কুড়িগ্রামে গভীর রাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানকে দেয়া সাজা, ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছে হাইকোর্ট। জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি সরদার মোহাম্মদ রাশেদ জাহাঙ্গীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ সোমবার এই আদেশ দেয়। একই সঙ্গে কুড়িগ্রামের সদ্য সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীন,আরডিসি নাজিম উদ্দিন, সহকারি কমিশনার রিন্টু চাকমা ও রাহাতুল ইসলামসহ অজ্ঞাত পরিচয় ৪০-৫০ জনের বিরুদ্ধে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের করা অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণ করার জন্য কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আরিফুল ইসলামের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন। তার সঙ্গে ছিলেন ইশরাত হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য।
আইনজীবী ইশরাত হাসান সাংবাদিকদের জানান,আদালত একই সঙ্গে টাক্সফোর্সের নামে আরিফুল ইসলামকে সাজা দেয়া ও আটক করা কেনো বেআইনী ও অবৈধ ঘোষণা করা হবেনা তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে।
কুড়িগ্রামের ডিসির দায়িত্বপালনকালে সুলতানা পারভীন সরকারি খরচে একটা পুকুর খনন ও সংস্কার করে নিজের নামে সুলতানা সরোবর নামকরণ করেন। এ নিয়ে বাংলা ট্রিবিউন পত্রিকার কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম ১০ মাস আগে একটি সংবাদ প্রকাশ করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে নিয়োগ ও বিভিন্ন অনিয়ম নিয়েও সংবাদ প্রকাশ করেন আরিফুল ইসলাম। এতে ক্ষিপ্ত হন জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
গত ১৩ মার্চ গভীর রাতে আরডিসি নাজিম উদ্দিন, সহকারি কমশিনার রিন্টু চাকমা ও রাহাতুল ইসলামের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের পাইক পেয়াদা নিয়ে গভীর রাতে হানা দেন সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের বাড়িতে। তারা বাড়ির দড়জা ভেঙ্গে স্ত্রী সন্তানের সামনে আরিফুলকে নিয়ে আসেন এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে,মাদক রাখার অভিযোগে আরিফুলকে এক বছরের কারাদÐ ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে জেলে পাঠান। এ ঘটনায় সাংবাদিকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। পরদনিই জামিন দেয়া হয় আরিফুলকে।
গভীর রাতে সাংবাদিককে বাড়ি থেকে ধরে এনে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে সাজা দেয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জে করে জনস্বার্থে রিট করেন বাংলা ট্রিবিউন পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক হারুন অর রশীদ।এই রিটের শুনানি শেষে সোমবার রুল ও স্থগিতাদেশ দেয়া হয়।
এ ঘটনায় সরকার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ডিসি সুলতানা পারভীন এবং সহকারি কমিশনার নাজিম উদ্দিন, রিন্টু চাকমা ও রাহাতুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়।