ঢাকা   শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০   সন্ধ্যা ৬:৪৬ 

সর্বশেষ সংবাদ

ভাসানচর বসবাসের উপযোগী কি না দেখতে গেছেন ৪০ রোহিঙ্গা নেতা, তত্বাবধানে সেনাবাহিনী

বসবাসের উপযোগী কি না তা দেখতে কক্সবাজারের শরাণার্থী শিবিরের দুই নারীসহ ৪০ জন রোহিঙ্গা নেতা শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচর পৌঁছেছেন। ঘিঞ্চি শরণার্থী শিবির থেকে কমপক্ষে এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে ওঠা ওই দ্বীপে পাঠানোর অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
শনিবার বিকাল ৫টার দিকে রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধি দল ভাসানচরে পৌঁছেছে জানিয়ে সেনাবাহিনীর রামু-১০ পদাতিক ডিভিশনের মুখপাত্র মেজর ওমর ফারুক বলেন, ৪০ জন রোহিঙ্গা নেতার একটি প্রতিনিধি দল শনিবার ভোরে ভাসানচর দেখতে রওয়ানা দেন। তারা দুপুরে চট্রগ্রামে পৌঁছান। পরে সেখান থেকে জাহাজে করে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভাসানচরে পৌঁছান। বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

শনিবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে ভাসানচর দেখতে যাওয়া কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা মুঠোফোনে জানান, বিকাল ৫টার দিকে আমরা ভাসানচরে পৌঁছেছি। এরপর একটি কক্ষে আমাদের ভাসানচরের আবাসন ব্যবস্থাপনা নিয়ে তৈরি ভিডিও চিত্র দেখান সেখানকার কর্মকর্তারা। রাত হয়ে যাওয়ায় রবিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে তাদের কার্যক্রম শুরু হবে। তবে ভাসানচরের যাতায়াত ব্যবস্থা নিয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে যে শঙ্কার কথা শুনছিলাম এখানে এসে সেটি মনে হয়নি। সরকারকে ধন্যবাদ জানাই আমাদের ভালো ব্যবস্থাপনায় ভাসানচরে নিয়ে আসার জন্য।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভাসানচরে যাচ্ছেন। সরকারের আশা, রোহিঙ্গা নেতারা দেখে এসে অন্যদের বোঝালে ভাসানচর যেতে রাজি হবেন শরণার্থীরা। এই দলের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সহায়তাকারী জাতিসংঘের কোনও সংস্থার প্রতিনিধি বা গণমাধ্যমর্কীরা থাকছেন না। তবে আগে থেকে ভাসানচরে আরআরআরসি কার্যালয়ের তিন কর্মকর্তা সেখানে অবস্থান করছেন।
হাতিয়ার সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) গোলাম ফারুক বলেন, কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধি দলটি বিকেল ৫টায় ভাসানচরে পৌঁছেন। তাদের সেখানে একটি সেন্টারে রাখা হয়েছে। রবিবার থেকে তাদের কার্যক্রম শুরু হবে। মূলত বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন কতৃর্পক্ষ বিষয়টি দেখছেন।

জাতিসংঘসহ শরণার্থীদের মানবিক সেবাদানকারী আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর বিরোধিতা সত্ত্বেও কমপক্ষে এক লাখ শরণার্থীকে ওই দ্বীপে স্থানান্তর করার লক্ষ্যে চলমান সরকারি প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
এ বিষয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) ঢাকাস্থ কার্যালয়ের মুখপাত্র মোস্তফা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এ সর্ম্পকে আমরা কিছুই জানি না। আমাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা হয়নি। তাছাড়া ভাসানচরে থাকা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে তাদের স্বজনেরাও যোগাযোগ করতে পারছেন না। এখনও আমরা সরকারের নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করছি।
এদিকে শুক্রবার দুপুরে টেকনাফের নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে রোহিঙ্গা নেতারা তিন চার দিনের প্রস্তুতি নিয়ে ক্যাম্প ইনচার্জের (সিআইসি) কার্যালয়ে পৌঁছানোর পর সেনা প্রহরায় মাইক্রোবাসে করে উখিয়া রওয়ানা দিয়েছেন। প্রতিনিধিরা উখিয়ায় পৌঁছানোর পর শুক্রবার রাতেই তাদের সঙ্গে দেখা করে আরআরআরসি মাহবুব আলম তালুকদার ভাসানচরের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
শুক্রবার তাদের রাত কাটে উখিয়ায় কুতুপালংয়ের ট্রানজিট পয়েন্টে। সেখান থেকে শনিবার ভোরে বাসে করে তারা ভাসানচরের উদ্দ্যেশে রওনা হয়েছে বলে জানিয়ে জাদিমুরা ও শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (সিআইসি) মোহাম্মদ খালিদ হোসেন বলেন, শনিবার বিকেলে তারা সেখানে পৌঁছায়।

আগেই সব প্রতিনিধির করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে জানিয়ে টেকনাফ জাদিমুরা শরণার্থী শিবিরের হেড মাঝি মো. কালাম বলেন, শুক্রবার রওয়ানা দেওয়ার আগে তাদের সবার সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষাও হয়েছে। শনিবার ভোরে দুই নারীসহ ৪০ জনের একটি দল ভাসানচরের উদ্দ্যেশে উখিয়া থেকে রওয়ানা হয়েছে। সব ঠিক থাকলে হয়তো রাতের মধ্যে আমরা সেখানে পৌঁছব।
শরণার্থী শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন-১৬) পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হেমায়েতুল ইসলাম বলেন, পরিদর্শনের পর রোহিঙ্গা নেতারা ভাসানচরে যাওয়ার স্বপক্ষে জনমত গড়ে তুলতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে। গত জুলাইয়ের শেষ দিকে রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দলের তালিকা তৈরি করা হয়েছিল।
টেকনাফের শালবন রোহিঙ্গা শিবিরের হেড মাঝি মো. নুর বলেন, ভাসানচর যদি বসবাসের উপযুক্ত হয় তবে অবশ্যই রোহিঙ্গারা সেখানে যাবে। আমরা স্বচক্ষে দেখে এলে সবাইকে বোঝাতে পারব। সেই উদ্দ্যেশে সেখানে যাওয়া।

এর আগে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মাহবুব আলম তালুকদার জানিয়েছেন, শনিবার ভোরে ভাসানচর দেখতে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা নেতাদের একটি প্রতিনিধি দল রওনা হয়েছে। তারা বিকালে ভাসানচরে পৌঁছবেন।

কেমন আছেন ভাসানচরের রোহিঙ্গারা?
বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা তিন শতাধিক রোহিঙ্গাকে গত মে মাসে ভাসানচরে নিয়ে যায় সরকার। জুলাইয়ে ইউএনএইচসিআর-এর কক্সবাজার কার্যালয়ের মুখপাত্র লুইস ডোনোভান বলেছিলেন, ওই শরণার্থীদের জন্য সেখানে জাতিসংঘের প্রবেশাধিকার এখন খুবই জরুরি।
নোয়াখালীর জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেছেন, কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির থেকে রোহিঙ্গা নেতাদের একটি দল সন্ধ্যায় তার এলাকার ভাসানচরে পৌঁছার কথা। মূলত তারা ভাসানচরে থাকার উপযোগী কিনা সেই বিষয়ে পরির্দশনে আসছে।
প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচরে আশ্রয় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস থেকে সেখানকার ৪০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা রক্ষা করতে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ এবং এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের এক সভায় ভাসানচরের জন্য নেওয়া প্রকল্পের খরচ ৭৮৩ কোটি টাকা বাড়িয়ে তিন হাজার ৯৫ কোটি টাকা করা হয়। বাড়তি টাকা বাঁধের উচ্চতা ১০ ফুট থেকে বাড়িয়ে ১৯ ফুট করা, আনুষঙ্গিক সুবিধা বৃদ্ধিসহ জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের জন্য ভবন ও জেটি নির্মাণে খরচ হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত