দেশে বড় ধরণের একটি জঙ্গি হামলার ছক নস্যাৎ করে দিয়েছে পুলিশ। দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় শহর সিলেট থেকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৫ জঙ্গিকে। এরা নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন নব্য জামাতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ, জেএমবি’র সদস্য।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের (সিটিটিসি) একটি টিম এই অভিযান চালায়।
গ্রেপ্তারকৃত জঙ্গিদের ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে এবং আদালতে মাধ্যমে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
গোয়েন্দারা জানিয়েছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গিরা স্বীকার করেছে তারা হযরত শাহজালালের মাজারে এবং সিলেটের যুগলটিলা ইসকন মন্দিরে হামলা চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল। গত মাসখানেক ধরে তারা রেকি করছিল। মাজারে নিয়মিত যেতো এবং ইসকন মন্দিরেও খোঁজ খবর রাখা হচ্ছিল। কিন্তু আইনশৃংখলা বাহিনীর তৎপরতায় হামলা চালানো সম্ভব হচ্ছিল না।
প্রসঙ্গত গত কোরবানির ঈদের আগে সারাদেশে জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় পুলিশের সব ইউনিটে সতর্কতা জারি করে পুলিশ সদর দপ্তর যা এখনো প্রত্যাহার হয় নি।
বুধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মোঃ মনিরুল ইসলাম।
তিনি জানান, পুলিশের এই বিশেষ টিমটি অপারেশন “এলিগ্যান্ট বাইট ” নামক এক অভিযান চালিয়ে ১১ আগস্ট সিলেটের মিরাবাজার, টুকের বাজার, দক্ষিণ সুরমার বিভিন্ন স্থান হতে ৫ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- শেখ সুলতান মোহাম্মদ নাইমুজ্জামান (২৬), সানাউল ইসলাম সাদি (২৮), রুবেল আহমেদ (২৮), আব্দুর রহিম জুয়েল (৩০) ও সায়েম মির্জা (২৪)। এসময় তাদের হেফাজত হতে বোমা তৈরির সরঞ্জাম, ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
ব্রিফিংয়ে মনিরুল জানান, গ্রেফতারকৃতরা নব্য জেএমবি’র সামরিক শাখার সদস্য। তারা কথিত আইএস এর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ঈদুল আযহার আগেই দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এর অংশ হিসেবে তারা ২৪ জুলাই ঢাকার পল্টনে পুলিশ চেকপোস্টের পাশে, গত ৩১ জুলাই নওগাঁ জেলার সাপাহার এলাকায় হিন্দু ধর্মালম্বিদের মন্দিরে বোমা হামলা করে। গত ২৩ জুলাই হযরত শাহজালাল (রহঃ) মাজার শরীফে আরেকটি হামলার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এর মধ্যে তারা পল্টন ও সাপাহারে বোমা বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম হয়। কিন্তু সিলেটে পুলিশের কড়া নজরদারির কারণে ব্যর্থ হয়।
আটককৃতরা আরো জানায় নব্য জেএমবি’র শুরা সদস্য শেখ সুলতান মোহাম্মদ নাইমুজ্জামান এর নেতৃত্বে তারা সিলেটের শাপলাবাগের একটি বাসায় কম্পিউটার প্রশিক্ষণের আড়ালে সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলো। আটককৃতদের মধ্যে শেখ সুলতান মোহাম্মদ নাইমুজ্জামান কফি শপে (বারিস্তা) কপি মেকার হিসেবে কাজ করে, ২০১৯ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে অনার্স সম্পন্ন করে। সে ছাত্রজীবনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সক্রিয় সদস্য ছিলো। সে সামরিক শাখার প্রধান প্রশিক্ষক এবং সামরিক প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে সিলেটের শাপলাবাগের বাসাটি ভাড়া নেয়। সানাউল ইসলাম শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্র। রুবেল আহমেদ ২০১৬ সালে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ব্লু বার্ড সিলেট শাখা থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দেয়। সে সিলেটে টুকেরবাজারে সার, বীজ ও কিটনাশকের ব্যবসা করে। আব্দুর রহিম জুয়েল রেন্ট এ কারের ড্রাইভার হিসেবে কাজ করত। তার গাড়ি ব্যবহার করে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করেছিলো। সায়েম মির্জা সিলেটের মদন মোহন কলেজের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র।
উল্লেখ্য যে, ২৪ জুলাই রাত সাড়ে ৯ টার সময় পল্টন মডেল থানার পুরানা পল্টন এলাকায় বোমা বিস্ফোরনের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল হতে আইইডিতে ব্যবহৃত ইলেকট্রিক টেপ, জিআই পাইপের কনটেইনার, সার্কিটের অংশ, তারের অংশ বিশেষ, লোহার তৈরি বিয়ারিং ও বল, নাইন ভোল্ট ব্যাটারির অংশ বিশেষ উদ্ধার করা হয়। এ সংক্রান্ত মামলা তদন্ত করতে গিয়েই ওঠে আসে জঙ্গিদের পরিকল্পনার কথা।
এ দিকে গ্রেপ্তার ৫ জঙ্গিকে রাজধানীর পল্টনে পুলিশের চেকপোস্টের পাশে গত ২৪ জুলাই বোমা বিস্ফোরণের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম এই আদেশ দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পাঁচ আসামিকে হাজির করে ১০ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক পাঁচজনকে সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন।
প্রসঙ্গত, হযরত শাহজালাল মাজারে জঙ্গিরা ১৫ বছর আগে গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল। লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশে নিযুক্ত বৃটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীকে খতম করা। তিনি মাজারে গিয়েছিলেন জিয়ারত করতে। গ্রেনেড বিষ্ফোরণে কয়েকজন মারা গেলেও আনোয়ার চৌধুরী আহত হয়েছিলেন।