জঙ্গি কার্যক্রম চালানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার ভারতীয় নাগরিক আয়েশা জান্নাত মোহনা ওরফে জান্নাতুল তাসনিম ওরফে প্রজ্ঞা দেবনাথ (২৫)কে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
এই ভারতীয় নাগরিক কেরানীগঞ্জে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতার আড়ালে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারীদের অনলাইনে জঙ্গি কার্যক্রমে দাওয়াত দিতেন। ছিলেন জেএমবির নারী ইউনিটের নেতৃত্বে।
সিটিটিসি’র সহকারী কমিশনার শেখ ইমরান হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, আয়েশা ভারতীয় নাগরিক। হিন্দু ধর্মাবম্বী এই নারী অনলাইনে জেএমবির কর্মকাণ্ডে আকৃষ্ট হয়ে ধর্মান্তরিত হন। তার কাছ থেকে ভারতীয় পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে। চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি মতিঝিল এলাকা থেকে জেএমবির নারী শাখার প্রধান আসমাকে সিটিটিসি গ্রেফতার করে। আসমার সঙ্গে আয়েশার প্রথম পরিচয় হয়। আসমা গ্রেফতার হলে নব্য জেএমবি’র নারী শাখার দায়িত্ব নেন আয়েশা। আয়েশা আত্মগোপনে থেকে অনলাইনে নারী ও পুরুষ সদস্যদের রিক্রুটের কাজ করছিলেন। তার কাছে দেশ-বিদেশ থেকে নব্য জেএমবির ফান্ডে টাকা আসত। ওইসব টাকা তিনি নারী সদস্যদের মোটিভেশন এবং রিক্রুটমেন্টের পেছনে ব্যয় করতেন।সিটিটিসির উপকমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, আয়েশা ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশে যাতায়াত করতেন ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি কেরানীগঞ্জ থেকে একটি জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করেন। ওই জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে তিনি একটি ভুয়া এনআইডি কার্ড তৈরি করেন।ওমান প্রবাসী এক বাংলাদেশি নাগরিককে অনলাইনে বিয়ে করে বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নেয়ার জন্য ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করেন। তিনি এটি দিয়ে নাগরিকত্ব নেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছিলেন। তার সঙ্গে অনলাইনে আরও অনেক নারীর যোগাযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে শুক্রবার (১৭ জুলাই) আদালতে পাঠানো হয়। আদালত ভারতীয় এই নারী নাগরিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যে জেএমবির নারী শাখার অন্যদেরকে গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে।
জেএমবির ইতিহাসঃ
জিহাদের মাধ্যমে ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে আত্মপ্রকাশ করে জেএমবি। পরে জঙ্গি কার্যক্রমের জন্য বাংলাদেশ সরকারও নিষিদ্ধ করে জেএমবিকে।
অপর দিকে গত বছর ২৪ মে ভারত সরকার জঙ্গি সংগঠন জেএমবিকে ভারতে নিষিদ্ধ করে। ১৯৬৭ সালের আনলফুল অ্যাক্টিভিটিজ প্রিভেনশন অ্যাক্ট (ইউএপিএ) অনুযায়ী সহিংসতা ও নাশকতা ছাড়ানোর অভিযোগে নিষিদ্ধ করা হয় জেএমবি-কে।নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, জেএমবির দুই শাখা ‘জামাতুল মুজাহিদিন ভারত’ এবং ‘জামাতুল মুজাহিদিন হিন্দুস্থান’ দেশের তরুণ প্রজন্মকে সন্ত্রাসবাদ এবং নাশকতামূলক কাজে প্ররোচিত করছে এবং চরমপন্থার প্রসার ঘটাচ্ছে। ২০১৪ সালের খাগড়াগড় বিস্ফোরণ ও ২০১৮ সালে বুদ্ধগয়ার বিস্ফোরণে জেএমবির যুক্ত থাকার স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। ফলে জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ ও তার দুই শাখা সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান-সহ কয়েকটি বিস্ফোরণে জেএমবির জঙ্গিদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়।
অন্তত পাঁচটি সন্ত্রাসমূলক ঘটনায় জেএমবির জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে অসম পুলিশ এবং এখন পর্যন্ত নানা ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ভারতের পুলিশ জেএমবির ৫৬ জন জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে। মূলত বাংলাদেশ থেকেই তাদের কার্যক্রম চালায়।