 

সর্বশেষ সংবাদ

মর্গে মৃত নারীদের নিয়মিত ধর্ষণ করতো সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ডোম সহকারী মুন্না, যেভাবে ধরা পড়লো সিআইডির কাছে

ভয়ঙ্কর ও বিকৃত এক মানসিক বিকারগ্রস্ত মুন্না ভক্ত। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গের ডোমের সহকারী, মাত্র ২০ বছর বয়েসী মুন্না হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য নেওয়া নারীদের মরদেহের সঙ্গে ‘যৌন লালসা চরিতার্থ’ করতো। গত দেড় বছর ধরে মর্গে মৃত নারীদের সে ধর্ষণ করে আসছে। শেষ পর্যন্ত পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভিগ, সিআইডির হাতে তাকে ধরা পড়তে হয়েছে। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর মুন্নাকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে গ্রেফতারের পর বের হয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিকৃত রুচির ডোম সহকারি মুন্নাকে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে মৃতদেহের সঙ্গে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে বলে সিআইডি সূত্র জানিয়েছে।
গ্রেফতার হওয়া মুন্না ওই হাসপাতালের মর্গের ডোমের সহকারী হিসেবে কাজ করতো।
সিআইডির ধারণা, অন্তত দেড় বছর ধরে মর্গে আসা নারীদের মরদেহের সঙ্গে যৌন মিলন করে আসছে অভিযুক্ত। বিশেষ করে আত্মহত্যার মতো ঘটনায় যেসব তরুণীর মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গে আসতো মুন্না সেই তরুণীর মৃতদেহে সঙ্গে যৌনতায় মেতে ওঠতো।
সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশে ধর্ষণ, হত্যাসহ যেসব ঘটনায় মরদেহ ময়নাতদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়, সেসব আলামতের ডিএনএ পরীক্ষা এবং প্রোফাইল তৈরি করে থাকে সিআইডি।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন সময়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থেকে আসা ৫ নারীর মরদেহে একই পুরুষের শুক্রানুর আলামতের উপস্থিতি মিলে যাওয়ার পর ঘটনার তদন্তের শুরুতে সিরিয়াল কিলার কিংবা সিরিয়াল রেপিস্টদের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বলে সন্দেহ হয়। কিন্তু সুরতহাল কিংবা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে এসব মরদেহের কোনোটিতেই কোনো আঘাতের চিহ্ন না পাওয়ায় সন্দেহ বাড়তে থাকে। নানা প্রশ্নের জবাব খুঁজতে থাকে সিআইডি। এর মধ্যে একটি সন্দেহ, হাসপাতালের মর্গে মৃত নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে না তো? কারণ অপরাধ বিজ্ঞানে এমন নজির রয়েছে। এমন বিকৃত রুচির ঘটনা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানেও এমন মানসিক রোগির কথা বলা আছে।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালটির মর্গের কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে অনুসন্ধান করে সিআইডি জানতে পারে যে, ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে নেওয়া মরদেহ ব্যবচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে পরের দিন মর্গে রেখে দেয়া হতো।
মর্গের কার্যপদ্ধতি বিশ্লেষণ করার পর তদন্তকারীদের সন্দেহ হয়, মর্গের ডোমদের কেউ অপরাধ সংঘটন করে থাকতে পারে।
সন্দেহের ভিত্তিতে ওই হাসপাতালের ডোমদের গতিবিধি নজরদারি করে তদন্তকারীরা। ওই তদন্তের সময় জানা যায় যে হাসপতালটির একজন ডোম মুন্না পাঁচটি ঘটনার সময় ভুক্তভোগীর মরদেহ পাহারা দেওয়ার জন্য রাতে মর্গে ছিল।
এরপর বিস্তারিত তদন্তের পর তথ্যপ্রমাণ সাপেক্ষে সিআইডি নিশ্চিত হয় যে অভিযুক্ত ডোম মুন্না এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত। সিআইডি কৌশলে মুন্নার ডিএনএ পরীক্ষা করে নেয়। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে গাঢাকা দেয় মুন্না। পরে গত ১৯ নভেম্বর রাতে সিআইডি তাকে গ্রেফতার করে।
সিআইডি জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মুন্না তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ স্বীকার করেছে।
সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, ডোমের সহযোগী মুন্না গত দুই-তিন বছর ধরে এই কাজ করে আসছে । রাতে সে মর্গেই ঘুমাতো। রাতে ওই হাসপাতালে আসা লাশ সে পাহারা দিতো। আত্মহত্যার কারণে ময়নাতদন্তের জন্য কোনো তরুণীর লাশ আসলেই সে কৌশলে রাতে মেতে উঠতো বিকৃত যৌনাচারে। আত্মহত্যাকারী ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী মেয়েরাই ছিল মুন্নার বিকৃতির লক্ষ্য। মুন্না ওই হাসপাতালের স্টাফ না হয়েও মামার সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছিল বলে জানিয়েছে সিআইডি।
সিআইডি আরও জানায়, ডিএনএ পরীক্ষায় আত্মহত্যাকারীদের লাশের ময়নাতদন্তের আগে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়। প্রতিটি ধর্ষণই রাতের নিরিবিলি সময়ে হতো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত