দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের ইউএনও ওয়াহিদা খানমের উপর হামলার ঘটনায় মোড় ঘুরে গেলো। পুলিশের তদন্তে বের হয়ে এসেছে, ইউএনওর উপর হামলা করেছে তারই অফিসে চুরির অভিযোগে বরখাস্তকৃত এক কর্মচারী রবিউল।
শনিবার বিকেলে দিনাজপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করে এ কথা জানান রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গ্রেপ্তার রবিউল বিরল উপজেলার ধামহার গ্রামের বাসিন্দা। জিজ্ঞাসাবাদে সে হামলার কথা স্বীকার করেছে।
বিকেলেই তাকে আদালতে হাজির করে ৬ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পাওয়া গেছে।
ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদের বরখাস্ত এক মালি রবিউল ইসলামকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়ে ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য বলেছেন, এই ব্যক্তিই ওই হামলায় জড়িত।
গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে বাসভবনের ভেন্টিলেটর দিয়ে ঢুকে ইউএনও ওয়াহিদা ও তার বাবা ওমর আলীর উপর হামলা চালানো হয়। মাথায় হাতুড়ির আঘাতে গুরুতর আহত ওয়াহিদা এখন ঢাকায় নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানিয়েছে, ইউএনওর উপর হামলার ঘটনাটি নিয়ে দেশজুড়ে শোরগোলের মধ্যে দুদিন পর তিনজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৩ অধিনায়ক রেজা আহমেদ ফেরদৌস রংপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে বলেন, চুরি করতে ওই বাড়িতে ঢুকেছিল আসাদুল (৩৫)। তার সহযোগী ছিল নবীরুল ইসলাম (৩৪) ও সান্টু কুমার বিশ্বাস (২৮)।
আলোচিত এই ঘটনার ছায়া তদন্তে নামা র্যাব এটাও বলেছিল যে আসাদুল ‘নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার’ করেছেন।
র্যাব বলেছিল, এই আসাদুল হক চুরি করতে গিয়ে ইউএনওর উপর হামলা চালিয়েছিল; এখন পুলিশ বলছে অন্য কথা।
তবে এই ঘটনা নিছক চুরির ঘটনা কি না এ নিয়ে নানা সন্দেহ হয়।
নিজেদের তদন্তের অগ্রগতি তুলে ধরে শনিবার ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য দিনাজপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে আসেন।
তিনি বলেন, “ইতিপূর্বে আটক আসাদুল জড়িত নয়।”
ঘোড়াঘাট উপজেলার সাগরপুর এলাকার আসাদুল এখন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে রয়েছেন। ডিবিই এই মামলার তদন্ত করছে।
আসাদুল যুবলীগে যুক্ত ছিলেন। গ্রেপ্তারের পর তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।
বরখাস্ত মালি রবিউল ইসলামকে শুক্রবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান ডিআইজি দেবদাস। রবিউলের বাড়ি বিরল উপজেলার বিজোড়া গ্রামে।
ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, “রবিউলকে গ্রেপ্তারের পর রাতেই তাকে নিয়ে অভিযান চালিয়ে ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদের পুকুর থেকে হাতুড়ি উদ্ধার করা হয়েছে। সে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।”
রবিউলের উদ্দেশ্য কী ছিল- তা জানতে তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
“এই ঘটনার সাথে আর কারা জড়িত আছে কি না, কী কারণে এই ঘটনা ঘটিয়েছে, সে বিষয়গুলো তদন্ত করা হবে।”
শনিবার বিকালে রবিউলকে আদালতে হাজির করে ৬ দিনের রিমান্ডের অনুমতি পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা ডিবির ওসি ইমাম জাফর।
ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদ একজন কর্মচারী জানিয়েছেন, চার মাস আগে ইউএনওর ভ্যানেটি ব্যাগ থেকে ৫০ হাজার টাকা চুরির ঘটনা ঘটে। এতে মালি রবিউলকে সন্দেহ হলে সে অস্বীকার করে। পরে সিসি ক্যামেরায় দেখা যায় রবিউল টাতা চুরি করছে। এ অভিযোগে রবিউলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল।
হামলার পর ইউএনওর ভাই শেখ ফরিদ অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে একটি মামলা করেন। যা তদন্ত করছে ডিবি।