ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় বিদেশে পলাতক ইউটিউবার ইলিয়াস হোসেন ও সাবেক এসপি বাবুল আক্তারসহ চারজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১১মে) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশেক ইমাম এ চার্জশিট গ্রহণ করেন। আদালতের ধানমন্ডি থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মাহফুজুল ইসলাম বিষয়টি জানিয়েছেন।
চট্টগ্রামের মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যা মামলায় ‘অসত্য তথ্য’ সরবরাহ করা এবং তা প্রচারের অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বাবুল আক্তার ও ইলিয়াস হোসাইনসহ চার জনের বিরুদ্ধে করা মামলাটির বিচার চলবে সাইবার ট্রাইব্যুনালে।
মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়ায় বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর হাকিম মো. আশেক ইমাম মামলাটি মুখ্য মহানগর হাকিম রেজাউল করিমের কাছে পাঠান। তিনি সেটি সাইবার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর অনুমতি দেন।
আদালতে ধানমণ্ডি থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক মাহফুজুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সম্প্রতি ধানমণ্ডি মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) রবিউল ইসলাম আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন। এ মামলায় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত ইউটিউবার ইলিয়াস হোসেনকে পলাতক দেখিয়ে তার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রের অন্য দুই আসামি হলেন বাবুল আক্তারের ভাই হাবিবুর রহমান লাবু ও বাবা আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া।
গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ধানমণ্ডি থানায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদার মামলাটি করেন। এতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে অভিযোগ আনা হয়।
এজাহারে পিবিআই প্রধান লেখেন, তদন্তে মিতু হত্যায় তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলে। এরপর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
“জেল হাজতে থাকা বাবুল আক্তার ও বিদেশে অবস্থানরত ইউটিউবার ইলিয়াসসহ বাকি আসামিরা বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত ও পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেন ।
“এরই ধারাবাহিকতায় বাবুল আক্তার ও অন্যান্য আসামিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্ররোচনায় ‘কথিত সাংবাদিক’ ইলিয়াস হোসাইন ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তার ফেসবুক আইডির মাধ্যমে ‘স্ত্রী খুন স্বামী জেলে, খুনি পেয়েছে তদন্তের দায়িত্ব’ শিরোনামে একটি ভিডিও ক্লিপ আপলোড করেন।
“ভিডিওতে বিভিন্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্যের মাধ্যমে মিতু হত্যা মামলার তদন্তকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হয়। “
ইলিয়াসের সেই ভিডিওতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উসকানি দেয়া হয় বলেও অভিযোগ করা হয় বনজের মামলায়। বলা হয়, সেই ভিডিওতে পুলিশ এবং পুলিশের বিশেষায়িত তদন্ত সংস্থা পিবিআই ও বিশেষ করে তার ‘মান-সম্মান ও সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হয়। পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করার অপপ্রয়াস চালানো হয়।
“রাষ্ট্রের হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট ও অস্থিরতা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিরও অপপ্রয়াস করা হয়েছ “, এমন অভিযোগও করেন বনজ।
এজাহারে ওই ভিডিও ডকুমেন্টারি বিভিন্ন তথ্য ও বক্তব্যকে ‘মিথ্যা’ উল্লেখ করে নানা প্রমাণ এবং তথ্যও উপস্থাপন করেন বনজ কুমার।
এর আগে ৯ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ধানমন্ডি মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল ইসলাম আসামিদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে চার্জশিট দাখিল করেন। তবে তিনি বিশেষ ক্ষমতা আইনে অব্যাহতির আবেদন করেন। চার্জশিটভুক্ত অন্য দুই আসামি হলেন বাবুল আক্তারের ভাই মো. হাবিবুর রহমান লাবু ও বাবা মো. আবদুল ওয়াদুদ মিয়া।
২০২২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় পিবিআইপ্রধান বনজ কুমার মজুমদার বাদী হয়ে মামলাটি করেন। ওই বছরের ১০ নভেম্বর বাবুল আক্তারকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এ মামলায় বাবুল আক্তারের ভাই লাবু ও বাবা ওয়াদুদ জামিনে রয়েছেন। তবে ইউটিউবার ইলিয়াস পলাতক।