সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা প্রশ্নে হাইকোর্টের যুগান্তকারী রায়টি প্রকাশ হয়েছে। এতে আদালত বলেছেন সংবাদের উৎস জানাতে কোনো সাংবাদিককে চাপ দেয়া যাবে না । রোববার রাষ্ট্র বনাম দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ এ রায় প্রকাশিত হয়েছে।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের স্বাক্ষরের পর এ মামলার ৫১ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, ‘সার্বিক দিক বিবেচনায় আমাদের মতামত হলো সংবাদমাধ্যম এবং সাংবাদিকরা সাংবিধানিকভাবে এবং আইনত দুর্নীতি এবং দুর্নীতিকারীদের বিরুদ্ধে জনস্বার্থে সংবাদ পরিবেশন করতে পারবেন।’
কোনো সাংবাদিক তার সংবাদের তথ্যের উৎস কারও কাছে প্রকাশে বাধ্য নয় বলে জানান আদালত।
আদালত বলেন, বর্তমান সময়ে প্রতিটি সেক্টরে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে। গণমাধ্যম দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি বিশেষের দুর্নীতি-অর্থ পাচার ফলাও করে তুলে ধরতে গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তবে হলুদ সাংবাদিকতা কখনো সমর্থন করা যায় না।
আদালত আশা প্রকাশ করে বলেন, সমাজের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে গণমাধ্যমকে মনোযোগী হতে হবে। দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও জনস্বার্থ আছে— এ ধরনের সব সংবাদ সাংবিধানিকভাবে ও আইনগতভাবে সাংবাদিকরা তুলে ধরতে পারেন। সাংবাদিকদের সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে যে সুরক্ষা দেয়া হয়েছে তাতে সাংবাদিকরা তাদের নিউজের তথ্যের সোর্স প্রকাশ করতে বাধ্য নন।
রায়ে সর্বোচ্চ আদালত বলেন, ‘সংবাদের সোর্স জানাতে সাংবাদিকদের বাধ্য করা যাবে না। কোনো সংবাদে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তিনি প্রেস কাউন্সিলে প্রতিকার চাইতে পারবেন।’
’২০ কোটিতে প্রকৌশলী আশরাফুলের দায়মুক্তি! দুর্নীতি দমনে দুদক স্টাইল’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয়ে দুদকের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদনের শুনানিতে হাইকোর্ট একথা বলেন।
একপর্যায়ে আদালত এ সংক্রান্ত স্বতঃপ্রণোদিত রুল নিস্পত্তি করে গণপূর্তের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলম ও তার স্ত্রীর জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন বিষয় অনুসন্ধানে আগের কর্মকর্তাকে বাদ দিয়ে নতুন তদন্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে পুনরায় অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন। রায়ে আশরাফুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে পুনরায় অনুসন্ধানে দুদককে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। রায় প্রাপ্তির ৬ মাসের মধ্যে এই অনুসন্ধান শেষ করতে বলা হয়েছে।