ঢাকা   শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১   সকাল ৮:৪১ 

সর্বশেষ সংবাদ

রেল কন্টেইনারে পণ্য পরিবহন শুরু, বাংলাদেশ-ভারত অর্থনৈতিক সম্পর্ক নতুন মাইলফলকে

বাংলাদেশ ভারতের অর্থনীতি এক নতুন দীগন্তের দিকে যাচ্ছে। বিশেষ করে রেল কন্টেইনারে পণ্য পরিবহন শুরু হওয়ায় দুদেশের বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক নতুন মাইলফলকে পৌঁছেছে বলে মন্তব্য করেছে ভারতের প্রভাশালী সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্থান টাইমস।

হিন্দুস্তান টাইমসের নির্বাহী সম্পাদক শিশির গুপ্তের লেখা এই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সপ্তাহে দুই দেশের মধ্যে রেল কন্টেইনারে পণ্য পরিবহনের যে কর্যক্রম শুরু হয়েছে, তা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে আরও গতি আনবে, অর্থনৈতিক সম্পর্কে আরও মজবুত ও টেকসই করতে কাজ করবে ‘গেইম চেইঞ্জার’ হিসেবে। ফলে একে সম্পর্কোন্নয়নের পথে এক ধাপ অগ্রগতি হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

ভারত থেকে গত রোববার প্রথম কন্টেইনারবাহী ট্রেন বাংলাদেশের বেনাপোল সীমান্তে আসে। ‘ইলেট্রনিক্যালি সিলড’ এসব কন্টেইনার সাধারণ পণ্যবাহী ট্রেনের চেয়ে নিরাপদ এবং তা ট্রাকে পণ্য পরিবহনের চেয়ে সাশ্রয়ী ও দ্রুত গতির। প্রথম চালানে সাবান, শ্যাম্পু ও টেক্সটাইল ফেব্রিকের মতো ভোগ্যপণ্য বাংলাদেশে পৌঁছায়।

ঢাকা ও নয়া দিল্লির কূটনীতিকদের বরাত দিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস লিখেছে, কন্টেইনার ট্রেনে পণ্য পরিবহন কেবল বাংলাদেশে ভারতের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের রপ্তানিতে সহায়তা করবে না, বাংলাদেশি পণ্যও কম খরচে ও স্বল্প সময়ে ভারতে রপ্তানিতে সহায়ক হবে। সীমান্তে ‘একটি চক্রের অনিয়ম-চাঁদাবাজির কারণে’ ভারত-বাংলাদেশে ট্রাক চলাচলে যে ক্ষতি হয়, তা এখানে এড়ানো যাবে।

“ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, রোববারের এই অগ্রগতি এবং জুলাইয়ে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ত্রিপুরায় ভারতীয় পণ্যের প্রথম পরীক্ষামূলক ট্রান্সশিপমেন্টের সফলতার গুরুত্বের জায়গাটা হল, এর মধ্য দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার অন্য কোনো দেশের মধ্যে নেই।”

শিশির গুপ্ত লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কের অগ্রগতি হচ্ছে। এরপর ২০১৪ সালে নির্বাচিত হয়ে নরেন্দ্র মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এই সম্পর্ক নতুন গতি পায়।

২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ঢাকা সফরে দুই নেতা ছিটমহল বিনিময় চুক্তি সইয়ের মধ্য দিয়ে ইতিহাস গড়েন। এর মধ্য দিয়ে ৪১ বছরের সীমানা বিরোধের মীমাংসা হয়, যা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে একটি কাঁটা হয়ে ছিল।

হিন্দুস্তান টাইমস লিখেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েও ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে শান্তি বজায় রাখতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সহায়তা করেন।

গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়া দিল্লি সফরে দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ‘সোনালী অধ্যায়’ রচনার কথা বলেন।

গত সোমবার এক অনুষ্ঠানে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কণ্ঠেও সেই মনোভাব প্রতিফলিত হয়। ওই অনুষ্ঠানে ভারত বাংলাদেশকে ১০টি ব্রডগেজ রেলওয়ে লোকোমোটিভ (রেল ইঞ্জিন) উপহার দেয়।

দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সহযোগিতা ও যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং নতুন একটি সরবরাহ লাইন তৈরির প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে এসব রেল ইঞ্জিন বাংলাদেশকে দিয়েছে ভারত।

শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ক্ষমতায় আছেন গত এক দশক ধরে। টানা তৃতীয় মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী তিনি। তার নেতৃত্বে গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবেচেয়ে বেশি ৮.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। বাংলাদেশ অতি দারিদ্র্যের হারও ৯ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে পেরেছে। তৈরি পোশাক উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ।

হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাণিজ্য ও উন্নয়নে যে অগ্রগতি বাংলাদেশের হয়েছে, তাতে মাথাপিছু আয় পাকিস্তানকেও ছাড়িয়ে গেছে। আর বাংলাদেশে মাথাপিছু ঋণও পাকিস্তানের অর্ধেক।

একজন ভারতীয় কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, “শেখ হাসিনা এই অঞ্চল ও বিশ্বকে দেখিয়েছেন, সীমিত সম্পদ নিয়েও শুধু লক্ষ্য ঠিক রেখে একটি দেশের মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন কীভাবে নিশ্চিত করা যায়।”

১৯৭৪ সালে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আখ্যায়িত করেছিলেন, সেই বাস্তবতা কীভাবে বাংলাদেশ পেছনে ফেলে এসেছে, সে কথাই ওই ভারতীয় কর্মকর্তা বলেন।

হিন্দুস্তান টাইমস লিখেছে, ভারতীয় হাই কমিশনার কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করার ‘সুযোগ পাননি’ বলে যে খবর সম্প্রতি একটি সংবাদমাধ্যমে এসেছে, ওই ভারতীয় কর্মকর্তা তা উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের বিবৃতি যথেষ্টই ‘স্পষ্ট’।

ওই খবরের সত্যতা নাকচ করে মোমেন গত বৃহস্পতিবার বলেন, ভারতীয় হাই কমিশনার ২২ জুলাই তার অ্যাপয়েন্টমেন্ট চেয়েছিলেন এবং সেজন্য তিনি ‘পর্যাপ্ত সময় দিয়েছেন’। হাই কমিশনার হয়ত সেপ্টেম্বরের শেষে বা অক্টোবরের শুরুর দিকে ঢাকা ছাড়বেন এবং তার আগে তিনি সাক্ষাৎ করতে চেয়েছেন।

বাংলাদেশ সরকার সিলেট এম এ জি ওসমানী বিমানবন্দরের কাজের জন্য ভারতের বদলে চীনা কোম্পানিগুলোকে বিবেচনা করছে বলে যে প্রতিবেদন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এসেছে, সে বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেছেন, ওই কাজের দরপত্র প্রক্রিয়ায় চীনা কোম্পানিই সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েছে।

“কিছু সংবাদপত্র বলেছে, আমরা চীনকে বেশি সুবিধা দিচ্ছি, যা পুরোপুরি অবাস্তব,” মন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে ঢাকা ট্রিবিউনের একটি প্রতিবেদনের এই বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে আলোচিত